পৃষ্ঠাসমূহ

সততার অধিকারীদের জন্যে ত্যাগ তিতিক্ষা সহজ। [পর্ব ২]



শামে আমাদের ভাইদের প্রতিঃ (বিভাগ ৩)

মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে আপনাদের ধৈর্য ও প্রতিরোধ এবং বাশার গং এর বিরুদ্ধে আপনাদের প্রতিরোধশক্তি দ্বারা এ বিশ্ব স্তম্ভিত হয়ে গেছে।তিন বছর যাবত, আপনাদের উপর বোমাবর্ষণ হচ্ছে, আপনাদের ঘরবাড়ি ধ্বংস হচ্ছে এবং আপনাদের সন্তানদের হত্যা করা হচ্ছে; তবু ও আপনারা যুদ্ধে শত্রুদের প্রচণ্ডভাবে ধরাশায়ী করে যাচ্ছেন। আপনারা তাদেরকে আহল আস-সুন্নাহর বিরুদ্ধে সীমালঙ্ঘনের মূল্য তাদের শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন; আপনারা ইতিহাসের পাতায় এক উজ্জ্বল ছবি এঁকে দিয়েছেন যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম স্মরণে রাখবে । আপনারা একটি যুদ্ধের বোঝা বহন করে আসছেন; যা পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলের মানুষদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হলে তারা এর ভারে ঢলে পড়ত; এটা আপনাদের ধৈর্য আর সম্ভাবনাকেই বৃদ্ধি করেছে।

আর এই ক্রুসেডর জোট চায় ...


তাবেদার শাসনের বিরুদ্ধে আপনাদের বিজয়ে ক্ষতি করতে ও আপনাদের বাশারের সীমানায় আবদ্ধ করতে এবং তারা আপনাদের প্রতি ক্ষুব্ধ কেবল এ কারণে যে আপনারা দাসত্ব থেকে সত্য ও ন্যায়ের রাস্তা জানেন।তারা আপনাদের নাচের পুতুল বানিয়ে রাখতে চায় যেমন মিশরে মুরসি-সিসি আর ইয়েমেনে আব্দু রাব্বু মনসুরের মত ।আল্লাহর সাহায্য এবং মিথ্যা ও এর অনুসারীদের শক্তির বিরুদ্ধে আপনাদের ধৈর্য ও দৃঢ়তা এবং আপনাদের মহৎ জিহাদের মাধ্যমে আপনারা পশ্চিমাদের অঘোর উদ্দেশ্যকে ব্যর্থ করে দিয়েছেন

পশ্চিমা বিশ্ব তিন বছর যাবত অস্বাভাবিক খাটনি করেছে তোমার জিহাদে বাধা দিতে...
সেই অঞ্চলের সরকারগুলোর সহযোগিতায় আর বিশ্বাসঘাতকদের সাথে জোট বেঁধে তোমার ও মুসলিমদের রক্ত ঝরাতে

কিছু গোষ্ঠীর মাধ্যমে, যাদেরকে সামান্য অর্থ ও অস্ত্রের মাধ্যমে কিনে নিয়ে পশ্চিমারা নিজেদের হাতের পুতুল বানিয়েছে

ক্রুসেডারদের নতুন এজেন্ডা, শান্তিচুক্তির নাটুকেপনা, প্রথম ও দ্বিতীয় জেনেভা কনভেনশান বাস্তবায়িত করতে

রাসায়নিক আক্রমণ নিয়ে তাদের কাজকারবার এবং

জাতিসংঘের পাঠানো শেষ কূটনীতিক দূত, অতঃপর তাদের ঘৃণ্য কাজ চালিয়ে যেতে কর্মরত গোষ্ঠীগুলোর ব্যর্থতা,

এই সব ব্যর্থতার পর নব্য ক্রুসেডার জোট সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিজেরাই কাজ শুরু করার, আক্রমণ করতে লাগলো তোমার জাবহাতুন নুসরাহর সন্তানদের, নারী ও শিশুদের ঘরগুলোকে তারা মাটির সাথে মিশিয়ে দিলো। হে শামের অধিবাসীগণ, তোমাদের জন্য আল্লাহ আছেন। আমাদের লক্ষ্য করে ক্রুসেডার জোটের যে আক্রমণ চলছে তা আমাদের রিবাতের সারি এবং নুসাইরি-বিরোধী অভিযানকে দুর্বল করতে চাইবে। বোমা হামলায় আমাদের যে লোকদের টার্গেট করা হয়েছিলো, আলেপ্পোর ভূমি তাদের লড়াই ও রিবাতের সাক্ষ্য দিবে, তাদের ক্ষতির ফলাফল শুধু জাবহা একা নয় বরং পুরো ময়দান বহন করবে।

একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বঃ

হে শামের লোকেরা, এই বিষয়ে তোমার অবস্থান নিয়ে নাও, আর আমাদের মধ্যে যারা ক্রুশপূজারীদের সাথে জোট বেঁধেছে তাদের বিরুদ্ধে দৃঢ়পদ হও এবং ওয়াল্লাহি, আমরা কুরবান হয়ে যাবো, তোমাদের জন্য, ন্যায়পরায়ণ জনগণের জন্য কুরবানি অতি সহজ, এবং আল্লাহ ছাড়া কারো শক্তি ও ক্ষমতা নেই।

জাবহাতুন নুসরাহর পক্ষ থেকে একটি ওয়াদাঃ

এবং আমরা ওয়াদা করছি, আল্লাহর ইচ্ছায় বিভিন্ন ঘাঁটিতে মোতায়েন করা সর্বশক্তি দিয়ে আল্লাহর শত্রুদের ও নুসাইরিদের বিরুদ্ধে লড়ে যাবে জাবহাতুন নুসরাহ। শামের জনগণ ও মুহাজিরীনের জন্য ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে আমাদের যা আছে তা দিয়েই প্রতিরোধ গড়ে তুলবো। এ উদ্দেশ্যে সকল সম্ভাব্য পন্থা আমরা অবলম্বন করবো।

জামা'হ আদদাওলাহর সাথে আচরণঃ

লড়াইরত সকল সত্যপন্থী দলকে উপদেশ দিতে চাই যে, নেতাদের হত্যা ও সম্পদ লুট করে জামা'হ দাওলাহ আপনাদের সাথে যেসব অন্যায় করেছে, পশ্চিমা বিশ্ব ও আমেরিকাকে তার সুযোগ নিতে দেবেন না। তারা শামে দুর্ভোগ নিয়ে এসেছে যার মূল্য আমাদের দিতে হচ্ছে।

তারা তাদের পক্ষ-বিপক্ষের অধিকার ও অন্যায়ের বিচার করতে ইসলামী আদালতে যেতে অস্বীকার করে। এটিসহ আরো যত ব্যাপার আছে,তা যত দূরই গড়াক না কেন , সেগুলো যেন আপনাদেরকে পশ্চিমা ও মধ্যপ্রাচ্যের জোটের সাথে নিয়ে দাঁড় না করায়। তারা জিহাদের শিখাকে নিভিয়ে দিয়ে আপনাদেরকে তাদের সেক্যুলার এজেন্ডায় ব্যবহার করতে চায়। আপনাদেরকে নুসাইরি শাসকদের মত একই রাজনৈতিক সংজ্ঞায় ফেলতে চায়।

জামা'হ আদদাওলাহর আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের অজুহাত যারা দিতে চায়, তারা যেন ক্রুসেডার জোটের মিত্র হিসেবে তা না করে।

আল্লাহ বলেছেনঃ

হে মুমিণগণ! তোমরা ইহুদী ও খ্রীষ্টানদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ জালেমদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না।

বোকা বনবেন নাঃ

কারো এই ধারণা রাখা উচিত না যে আমেরিকা এবং পশ্চিমা বিশ্ব মুসলিমদের অবিচার থেকে বাঁচাতে এসেছে।গত তিন বছর ধরে বাশার হত্যা,জেল,নির্যাতন,সুন্নীদের উপর প্রাণঘাতী কেমিকেল নিক্ষেপ ইত্যাদি অপকর্ম করে আসছে।আহতদের সংখ্যা প্রায় দশ লক্ষে পৌঁছেছে।এটা কি শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি হুমকি নয়(যা তারা রক্ষা করার দাবি করে) ?

তারা কি ইরাক ও আফগানিস্তানে আমাদের ভাইদের হত্যা করেনি?

তারা কি ইহুদিদের অর্থ,অস্ত্র আর ক্ষমতা দিয়ে ফিলিস্তিনে মুসলিমদের হত্যা করার ব্যবস্থা করছে না!?
তারা কি ইয়েমেন,সোমালিয়া আর ওয়াজিরিস্তানে নিরীহ-নিরস্ত্র মানুষের উপর বোমা ফেলছে না?

বিশ্বাসঘাতক হবেন নাঃ

নিশ্চয়ই ফিতরাত বা মানবস্বভাব, ইসলামী শরীয়ত এবং ইতিহাস ঐসব ব্যক্তিদের সর্বনিকৃষ্ট রুপে স্মরণ করিয়ে দেয় যারা আপন দেশ এবং ভূমির বিরুদ্ধে শত্রুকে সহায়তা করে । কেউ কেউএমন আছে ইবলিসি (শয়তানি) যুক্তি দিয়ে পাশ্চাত্যদের দালালিকে জায়েয করতে চায়, পশ্চিমাদের আপন গরজে ভাড়া খাটে, অথবা তাদের নির্যাতন থেকে বাচার অযুহাতে তাদের গোলামীর পক্ষে যুক্তি দেখায়।আল্লাহ তাআলা বলেন ,

সুতরাং, তুমি দেখতে পাবে, যাদের অন্তরে ব্যাধি রয়েছে, তারা কাফিরদের মধ্যে (বন্ধুত্বের জন্য) ছুটছে। তারা বলে, ‘আমরা আশঙ্কা করছি যে, কোন বিপদ আমাদেরকে আক্রান্ত করবে। অতঃপর হতে পারে আল্লাহ দান করবেন বিজয় কিংবা তাঁর পক্ষ থেকে এমন কিছু, যার ফলে তারা তাদের অন্তরে যা লুকিয়ে রেখেছে, তাতে লজ্জিত হবে।

মক্কার বিশ্বাসঘাতক শরিফ হুসাইন উসমানী সালতানাতের(অটোমান এম্পায়ার) অবিচারের অজুহাতে ও তাদের থেকে পরিত্রাণের নিয়্যাতে ব্রিটিশ আর ফরাসীদের সাহায্য করেছিল এবং সে এই বিকৃত ধারনা করত যে, আমরা সঠিক কাজটাই করছি। কিন্তু কিয়ামত পর্যন্ত ইতিহাস তাকে নিকৃষ্টরূপেই স্মরণ করবে । কিন্তু ইহুদিদের জুলম উসমানীয় খিলাফাতের শেষ সময়ের জুলুমকে (কয়েক গুন) ছাড়িয়ে গেছে বেলফোর চুক্তি ঘোষণা মাধ্যমে। আল্লাহর কাছে আমরা আমাদের সেই পিছনে ফেলে হারানো দিনগুলো ফিরে পাওয়ার দোয়া করছি ।বৃটিশরা শরীফ হোসাইনকে তার এমন নিকৃষ্ট কর্মের(স্বজাতীর সাথে বেইমানির) পরও তাকে ছুড়ে ফেলল।বিনিময়ে সে (বৃটিশদের থেকে) পেয়েছিল প্রতিদিনকার রুটির ব্যাবস্থা ।

আমরা তার এই খিয়ানতের ফলাফল বহন করতে হয়েছে বৃটিশদের ইরাক দখলএবং ফ্রেঞ্চদের শাম (সিরিয়া) দখলের মাধ্যমে । এবং তা আজ পৌছেছে আমেরিকার আজকের ইরাক ও সিরিয়া হামলা পর্যন্ত । প্রজন্মের পর প্রজন্ম তা জিল্লতি এবং দুর্বলতা হিসেবে বহন করছে যার জখমকে আমরা একশত বছর ধরে পরিষ্কার করছি । আমাদের সামনে এই "কালো মেঘ" সরানোর পথ ও পদ্ধতি পরিষ্কার হয়ে যাওয়ার পরও কি আমরা সেই পুরোনো "ঘূর্ণাবর্তে" ফিরে যাব ?

আমরা কখনো অনুমোদন করি না এবং সত্যবাদীগণও কখনো অনুমোদন করবে না যে অতীতে ফিলিস্তিনের যে ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে, তা নতুনভাবে আবার হোক। ইসলামে সম্মত মুসলমানদের যে সকল নিদর্শনাবলির অধঃপতন হয়েছে, তা আমরা এবং আহলে সুন্নাতের হক্বপন্থী মুজাহিদগণ ঠেকিয়েছেন; যখনই আমরা (ক্ষমতা) অধিকার করেছি।

আজকের দিনে আহলুস সুন্নাহর অনুসারী মুসলিম জনতা সেই ঐতিহাসিক মুহুর্তের অপেক্ষায় আছেন যে, তাদের উপর থেকে লাঞ্ছনার জাঁতাকল উপড়ে ফেলা হবে, বন্দীত্বের অসহনীয় সেই শেকল ভেঙ্গে ফেলা হবে। আর এটা অবশ্যই ঘটবে আল্লাহর সাথে ওয়াদাকারী সেইসব মুজাহিদীনদের হাতে, যারা তাদের ওয়াদাকে পরিপূর্ণভাবে পালন করেছেন। কিন্তু সেইসব লোকদের হাতে নয় যারা পশ্চিমাদের হাতের দিকে বিজয়ের জন্য চেয়ে থাকে ।

অতএব আমরা এমন এক জাতি, যারা তাদের পরিচয় আর আদর্শ থেকে বিচ্যুত হব না, বিস্মৃত হব না আমাদের ইতিহাস এবং ছিন্ন হব না আমাদের শেকড় (উৎস) থেকে।যদিও সময় আমাদের প্রতিবন্ধক হয় অথবা জমানার গর্দিশ আমাদের ঘিরে ধরে; আমরা আমাদের আদর্শের উপর বেঁচে থাকব এবং (প্রয়োজনে) এর জন্যে মৃত্যুবরণ করব।
অতঃপর কিয়ামত দিবসে এই আদর্শের উপরই পুনরুত্থিত হব (ইনশাআল্লাহ)।
বল, ‘এটা আমার পথ। আমি জেনে-বুঝে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেই এবং যারা আমার অনুসরণ করেছে তারাও। আর আল্লাহ পবিত্র মহান এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই
আমরা আলেম, দ্বাঈ ও তালিবে ইলম,চিন্তাবিদ,লেখক,কবি এবং এই মহৎ কলমের প্রত্যেক বাহককে আহবান জানাচ্ছি এই নতুন ক্রুসেডের বিরুদ্ধে শামের ভাইদের সমর্থন করতে এবং তাদের মহান সন্তান- মুজাহিদগণের মান রক্ষা করতে।তাদের একটি বিশিষ্ট ভূমিকা আছে কারণ আমরা তাদের উপর উম্মাহর যুবকদের উদ্দীপ্ত করতে,নির্দেশনা এবং শিক্ষা দিতে।
 
(চলবে ইনশাআল্লাহ...) 


লেখকঃ শায়েখ আল ফাতিহ আবু মুহাম্মাদ আল জাওলানী (হাঃ)
অনুবাদঃ শায়খ আযযাম অনুবাদ টীম