পৃষ্ঠাসমূহ

বিস্মৃতির গহ্বরে পূর্ব তুর্কিস্তান...

 পূর্ব তুর্কিস্তান সম্পর্কে ১০টি বাস্তব তথ্য আপনার জানা আছে কি?

(১) ঐতিহাসিকভাবে পূর্ব তুর্কিস্তান কখনোই চীনের অংশ ছিল না। বরং এই ভূমিকে 'হান' চীনারা (হান : চীনাদের একটি জাতিভেদ) উপনিবেশে পরিণত করেছিল, যেমনি ভাবে ব্রিটিশরা আমাদের উপমহাদেশকে উপনিবেশে পরিণত করেছিল। এই ভূমির অবস্থান চীনের মহা প্রাচীরের বাইরে। আমরা জানি, চীনের মহা প্রাচীর ছিল চীনের সীমানা নির্ধারক স্থাপনা যা বহিঃশত্রুদের আক্রমণ থেকে সুরক্ষিত থাকতে চীনারা নির্মাণ করেছিল। পূর্ব তুর্কিস্তান যেমনি চীনের প্রাচীরের বাইরে, ঠিক তেমনি Jade Gate (জেড ফটক) এর পশ্চিমে। সুতরাং ইতিহাস সাক্ষী, কস্মিনকালেও পূর্ব তুর্কিস্তান চীনের অংশ ছিল না। তাই, শুধুমাত্র পূর্ব তুর্কিস্তান নাম পরিবর্তন করে যিনজিয়াং/ সিংকিয়াং (অর্থ- নতুন রাজ্য) রাখলেই অতীত ইতিহাস বদলে যাবে না।


(২) বিগত দুই সহস্রাব্দের মধ্যে ১৮০০ বছরই পূর্ব তুর্কিস্তান চীনের কবল থেকে মুক্ত ছিল। আর ১০০০ বছর পুরনো ইসলামী ইতিহাসের কথা হিসাব করলে, দীর্ঘ ৭৬৩ বছর পূর্ব তুর্কিস্তানের মুসলিমরা স্বাধীন থাকলেও, বর্তমানে ও অতীতের বিভিন্ন সময় মিলিয়ে মোট ২৩৭ বছর তারা চীনের কাছে পরাধীন আছে।

(৩) ১৯৪৯ সালের হিসাব অনুযায়ী পূর্ব তুর্কিস্তানের ৯৩% জনসংখ্যা ছিল উইঘুর বা তুর্কি মুসলিম। কিন্তু এ সংখ্যা কমে ৯৩ % থেকে বর্তমানে ৫৫% এ নেমে এসেছে। কারণ, বিগত ৬০ বছর যাবত চীনা কমিউনিস্ট সরকার মুসলিমদেরকে পূর্ব তুর্কিস্তান থেকে চীনের অন্যত্র স্থানান্তরিত হতে বাধ্য করেছে। বর্তমানে এখানে হান চীনাদের সংখ্যা ৪৫%, যেখানে কমিউনিস্টদের ক্ষমতা দখলের আগে অর্থাৎ ১৯৪৯ সালে যা ছিল মাত্র ৭%।

(৪) ১৯৪৯ সালে যখন কমিউনিস্টরা চীনের ক্ষমতা দখলের পর থেকে বেশ কয়েকবার কমিউনিস্ট সরকার পূর্ব তুর্কিস্তানে চৈনিক জাতিশুদ্ধি অভিযান চালায়। যাতে প্রাণ হারায় প্রায় ৪৫ লক্ষ মুসলিম।

(৫) চীনা সরকার এ পর্যন্ত নিজেদের নাগালে যতগুলো কুরআনের কপি কিংবা দ্বীনী কিতাব পেয়েছে, প্রত্যেকটাকে বাজেয়াপ্ত করেছে। চীনা কুফফাররা এ পর্যন্ত মোট ত্রিশ হাজার সাতশ টি (৩০,৭০০) মুদ্রিত আধুনিক ও হাতে লেখা প্রাচীন ইসলাম কিতাব আগুনে ভস্ম করেছে, আটাশ হাজার (২৮,০০০) মসজিদ বন্ধ করে দিয়ে সেগুলোকে বারে (মদের আড্ডা) পরিণত করেছে, আঠারো হাজার (১৮,০০০) মাদ্রাসা গুদামঘরে পরিণত করেছে, এক লক্ষ বিশ হাজার (১,২০,০০০) আলেমে দ্বীনকে হত্যা করেছে এবং চুয়ান্ন হাজার (৫৪,০০০) জনকে জোর করে ধরে নিয়ে গিয়ে লেবার ক্যাম্পের শ্রমিক-মজুর বানিয়েছে।
 

(৬) চীনে কোন মুসলিমকে কুরআন শিক্ষা দেয়ার শাস্তি: ১০ বছরের কারাদণ্ড!
(৭) মুসলিম মহিলাদের হিজাব পরিধান আইনত সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ! কোন মুসলিমা বোন হিজাব পড়ে যদি ধরা পড়েন, তাকে ৫০০০ ডলার জরিমানা দিতে হয়। অথচ পূর্ব তুর্কিস্তানের একজন মুসলিমের সারা বছরের গড় আয়ই কিনা কেবলমাত্র ১০০০ ডলার!

(৮) চীন পূর্ব তুর্কিস্তানকে পারমাণবিক বোমা পরীক্ষা করার জায়গা বানিয়েছে। এ পর্যন্ত তারা সেখানে মোট ৩৫ টি পারমাণবিক বোমা পরীক্ষা করেছে, যার তেজস্ক্রিয়তার প্রভাবে দুই লক্ষ (২,০০,০০০) মুসলিম প্রাণ হারিয়েছে। অনবরত পারমাণবিক বোমা পরীক্ষার কারণে পূর্ব তুর্কিস্তানে তেজস্ক্রিয়তার এমন প্রভাব পড়েছে যে এক বছরেই (১৯৯৮ সাল) সেখানে বিশ হাজারের (২০,০০০) উপর বিকলাঙ্গ ও প্রতিবন্ধী শিশু জন্মগ্রহণ করেছে। আর বিগত বছরগুলোতে পূর্ব তুর্কিস্তানে ক্যান্সার, প্যারালাইসিস এবং বেশ কিছু জীবন নাশক অজানা রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা গিয়েছে।

(৯) বিশ এর কম বয়সী তরুণদের কুরআন শেখা, মসজিদে আসা, এমনকি জুমার নামায পড়াও নিষিদ্ধ!!! আর যাদের বয়স ২০ এর উপর তাদেরকে যদিও জুমা পড়ার সুযোগ দেয়া হয়, কিন্তু তাদেরকে নামায পড়ার জন্য মাত্র ২০ মিনিট সময় দেয়া হয়। ২০ মিনিটের চেয়ে ১ সেকেন্ড বেশী সময় মসজিদে থাকা আইনত নিষিদ্ধ এবং দণ্ডনীয়!!!
(১০) পূর্ব তুর্কিস্তানকে সদা 'শান্ত' রাখতে চীনা সরকার সেখানে সেনা ও পুলিশবাহিনীর ১০ লক্ষ সদস্যকে সর্বদা মোতায়েন করে রাখে।
.... .... .... .... .... .... .... .... .... .... .... .... .... .... .... .... .... .... .... .... ....
আস-সাহাব উপমহাদেশ কর্তৃক প্রকাশিত Resurgence ম্যাগাজিন অবলম্বনে।


সংগৃহীত via  Resurgence বাংলা