দাওয়াত এবং প্রজ্ঞা
শেইখ আনোয়ার ছিলেন সাধারণ মানুষের বক্তা । তিনি ইংরেজীতেই বেশি
স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন এবং তার আরবী বক্তব্যগুলো বেশির ভাগ সময়ই সাধারণের
জন্যে ছিল না । চিন্তা ও মতামতের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে ওলামা-মাশায়েখ,
তালেবুল-ইলম এবং দায়ী'দের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি ছিল তার । কারণ তিনি বিশ্বাস
করতেন পরিবর্তনের কান্ডারী তাদেরকেই হতে হবে, তাদের একজনের সঠিক পথ পুরো
গোষ্ঠীকে সঠিক পথে আনতে সক্ষম । ঠিক একারণেই তার বেশির ভাগ দাওয়াতী
কর্মকান্ড ছিল ব্যক্তিগত ভাবে বিভিন্ন ওলামা-মাশায়েখ, দায়ী',
গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বের সাথে দেখা করা অথবা তালেবুল-ইলমদের জমায়েতে
শরীক হওয়া ইত্যাদিকে ঘিরে । শেইখের সাপ্তাহিক তালিমে নিয়মিতই বেশ কয়েক
ডজন তালেবুল-ইলম অংশ নিত । অনেক সময় এই সংখ্যা শ' ছাড়িয়ে যেত । সত্যি
বলতে, পশ্চিমা ইংরেজী-ভাষী মুসলিমদের কাছে তার দাওয়াত যেভাবে সাড়া ফেলেছে
সেটা আরব-উপদ্বীপের তুলনায় অতুলনীয় । নিঃসন্দেহে শেইখ আনোয়ার, আল্লাহ
তার ওপর রহমত বর্ষণ করুন, ছিলেন ইংরেজী ভাষায় ইসলামের দায়ী'দের মধ্যে
শ্রেষ্ঠত্বের কাতারে ।
দায়িত্বের ডাক যখন এলো
৯/১১ এর সেই
বরকতময় হামলার পর কারা এটা করেছে, মুসলিম বিশ্বে এর প্রভাব কেমন হবে বা এ
হামলার বৈধতা নিয়ে প্রচুর বিতর্ক ছিল । তখন যেভাবে শেইখ আনোয়ার এই
বিতর্কিত ইস্যুকে মোকাবেলা করেছেন এবং এই বিষয়ে যেভাবে বিভিন্ন প্রশ্নের
উত্তরে তিনি ইসলামী-আইনগত ব্যাখ্যা দিতেন তা সত্যিই প্রশংসনীয় । আমার মনে
পড়ে সেই সময়ে ঐ হামলার বিষয়ে আমি তার সাথে কথা বলেছিলাম । আমি এখানে তার
সেই কথাবার্তার যে অংশবিশেষ আমার মনে আছে সেটা তুলে ধরছি, " এই ঘটনাবলীতো
ঘটেই গেছে আর আমেরিকাও তার শত্রুকে চিহ্নিত করে ফেলেছে । মুসলিমদের
বিরূদ্ধে আগ্রাসন চলছে, এই সময়ে আমাদের সঠিক দায়িত্ব হচ্ছে এই অবস্থায়
ইসলাম আমাদেরকে কি বলছে সেই বিষয়ে মনোযোগ দেয়া । কাফেররা মুসলিম ভূমি দখল
করেছে, নির্বিচারে সাধারণ মুসলিম এবং নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গকে হত্যা
করছে, তারা মুসলিমদেরকে তাড়া করছে - তাদেরকে ঘরছাড়া করছে, আলেম-ওলামা,
দায়ী' এবং মুজাহিদীনদেরকে গ্রেফতার করছে, মুসলিমদের মধ্যে ধনী এবং
ব্যবসায়ীদের তহবিল জব্দ করছে । আজকের এই সময়ে ইসলাম আমাদেরকে কি করতে বলে
? এই বিষয়ে কোন দ্বিমত নেই যে, আজকের এই অবস্থায় আমাদের জন্যে আল্লাহ'র
রাস্তায় জিহাদ অত্যাবশ্যকীয় কিন্তু আমেরিকাকে আক্রমণ করে মুজাহিদীনরা ভুল
করেছে নাকি ঠিক করেছে এই বিষয়টা বিতর্ক-সাপেক্ষ । মুসলিম উম্মাহ'র
বিষয়াদী নিয়ে এখন বিতর্কের সময় নয় বরং এখন আমাদের কাজ করতে হবে ।
ন্যায়সম্মত জিহাদকে বাস্তবায়ন করে আল্লাহ-বিরোধী অন্যায় শক্তির হাত থেকে
মুসলিমদেরকে রক্ষা করা এবং আল্লাহ'র নবীর (সাঃ) বিরূদ্ধে কাফেরদের এই কঠিন
যুদ্ধকে প্রতিহত করার জন্যে আমাদেরকে কাজ করতে হবে । আল্লাহ বলেন,
" হে
মু'মিনরা ! তোমাদের কি হল, যখন তোমাদেরকে আল্লাহ'র পথে বের হতে বলা হয়,
তখন তোমরা জমিনের প্রতি ঝুঁকে পড় (অলস বসে থাক) ? তবে কি তোমরা পরকালের
স্থলে দুনিয়ার জীবনেই সন্তুষ্ট অথচ পরকালের তুলনায় ইহকালীন জীবন বড়ই
নগণ্য । তোমরা যদি অভিযানে বের না হও তাহলে (আল্লাহ) তোমাদেরকে কঠিন শাস্তি
দেবেন এবং অন্য জাতিকে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন; আর তোমরা তাঁর কোন
ক্ষতি করতে পারবে না, আর আল্লাহ সর্বশক্তিমান । - (৯ : ৩৮,৩৯) "
মূল লেখাঃ শাইখ হারিস আল নাযারী [ ইন্সপায়ার ম্যাগাজিন, পষ্ঠা ৯, ইস্যু ৯ ]
অনুবাদঃ শায়খ আযযাম বাংলা অনুবাদ টীম।
অনুবাদঃ শায়খ আযযাম বাংলা অনুবাদ টীম।