কঠিন পরীক্ষার সামনে অবিচল
দ্বীধাহীন সত্য প্রচার এবং শরীয়াহ'কে সামগ্রিকভাবে বাস্তবায়ন করার জন্যে
জীবনে অনেক মূল্য দিতে হয়, আর এই মূল্য হচ্ছে ত্যাগ । প্রত্যেক দায়ী'কেই
পরীক্ষার সম্মুখীন হয়ে প্রমাণ করতে হয় তার দাওয়াতের সত্যতা । মহান
আল্লাহ বলেন,
" আলিফ, লাম, মীম । মানুষ কি ধারণা করে যে, তারা পরীক্ষা
ছাড়াই ঈমান আনলাম বললেই পার পেয়ে যাবে ? নিশ্চই আমি পূর্ববর্তীদেরকেও
পরীক্ষা করেছি; আল্লাহ অবশ্যই প্রকাশ করে দেবেন যারা সত্যবাদী তাদেরকে এবং
যারা মিথ্যাবাদী তাদেরকে । পাপীরা কি মনে করে যে, তারা আমাকে ত্যাগ করে চলে
যাবে ? তাদের এধরনের সিদ্ধান্ত কতই না খারাপ । যারা আল্লাহ'র সাথে
সাক্ষাতকামী তারা জেনে রাখুক, আল্লাহ'র সেই নির্দিষ্টকাল অবশ্যই আসবে; তিনি
সবকিছু শোনেন, সবকিছু জানেন । আর যে ব্যাক্তি পরিশ্রম করে সে তো নিজের
জন্যেই পরিশ্রম করে, আল্লাহ বিশ্ববাসি হতে অমুখাপেক্ষী ।” [সুরা আল-আনকাবুত(২৯):১-৬]
প্রত্যেক দায়ী'কেই কারাবন্দী হওয়ার মতো পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয় ।
আমার মনে পড়ে, একবার শেইখকে জিজ্ঞেস করেছিলাম - কেন বিভিন্ন ইসলামিক
প্রজেক্টের মালিকদের থেকে মুসলিম দায়ী'দের কারাবন্দী হওয়ার সম্ভাবনা অনেক
বেশি ? তিনি উত্তরে বললেন, কারণটা হচ্ছে দায়ী'রা জনসাধারণের সামনে
প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে এমন সব বিষয় তুলে ধরেন যা স্বেচ্ছাচারী শাসকরা
পছন্দ করে না বা গ্রহণ করতে রাজি নয় । কারাগার হচ্ছে আল্লাহ'র ডিক্রী,
সতর্কতা এবং নিরাপত্তা প্রস্তুতি আল্লাহ'র ডিক্রী থেকে কাউকে বাঁচাতে পারে
না আর বন্দী হয়ে গেলে সেই মুসলিমকে আল্লাহ'রই শরণাপন্ন হতে হবে ।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তার চাচাত ভাই আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস (রাঃ) কে বলেন,
"হে যুবক, আমি তোমাকে কিছু কথা (উপদেশমূলক) শিখিয়ে দিচ্ছি । আল্লাহ'কে
স্মরণ করো, আল্লাহ তোমাকে নিরাপদ রাখবেন । আল্লাহ'কে স্মরণ করো, আল্লাহ'কে
সাথে পাবে ।যদি চাও, আল্লাহ'র কাছেই চাও । যদি সাহায্য চাও, আল্লাহ'র
সাহায্য চাও । জেনে রাখো যদি পুরো জাতি এক হয়ে তোমার কোন উপকার করতে চায়
তবে তারা ঠিক ততটুকুই পারবে যতটুকু আল্লাহ আগে থেকেই তোমার জন্যে লিখে
রেখেছেন; তারা যদি এক হয়ে তোমার কোন ক্ষতি করতে চায় তবে তারা ততটুকুই
পারবে যতটুকু আল্লাহ আগে থেকেই তোমার জন্যে লিখে রেখেছেন । কলম তুলে নেয়া
হয়েছে আর পৃষ্ঠাগুলো শুকিয়ে গেছে ।”
-
(তিরমিযী,
সনদ হাসান)
পূর্ববর্তী নেককার বান্দা এবং নবীদের মতো শেইখের ওপরেও
কারাবন্দী হওয়ার হুকুম এলো আল্লাহ'র পক্ষ থেকে । আর আল্লাহ'র সিদ্ধান্ত
এমনই ছিল যে, দাওয়াতের ক্ষেত্রে যেমন আমি শেইখের পাশে ছিলাম তেমনি
কারাগারেও আমরা একসাথে থাকব । শেইখ বন্দী হওয়ার কয়েক মাস পর ইন্টেলিজেন্স
অফিসাররা আমাকে গ্রেফতার করে কারাগারের অন্ধকারে নিক্ষেপ করে । সানা'য়
ইন্টেলিজেন্সের কারাগারে আমি আবার শেইখের সংস্পর্শে আসি কিন্তু শেইখের
বন্দীকাল কাটল নির্জন কক্ষে ।তারা শেইখকে আমাদের সাথে দেখা করতে দিত না,
কিন্তু একটা বিশেষ কৌশলে কারারক্ষীদের অজান্তেই আমি মাঝে মাঝে শেইখের সাথে
সাক্ষাত করতাম । জেলের ভেতরে তাকে দেখে আমার মনে হল তিনি মুক্ত সময়ের
থেকেও বেশি দৃঢ়চিত্ত এখানে । তার মাঝে কোনরকম বিরক্তি বা হতাশা দেখিনি আমি
। সেই একই মিষ্টি-হাস্যোজ্জ্বল মানুষ যাকে আমি আগে থেকেই চিনতাম, সেই
শান্তচিত্তের ব্যক্তিত্ব - আল্লাহ এবং আল্লাহ'র ফয়সালার ওপর যার দৃঢ়
বিশ্বাস, জেলের ভেতরে আমি তাকে এমনটাই দেখেছি । তার চেহারায় সর্বদা এমন এক
সাহসের ছাপ থাকত যাকে ভাষায় প্রকাশ করলে বলা যায় যে, তিনি কোন অবস্থাতেই
নতি স্বীকার করবেন না বা হাল ছেড়ে দেবেন না যদিও তার বন্দীদশা দীর্ঘতর
হয় । দৃঢ় সংকল্প ছিল তার চালিকা শক্তি । তিনি নিজের অবস্থান থেকে কোনরকম
শৈথিল্য দেখাতে অস্বীকার করে গেছেন যখন অন্যরা মজলুম হওয়ার ওজর দেখিয়ে
নিজ-নিজ অবস্থান থেকে সরে এসেছে । সেই নির্জন কক্ষে তিনি সময়কে ভাগ করে
নিয়েছিলেন ইবাদাত এবং পড়াশোনার মধ্যে যা তাকে তাফসীর, ফিকহ, ফতোয়া এবং
ইতিহাস ইত্যাদি বিষয়ের গভীরে ঢোকার সুযোগ করে দেয় ।
কোন অভিযোগ পাওয়া গেল না
আমেরিকান সরকার শেইখ আনোয়ারের বিষয়ে তদন্ত করার জন্যে একটি তদন্ত কমিটি
পাঠায় । কিন্তু, তিনি শর্ত দিলেন যে তদন্ত প্রক্রিয়া হতে হবে আরবী ভাষায়
এবং তদন্তের আগে তার মেডিকেল চেক-আপ করতে হবে । এর উত্তরে ইয়েমেনী
গোয়েন্দা সংস্থা জানালো, তিনি যেন তদন্তের প্রথম পর্ব শেষ করেন, এর পর
কারা কর্তৃপক্ষ তার মেডিকেল চেক-আপ এর ব্যবস্থা করবে । শেইখ আনোয়ার এই
প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন এবং ফের ডাক্তারের সাথে দেখা করার দাবি
জানালেন; ফলে আমেরিকানরা শেইখের মেডিকেল চেক-আপ না হওয়া পর্যন্ত তদন্ত
প্রক্রিয়া পেছাতে বাধ্য হল । পরে তিনি আমাকে বলেছিলেন যে, এর কারণ ছিল তার
দাঁত-ব্যথা এবং আলহামদুলিল্লাহ, তদন্ত এভাবে পেছানোর ফলাফল ছিল শুভ । যখন
তদন্ত শুরু হল, তাকে এক অফিসারের কাছে ডাকা হল। আমেরিকানদের সামনে গিয়ে
তিনি অভিযুক্তের চেয়ারে না বসে বরং ঐ অফিসারের ঊর্ধ্বতনের ন্যায়ই সেখানে
হাজির হলেন । সবচেয়ে উপযুক্ত চেয়ারটাই বেছে নিলেন বসার জন্যে,
মার্কিনীদের আপ্যায়নের জন্যে ইয়েমেনীরা যেসব ফলের ব্যবস্থা করেছিল সেখান
থেকেই খেলেন এবং নিজের জন্যে এক কাপ চা ও ঢেলে নিলেন । আমি তার কাছে সেই
তদন্তের ধরন সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলাম । তিনি বললেন, পুরো ব্যাপারটাই ছিল -
কোন না কোন ভাবে এমন কিছু অসংগতি খুঁজে বের করা যাতে আমেরিকার কোর্টে তার
বিচার করা যায়, মূল ব্যাপারটা জিজ্ঞাসাবাদই ছিল । কিন্তু কোনভাবেই তারা যা
খুঁজছিল সেরকম কিছুই পেল না। ফলে নিরাশ হয়েই ফিরে গেল ।
একটি রহমত এবং একটি প্রাপ্তি
একমাত্র আল্লাহ (সুবাহানাহু ওয়া তা'য়ালা) এর অশেষ দয়া ও করুণায় শেইখ
আনোয়ার সহজেই জেল থেকে মুক্তি পেলেন । আমি আল্লাহ'র অশেষ কৃপায় শেইখের
আগেই মুক্তি পাই । শেইখের মুক্তির পরের দিনই আমি তার সাথে দেখা করি । আমরা
দাওয়াতের কাজকে কিভাবে এই নতুন পরিস্থিতিতে এগিয়ে নেয়া যায়, কাজের
ক্ষেত্র কি হবে ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করলাম । জেলে যাওয়ার আগে যে
মানুষটাকে আমি চিনতাম তিনি তখনো ঠিক সেই মানুষটাই আছেন । তার নীতি এবং
আকীদা'র কিছুই পরিবর্তন হয়নি । সত্যি হচ্ছে, তিনি তখন আরো বেশি ত্যাগী,
আরো বেশি সাহসী, আরো বেশি দৃঢ় এবং বলিয়ান । তালেবুল ইলম ও দায়ী'দের
জন্যে শেইখ আনোয়ারের বক্তৃতা-বক্তব্য চলতে থাকল । নেতৃত্বাস্থানীয়
ব্যক্তিবর্গ এবং ওলামা-মাশায়েখদের সাথে তার অনেকগুলো বৈঠক হল । এরই মধ্যে
একদিন তিনি আমার কাছে কিছু কাগজ নিয়ে এলেন - সেখানে 'গণতন্ত্রী মুসলিম'দের
তৈরি করা সতেরটি প্রশ্ন এবং এ বিষয়ে ভুল-ধারণা লেখা ছিল যা দিয়ে তারা
মুসলিমদেরকে আল্লাহ'র পথ থেকে বিভ্রান্ত করছে । তিনি আমাকে ঐ প্রশ্নগুলোর
উত্তর লিখে দিতে বললেন । এইসব সন্দেহ ও ভুল ধারণার প্রত্যুত্তরে আমি
আল্লাহ'র ওপরে ভরসা করে "Disavowal from Yemen’s tyrant and his democratic
system" নামে একটি বই লিখে ফেললাম । পরে আমি শেইখ আনোয়ারকে এই বইয়ের
একটা কপি দিয়েছিলাম, তিনি সেটাকে অনুমোদন দেন ।
নিশ্চই কষ্টের পরে আছে স্বস্তি
আমরা ছিলাম কঠোর নজরদারির মধ্যে এবং বিড়ম্বনা আগের থেকে বেড়েই চলল ।
সানা' আমাদের থাকা ও দাওয়াতের কাজের জন্য উপযোগী থাকল না । শেইখ আনোয়ার
সিদ্ধান্ত নিলেন এমন কোন জায়গায় চলে যাবেন যেটা রাজধানী সানা'র তুলনায়
কম ঝুঁকিপূর্ণ । তিনি আমাকে বললেন যে, তিনি চলে যাচ্ছেন এবং পরবর্তীতে
পরিস্থিতির উন্নতি হলে ফিরে আসবেন । এরই মধ্যে মুজাহিদীন নেতাদের সাথে শেইখ
আনোয়ারের সম্পর্কের উন্নতি হল । আমি একা হয়ে গেলাম । এর কয়েক মাস পরে
কাউন্টার-টেরোরিজম স্কোয়াড আমাকে গ্রেফতার করে একটা ওয়ান্টেড লিস্টে নাম
গুঁজে দেয় যার শীর্ষে ছিলেন শেইখ আনোয়ার । নির্দিষ্ট কোন আভিযোগ ছিলনা
আমাদের বিরূদ্ধে, আমাকে শেইখ আনোয়ারের বিষয়েই জিজ্ঞাসাবাদ করা হল ।
আল্লাহ'র অশেষ রহমতে আমি মুক্তি পেলাম কিন্তু আমার সব ধরনের দাওয়াতী
কাজকর্মের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হল । সবকিছুর ব্যবস্থা করে শেইখ
আনোয়ারের সাথে দেখা করতে আমার কয়েক সপ্তাহ সময় লেগে গেল । তার সাথে কথা
বলার পর সানা' থেকে বের হয়ে আসার ইচ্ছেটা শক্ত হয়ে উঠল, আমি দাওয়াত ও
ইসলামের খেদমতের জন্যে নিরাপদ একটা আশ্রয় খুঁজছিলাম । শেইখকে সেটা বললাম ।
কয়েক মাস পর যখন আমি সানা' থেকে বের হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি তখনই আবার
গ্রেফতার হলাম, এবার আমাকে রাজনৈতিক জেলে রাখা হল। একই সময়ে শেইখ
আনোয়ারকে গ্রেফতারের জন্যে কঠোর অভিযান শুরু হল, নিউজ চ্যানেল গুলো তাকে
নিয়ে কথা বলছে এবং তার নাম আমেরিকার 'গ্রেফতার নয়তো হত্যা'র লিস্টে উঠে
গেছে । জেলের কঠিন দিনগুলোর শেষে স্বস্তি এল আল্লাহ'র পক্ষ থেকে, অবশেষে
মুক্তি পেয়ে শেইখ আনোয়ারের সাথে যোগ দিলাম ।
শেইখ আনোয়ার ফি-সাবীলিল্লাহ
ছদ্মবেশে বিপজ্জনক সফরের পর শেষ পর্যন্ত শেখ আনোয়ারের সাথে দেখা হল ।
আমরা স্থায়ী হলাম এমন একটা জায়গায় যাকে শুধু রহমতের ভূমি হিসেবেই
ব্যাখ্যা করা সম্ভব । এখানকার লোকেরা এতটাই উদার যে আমার কাছে মাঝে মাঝে
মনে হত এরা আমাদের নিজেদের পরিবার-পরিজনদের থেকেও আমাদের প্রতি উত্তম ।
প্রচন্ড এক ভাল লাগা আমাকে ছেয়ে ফেলল । আল্লাহ আমাদের খাবার-পানীয় ও
থাকার জায়গার ব্যবস্থা করে দিলেন তাঁর অসীম দয়ার ভান্ডার থেকে -সকল
প্রশংসা আল্লাহ'র ।আমি খেয়াল করিনি যে শেইখ আনোয়ার কিছুটা বদলেছেন ।আসলে,
ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশে ঠান্ডা মাথায় ভারসাম্যপূর্ণ মানসিকতার সাথে তার খাপ
খাইয়ে নেয়ার অসাধারণ ক্ষমতা দেখে আমি সত্যিই অবাক হয়েছিলাম ।আমি তাকে এক
মুহুর্তের জন্যেও এমনকি ভীষণ কঠিন সময়েও সাহস হারাতে দেখিনি এবং সেরকমই
একটি ঘটনা নিচে উল্লেখ করছি ।
ব্যর্থ হল হত্যা-চেষ্টা
একদিন
রাতে বিছানায় শোয়া অবস্থাতেই বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পেলাম, অনেক দূর
থেকেও টের পেলাম মাটি কাঁপছে । আমি তখনো জানিনা যে মার্কিনীরা ড্রোন হামলা
করেছে । যখন ভোর হয়ে এল, দিনের আলোই যেন শেইখ আনোয়ারকে সাথে করে নিয়ে
এলো । তার হাসি দেখেই আমরা বুঝতে পারলাম যে তিনিই ঐ হামলার লক্ষ্য ছিলেন ।
তিনি সেই ব্যর্থ হামলার বিস্তারিত বললেন আমাদেরকে । বললেন, "আমরা যখন
রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি হঠাৎ গাড়ির কাছাকাছি অনেকগুলো বিস্ফোরণে গাড়ির
জানালার কাচ ভেংগে পড়ল । একটা আলোর ঝলকা দেখে বুঝলাম আমাদেরকে অ্যামবুশ
করেছে ।মনে হয় আমাদের ওপর একটা রকেট ছোঁড়া হল, আমি ড্রাইভার ভাইকে বললাম
স্পিড বাড়িয়ে বিপদজনক এলাকা দ্রুত পার হয়ে যেতে আর তদারক করে দেখলাম
আমাদের কেউ কোন আঘাত পায়নি । আল্লাহ'কে ধন্যবাদ দিলাম সবার নিরাপত্তার
জন্যে কিন্তু আমি ভাবছিলাম গাড়ির কাচ ভেংগে ফেলা শক-ওয়েভ আর চারপাশে
ধোঁয়াটে মেঘ তৈরি করার মত শক্তিশালী বিস্ফোরণের মধ্যে আমরা কিভাবে পড়ে
গেলাম, গ্যাসোলিনের ব্যারেল ছিল আমাদের সাথে অথচ কোন ক্ষতিই হল না । এই
সমস্ত ঘটনা আমার এই বিশ্বাসকে আরো শক্ত করে দিয়েছে যে, নির্ধারিত রিযিক
এবং সময় শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোন মানুষই মরবে না ।"
শেইখ আমাকে বললেন,
"আমরা বিস্ফোরণের কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখলাম আকাশে আমেরিকান ড্রোন উড়ছে ।
মুসলমানদের যেন কোন ক্ষয়-ক্ষতি না হয় এজন্যে আমি ড্রাইভার ভাইকে বললাম
বাড়ি-ঘরের পাশ দিয়ে গাড়ি না চালাতে । তারপর ড্রাইভার ভাই অল্প কিছু গাছ
আছে এমন একটা উপত্যকায় নেমে গেল । আমরা দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে ভিন্ন ভিন্ন
দিকে সরে গেলাম । মাথার ওপর দিয়ে ড্রোনগুলো উড়ছিল, তারা আমাদের
গাড়িটাকে টার্গেট করল, গাড়িটা বিস্ফোরিত হল । আশেপাশের এলাকায় বিমান
হামলা চলতে লাগল, আমাকে এক ভাই পাহাড়ের মধ্যে অনেকগুলো খাঁড়ির একটি
দেখিয়ে দিল । ভোর হওয়া পর্যন্ত বাকি রাত ঘুমিয়ে কাটালাম সেখানে, ফজর
পড়লাম তারপর ভাইয়েরা নিয়ে এল এখানে ।" আমি শেইখকে জিজ্ঞেস করলাম, মাথার
ওপরে বম্বিং হচ্ছে এরকম সময় আপনি ঘুমালেন কিভাবে ?! উত্তরে বললেন, উনি
জানেন না কিভাবে কিন্তু তন্দ্রায় আচ্ছন্ন হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন । আমরা
জানতে চাইলাম, তাদের ওপর কতগুলো রকেট ছোঁড়া হয়েছে, উনি বললেন দশ বা
এগারটা । তিনি আরও বললেন ভাইদের মধ্যে কেউ আহত বা নিহত হয়েছেন কিনা এ
বিষয়ে নিশ্চিত নন । এর কয়েক ঘন্টা পর পর্যন্তও আমরা জানি না যে, দুই জন
ভাই শহীদ হয়েছেন আরো একজন আহত হয়েছেন । আমি শেইখকে গোপনে জিজ্ঞেস করলাম,
প্রথমবার এভাবে বোম্বিং-এর মধ্যে পড়ায় তার অনুভূতি কেমন ছিল? তিনি
বললেন, "আমার কাছে তো আমরা যেভাবে চিন্তা করি তার থেকে অনেক সহজ মনে হয়েছে
। এক ধরনের ভয় ঘিরে ধরে কিন্তু মহান আল্লাহ'র তরফ থেকে প্রশান্তি নেমে
আসে ।" তিনি আরো বললেন, "এইবার এগারটা মিসাইল লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছে অথচ পরের
বার কিন্তু প্রথমটাই আঘাত হানতে পারে ।"
শেইখ আনোয়ার আমাদের সাথে বেশ
কিছুদিন থেকে তারপর চলে গেলেন । আমি তার যাত্রার নিরাপত্তার জন্যে দোয়া
করলাম আর মনে মনে নিজেকে বললাম : আমি জানি না আমাদের মধ্যে কে বিদায়
নিচ্ছে ! পরবর্তী ড্রোন হামলার বিষয়ে শেইখ আনোয়ারের অনুভূতিই সত্যি
প্রমাণিত হল । দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় মিসাইল ঠিকই তার টার্গেটে আঘাত হানল ।
আমার শুধু মনে হয়, যদি তাদের সাথে থাকতাম আমিও হয়ত এক মহা সাফল্যের সাথী
হতাম ।
মূল লেখাঃ শাইখ হারিস আল নাযারী [ ইন্সপায়ার ম্যাগাজিন, পষ্ঠা ৯, ইস্যু ৯]
অনুবাদঃ শায়খ আযযাম বাংলা অনুবাদ টীম।
অনুবাদঃ শায়খ আযযাম বাংলা অনুবাদ টীম।