পৃষ্ঠাসমূহ

খিলফাহ পুনঃপ্রতিষ্ঠার পদ্ধতি - শায়খ আনওয়ার আল আওলাকী [রাহিমাহুল্লাহ]

 

 খিলফাহ পুনঃপ্রতিষ্ঠার পদ্ধতি কি হওয়া উচিত এ প্রসঙ্গে একটি প্রশ্নের জবাবে শায়খ আনওয়ার আল আওলাকী [রাহিমাহুল্লাহ] নিচের আলোচনাটি করেছিলেন।

প্রশ্নকর্তার মূল প্রশ্নটি আয়তনে অনেক বড় এবং সেখানে অনেক অপ্রয়োজনীয় আলোচনা থাকায় সেটা এখানে অনুবাদ করা হল না।
_________________________________________________________________
খিলাফাহর পতনের পর প্রতিষ্ঠিত বেশীর ভাগ ইসলামী দলই খিলাফা পুনঃপ্রতিষ্ঠার গুরুত্বকে স্বীকার করে। আশির ও নব্বইইয়ের দশকের একটা সময় ছিল যখন সালাফি’রা থেকে শুরু করে, ইখওয়ান (মুসলিম  ব্রাদারহুড), জামায়াত ইসলামি, হিযবুত তাহরীর, জিহাদী দলগুলো এমনকি সুফীরাও খিলাফাহ পুনঃপ্রতিষ্ঠার কথা বলছিল। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে এবং যেহেতু পশ্চিমা বিশ্ব পরিষ্কার করেছে যে, তারা  খিলাফাতকে তীব্রভাবে অপছন্দ করে ও কোনভাবেই বরদাস্ত করবে না, সেহেতু কিছু দল সম্পূর্ণভাবে খিলাফা পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবির অবস্থান থেকে পিছিয়ে আসলো আর অন্যরা পশ্চিমা প্রেসক্রিপশান অনুযায়ী তাঁদের আদর্শকে কাটছাঁট করে নিলো। শুধুমাত্র হাতেগোনা কিছু দল ইসলামী অনুশাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠার আহবানে স্থিরসংকল্প ও দৃঢ় রইল।


খিলাফা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে বিভিন্ন ইসলামী দলগুলোর প্রস্তাবিত পদ্ধতি সমূহঃ
১। তারবীয়াহ – তারবীয়াহ (নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমে শিক্ষা) করতে থাকতে হবে এবং যখন কোন না কোনভাবে আমাদের পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে তখন খিলাফা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে। আবার কেউ কেউ বলছেন উম্মাহ প্রস্তুত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের তারবীয়াহ চালিয়ে যেতে হবে এবং তারপর আমরা আল্লাহর শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়াই করব।
২। গনতন্ত্র - গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন হওয়া।
৩। হিযবুত তাহরীরের পদ্ধতি, যেটা হল -  খিলাফার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে উম্মাহর সচেতনতা বৃদ্ধি করা, মুসলিমদের রাজনীতি শিক্ষা দেয়া এবং নুসরাহ (আনসারদের থেকে সাহায্য/সহায়তা) খোঁজা।
৪। জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহ-  পৃথিবীতে আল্লাহর দ্বীনকে (অর্থাৎ আল্লাহপ্রদত্ত জীবন বিধান) প্রতিষ্ঠিত করার জন্য, আল্লাহর পথে জিহাদ করা।



তারবিয়্যাঃ
এই পদ্ধতির প্রবক্তারা কখনোই ঠিক কতটুকু তারবীয়াহর (নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমে শিক্ষা) পর আমরা খিলাফাহ প্রতিষ্ঠার আদর্শকে বাস্তবায়িত করতে পারবো সেটা সুস্পস্ট করে বলেন না। ঠিক কতোটুকু তারবীয়াহর পর উম্মাহ উপযুক্ত হবে, প্রস্তুত হবে সেই ব্যাপারে কোন স্পস্ট মাপকাঠি কিম্বা লক্ষ্যমাত্রা এই পদ্ধতির প্রবক্তারা দেন না। যার ফলাফল হল উম্মাহ জিহাদের দ্বায়িত্ব উপেক্ষা করে চিরস্থায়ীভাবে তারবীয়াহ্‌র ধাপেই পড়ে থাকব।
তাঁরা আরেকটি ব্যাপার ভুলে যান আর তা হল, তারবীয়াহ এক প্রজন্মের মধ্যে, একাধিক প্রজন্মে নয়। এর অর্থ হচ্ছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে পরিবর্তন এনেছিলেন, যা দাওয়াহ দিয়ে শুরু হয়ে জিহাদের মাধ্যমে শেষ হয়েছিল তা সম্পন্ন হয়েছিল এক প্রজন্মের জীবদ্দশায়। এই পুরো পরিবর্তনটা ঘটেছিল ২৩ বছরের মধ্যে। ইতিহাস সাক্ষী দেয় এই উম্মাহর ক্ষেত্রে অন্য সব সফল পরিবর্তনও এক প্রজন্মের জীবদ্দশাতেই ঘটেছিল।


গণতন্ত্রঃ

গণতান্ত্রিক নির্বাচনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে পরিবর্তনের প্রবক্তারা এই বলে তাঁদের বক্তব্য শুরু করেন যে-  গণতন্ত্র কুফর এবং আমরা এতে বিশ্বাস করি না, কিন্তু আমরা একে ক্ষমতায় যাওয়ার মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার করছি। ক্ষমতাসীন হবার পর আমরা ইসলাম প্রতিষ্ঠা করবো। আশির দশকের শেষ এবং নব্বইয়ের দশকের শুরুতে আমি যতো নেতৃস্থানীয় ইখওয়ান (মুসলিম ব্রাদারহুড) সদস্যের সাথে কথা বলেছি, তাঁরা সবাই বারবার এই একই কথা বলেছেন। এই ব্যাপারে সেসময় যেসব গন-আলোচনা হয়েছিল আমার সেগুলোর কথা স্পষ্ট মনে আছে, কারণ তখন সালাফীরা এই ইস্যুতে তীব্রভাবেইখওয়ানের বিরোধীতা করছিল। এছাড়া আমি ব্যাক্তিগত ভাবে ইখওয়ানের বিভিন্ন শুয়ুখের সাথে কথা বলেছিলাম এবংআমার পরিষ্কার মনে আছে তাঁরা বারংবার এই কথাটাই বলছিলেন যে -

গণতন্ত্র অনৈসলামীক। আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি, কিন্তু আমাদের লক্ষ্য হল ভেতর থেকে (অর্থাৎ গণতন্ত্রের মধ্যে থেকে) এই সিস্টেমের পরিবর্তন ঘটানো।

এই পদ্ধতির মধ্যে তিনটি সমস্যা আছেঃ

প্রথমত, গণতন্ত্রে অবিশ্বাসী হওয়া সত্ত্বেও গণতন্ত্র এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ব্যবহার করা এবং এর প্রতি অনুগত হবার দাবি করা প্রতারণা এবং মিথ্যাচার। ইসলামে যুদ্ধাবস্থায় শত্রুর বিরুদ্ধে ছলচাতুরী কিম্বা প্রতারণার আশ্রয় নেওয়া জায়েজ। সমস্যাটা হল, এই ইসলামী দলগুলো যারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত;  তাঁরা মনে করে না যে বর্তমানে তারা কাফেরদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত আছে,বরং তাঁরা বিশ্বাস করে যে, মুসলিম ও কুফফার বর্তমানে একে অপরের সাথে চুক্তিবদ্ধ তাই এখন শান্তিবস্থা চলছে। মুসলিমরা যদি প্রকৃতপক্ষেই কাফেরদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়, তাহলে তাদের(কাফেরদের) সাথে প্রতারণা করা ও মিথ্যাচার করা ইসলামে জায়েজ না। এটা হল প্রথম সমস্যা।

দ্বিতীয় সমস্যা হল মানুষ যখন দীর্ঘদিন ধরে একটি মিথ্যার পুনরাবৃত্তি করতে থাকে তখন এক পর্যায়ে সে এই মিথ্যাকেই বিশ্বাস করা শুরু করে দেয়। সময়ের সাথে এই গণতন্ত্রপন্থী দলগুলোর মধ্যে যে আমূল পরিবর্তন এসেছে সেটা যারা এই দলগুলোকে আশির দশক থেকে লক্ষ্য করছেন তাঁদের কাছে বিস্ময়কর। এখন তারা বলছে এবং আমিও তাদের বিশিষ্ট সদস্যদের কাছ থেকে একাধিকবার শুনেছি যে -
"এখন আমরা আসলেই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিশ্বাস করি। আমরা বুলেটে না, ব্যালটেবিশ্বাসীএবং ব্যালট যদি নির্ধারণ করে যে কোন ধর্মনিরপেক্ষ কিম্বা কাফির দল ক্ষমতায় থাকবে, তাহলে আমরা সেটাই মেনে নেব।“! 

[এ ব্যাপারে মিশরে ইখওয়ানুল মুসলিমীন এবং বাংলাদেশে জামাত এ ইসলামী -এর বর্তমান অবস্থান সবচাইতে বড় প্রমান - অনুবাদকের নোট]


এপদ্ধতির সর্বশেষ সমস্যাটা হল, অনুপ্রবেশের [infiltration] মাধ্যমে গোপনে পরিবর্তনের পদ্ধতি মুসলিমদের পদ্ধতি না। মুসলিমরা গোপনে অনুপ্রবেশ করে ভেতর থেকে কোন ব্যবস্থার পরিবর্তন করে না। এটা ইহুদী এবং মুনাফিকদের খুব প্রিয় পদ্ধতি কিন্তু এটা কখনোই মুসলিমদের পথ না। বন্ধু কিম্বা শত্রু, সবার সাথেই আমরা সৎ, অকপট এবং সোজাসাপ্টা। আমরা আমদের উদ্দেশ্যকে উন্মুক্তভাবে উপস্থাপন করি এবং প্রকাশ্যে আমাদের দাওয়াহ ঘোষণা করি-

“তোমার জন্য তোমার দ্বীন আর আমার জন্য আমার দ্বীন।”
আম্রিকা হোক কিম্বা কোন মুসলিম দেশই হোক– আমরা কোন দেশের শাসন ব্যবস্থাতেই অনুপ্রবেশ করতে ইচ্ছুক না। এটা তো ইহুদীদের পদ্ধতি, যারা আন্দালুস থেকে শুরু করে, ওসমানী খিলাফাত এবং আজকের পশ্চিমা সরকারগুলো পর্যন্ত যখন যে সরকারে অধীনেই ছিল তার ভেতর অনুপ্রবেশ করেছে। ইহুদীরাই গোপন উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করে, আমরা মুসলিমরা করি না।আমরা ইহুদী না, আমরা উম্মাতে মুহাম্মাদী। ইহুদী এবং তাঁদের জ্ঞাতিভাই মুনাফিকরা রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু ওয়া লাইহী ওয়াসাল্লাম] – এর সরকারেও অনুপ্রবেশের চেস্টা করেছিল এবং আল্লাহ্‌ আযযাওয়াজাল কুর’আনের মাধ্যমে তাঁদের মুখোশ উন্মোচন করে দিয়েছিলেন - “এবং এক দল কিতাবধারী [একে অপরকে] বলাবলি করছিল, মুমিনদের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে,দিনের শুরুতে তা বিশ্বাস কর আর দিনের শেষে তা অস্বীকার(বা পরিত্যাগ) কর, যাতে তাঁরা(অর্থাৎ মুমিনরা) ফিরে যায় [অর্থাৎ, তাদেরধর্ম পরিত্যাগ করে]”


অর্থাৎ তাদের পরিকল্পনা ছিল তাঁরা ঈমান আনবে,  মুমিনে পরিণত হবে এবং মুসলিমদের মাঝে আসবে, শুধুমাত্র দিন শেষে তা পরিত্যাগ করার জন্য। এদের সাথে আল্লাহ্‌ মুনাফিকদের বিষয়েও বলেছেন যারা মুমিনদের সাথে বসে দিনভর তাঁদের আলোচনা শুনতো , তারপর ইহুদীদের কাছে গিয়ে যা শুনেছে সব বলে দিতো। সুতরাং যারা বলছে যে মুসলিমদের উচিত শাসন ব্যবস্থায় অনুপ্রবেশের মাধ্যমে ভেতর থেকে এর পরিবর্তনের চেস্টা করা তাঁরা মুসলিমদের পদাঙ্ক অনুসরণ করছে না। এবং এসব মানুষ যদি চারিত্রিকভাবে সত্যিকারভাবেই মুসলিম হয়ে থাকেন তাহলে তাঁরা ব্যর্থ হবেন। কারণ অনুপ্রবেশের এই পন্থা মুসলিমদের চরিত্র, আচরণ এবং আদর্শের সাথে খাপ খায় না। আর তাঁরা যদি এপন্থায় সাফল্য অর্জন করে তাহলে বুঝতে হবে তাঁদের চরিত্র ইহুদী এবং মুনাফিকদের চরিত্রে পরিণত হয়ে গেছে। 



এরসাথে সম্পর্কিত একটি বিষয় হল, ইসলামী পরিবেশ থেকে উঠে আসা যেসব মানুষ দীর্ঘকাল ধরে বর্তমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার মধ্যে কাজ করেন তাঁরা অবধারিতভাবেই শেষ পর্যন্ত রাজনীতিবিদে পরিণত হন। অর্থাৎ রাজনীতিবিদদের যেসব নেতিবাচক বৈশিষ্ট্য আছে – শঠতা, প্রতারণা,বারবার রঙ বদলানো, ভস্তুবাদ, ভোগবাদ , নীতিজ্ঞানহীনতা - তার সবই তাঁদের মধ্যে দেখা যায়। 


আরো একটি বিষয় এর সাথে সম্পর্কিত আর তা হচ্ছে, যারা ইসলামী পরিবেশ থেকে উঠে এসেছে এবং দীর্ঘ সময় ধরে বর্তমান রাজনৈতিক সিস্টেমের মধ্যে কাজ করেছে তারা শেষপর্যন্ত রাজনীতিবিদে পরিণত হয়েছে, এবং তাঁদের মধ্যে দেখা দিয়েছে কূটনৈতিক, রঙ-বদল, বস্তুবাদী ও কৌশলী ইত্যাদি শব্দের সকল নেতিবাচক অর্থসমূহ। তারা হয়তো প্রাথমিকভাবে ইসলামী আন্দোলনেরশক্ত তারবীয়াহ কর্মসূচির মাধ্যমে গড়ে উঠেছেন, কিন্তু রাজনীতির অঙ্গনে কিছু সময় কাটাবার পর, যে নেকড়ের পালের পরিবর্তনের লক্ষ্যে তাঁরা রাজনীতিতে পা রেখেছিলেন, তাঁরা নিজেরাই সেই নেকড়েতে পরিণত হন। আমার চোখের সামনে আমি আমার পরিচিত মানুষদের ক্ষেত্রে এরকম ঘটতে দেখেছি। এব্যাপারে ইয়েমেনের ইসলামী আন্দোলনের একজন নেতা মন্তব্য করেছিলেন -

“আমরা তাঁদেরকে এক পাল নেকড়ের মধ্যে ভেড়ার মতো পাঠাই আর তাঁরা আমাদের মাঝে মাংসহীন কঙ্কাল হয়ে ফিরে আসে।“   



আপনি যদি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ভেতরে থেকে তা পরিবর্তনের চেস্টার পদ্ধতির ফলাফল কি,  তার জীবন্ত কোন উদাহরণ চান তাহলে সুদান কিম্বা তুর্কির [অথবা মিসর কিম্বা বাংলাদেশ] দিকে তাকান। এদুটো দেশেই ক্ষমতাসীন হবার পর,বিষাক্ত পরিবেশে ইসলামপন্থীরাও অন্য সবার মতো দূষিত, দুর্নীতিগ্রস্থ এবং কলুষিত হয়ে পড়েছে।



নুসরাহঃ

হিযবুত তাহরীরের পদ্ধতি প্রসঙ্গে আপনি [প্রশ্নকর্তা] আপনার প্রশ্নে বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন।
আমি প্রথম হিযবুত তাহরীরের সদস্যদের সংস্পর্শে আসি ৯০’র শুরুতে জর্ডানে এবং যদিও আমার কাছে তাঁদেরকে বেশ তর্কপ্রবণ মনে হয়েছে তবে তাঁরা শিষ্টাচার সম্পন্ন ও ভদ্র। হিযব সম্পর্কে আমি প্রথমে তাদের কাছ থেকেই জানতে পারিএবং তারা ছিল এই দলের কেন্দ্রীয় সদস্য। উম্মাহকে খিলাফা সম্পর্কে সজাগ করতে হিযবুত তাহরীর একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তারা আরো ভূমিকারেখেছে, রাজনীতি ও রাজনৈতিক সচেতনতার সেইসব ভুল মতবাদ প্রতিহত করতে যা ইসলামের সাথে সম্পর্কিত না।
তবে খিলাফাহ পুনঃপ্রতিষ্ঠায় হিযবুত তাহরীরের পদ্ধতি কাজ করবেনা।  যতক্ষণপর্যন্ত নুসরাহ আসছে না ততক্ষণ নুসরাহর জন্য অপেক্ষা করা –  প্রকৃতপক্ষে একটি অলৌকিক ঘটনার জন্য অপেক্ষা করা। যেসব গোত্রগুলো ও সামরিক প্রধানরা নুসরাহ দিবে আর আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠা করবে বলে হিযবুত তাহরীর মনে করছে,সোজা-কথায় তাদের আলোচনার মাধ্যমে জয় করা যাবে না।

তারা শুধুমাত্র তখনই বিজীত হবে যখন তারা দেখবে পাবে এক দল মুমিনকে যারা যা বলছে তাই করছে এবং তাদের সমস্ত অর্জন উৎসর্গ করছে আল্লাহর রাহে। এটাই অন্যদের অংশগ্রহণ করতে উৎসাহিত করবে। এই দ্বীনকে নুসরাহ দেয়া ক্ষমতাবান ব্যাক্তিদের দু’টি সফল কাহিনী হল, ইরাকি বাথ রেজিমের কিছু প্রাক্তন অফিসার যারা আম্রিকার বিরুদ্ধে জিহাদের অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং দুদাইয়েভ, চেচনিয়ার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট,যে সোভিয়েত সেনাবাহিনীর উচ্চ মর্যাদার অফিসার ছিল। নুসরাহরএই উভয় সফল উদাহরণ কোন বিতর্ক, বিক্ষোভও পুস্তিকার মাধ্যমে অর্জিত হয় নি, বরং আল্লাহর রাস্তায় জিহাদেরত মুজাহিদীনের জীবন্ত উদাহরণ দেখেই অর্জিত হয়েছে।


জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহঃ

অতঃপর আমরা খিলাফাহ পুনঃপ্রতিষ্ঠার চতুর্থ পদ্ধতি নিয়ে আলোচনায় উপনীত হচ্ছি এবং তা হল জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহ। আপনি [প্রশ্নকর্তা] এর বিরুদ্ধে কিছু যুক্তি উপস্থাপন করেছেন তা হল, আমাদের বর্তমান পরিস্থিতি সেই পরিস্থিতির অনুরূপ যে রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রথমে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং পরে জিহাদ করেছেন। আপনি একটি গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য উপেক্ষা করছেন আর তা হল, যখন রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদিনা প্রতিষ্ঠা করেন তখন কোন আক্রান্ত ইসলামিক ভূখন্ড ছিল না।

এটা কি একটি গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক পার্থক্য না?


আজ মুসলিম বিশ্ব বেদখল এবং আমাদের আলেমদের বিবৃতি স্পষ্ট যে, মুসলিম ভূমি মুক্ত করতে প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলমানের উপর জিহাদ ফরযে আইন। যখন কোন কিছু ফরযে আইন হয় তখন তা ফরযে আইনই।আপনি তা অন্যথায় অনুমান বা ব্যাখ্যা করতে পারবেন না। এর নিয়ম সুস্পষ্ট এবং এর প্রয়োগও সুস্পষ্ট।
সুতরাং, আপনার যদি জিহাদকে খিলাফাহ প্রতিষ্ঠার পন্থা বলে বিশ্বাস নাও হয়, তবে আপনি এ বিষয়ে একমত যে জিহাদ ফরযে আইন, যেখানে হিযবুত তাহরির একমত না। আর যে জিহাদ ফরযে আইন এবং যা জিহাদ আল-দাফ (অর্থাৎ আত্নরক্ষামূলক জিহাদ) তাতে অংশগ্রহণের জন্য ইমাম/নেতা,অভিভাবক, স্বামী, ক্রীতদাসের মালিক বা ঋণদাতারঅনুমতি নেয়ার প্রয়োজন হয় না।


আর আমাদের এই বিষয়ে তর্কে লিপ্ত হবার দরকারটাই বা কি যখন আমরা বাস্তবে এর জলজ্যান্ত প্রমাণ দেখতে পাচ্ছি ! সবচাইতে সফলদুটি উদাহরণ হল  (যদিও এগুলো নিখুঁত হওয়া থেকে অনেক দূরে) , গত দশকের আফগানিস্থানের তালেবান ও সোমালিয়ার ইসলামী আদালত [Islamic Courts of Somalia]। দুটী ক্ষেত্রেই মুজাহেদীন শান্তি নিরাপত্তা এবং আইনের শাসন ও শারীয়াহ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। দুটি আন্দোলনই ক্ষমতায় গিয়েছইলেন নির্বাচন বা বিতর্কের মাধ্যমে নয়, বরং জিহাদের মাধ্যমে। এবং আফগানিস্তানে এবং সোমালিয়াতে তাদের পতন এজন্য হয় নি যে তারা শাসনকার্যে ব্যর্থ ছিলেন, বরং এই উম্মাহর তাঁদের সাথে যোগ দিতে ব্যর্থ হয়েছে। অধিকন্তু, যদিও এখানে-সেখানে একটি দু’টি খণ্ডযুদ্ধে পরাজয়এসেছে, তবুও যুদ্ধ এখনো শেষ হয় নি। যদি আপনি সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর দিকে তাকান এবং মনোযোগের সাথে খেয়াল করেন, তাহলে অনুধাবন করতে পারবেন যে, শত্রুদের সাম্রায্যের[আম্রিকা] ক্রমাগত রক্তক্ষরণ হচ্ছে এবং তাঁরা তাঁদের পতনের দিকে ছুটে যাচ্ছে। এবংজিহাদের আন্দোলন ক্রমাগত শক্তিশালী হচ্ছে।


কারণ, সাধারণন জিহাদ বলতে কি বুঝায়, নফসের জিহাদ নাকি তলোয়ারের জিহাদ এটা নিয়ে বিভ্রান্তি থাকে। আমি একচেটিয়াভাবে একটি বা অপরটিকে বুঝাচ্ছি না,এবং একটি থেকে অন্যটি পৃথকও করছি না। আমি জিহাদ বলতে যা বুঝাচ্ছি তা এই নয় যে, শুধুমাত্র অস্ত্র ধরো ও যুদ্ধ কর। জিহাদ এর চাইতেও বৃহত্তর কিছু। আমি এই প্রসঙ্গে জিহাদ বলতে যা বুঝাচ্ছি, তা হল যুদ্ধ চালিয়ে যেতে ও শত্রুকে পরাভূত করতে এই উম্মাহর সামষ্টিক প্রচেষ্টা।
রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “কাফেরদেরসাথে যুদ্ধ করো তোমার জান, তোমার সম্পদ ও তোমার মুখ দ্বারা।”

ক্লসউইটয এটিকে“সামষ্টিক যুদ্ধ” [TOTAL WAR] আখ্যা দিয়েছে এবং আমাদের এই টোটাল ওয়ার-এই লিপ্ত হতে হবে তবে ইসলামের নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে। পুরো দুনিয়া, আপনার আমার মানসপট সবই আজ এই মহাযুদ্ধের  যুদ্ধক্ষেত্রেএবং এই যুদ্ধ হল মানুষের মানুষের হৃদয় ও চিন্তাকে জয় করারও যুদ্ধ।