এই লেখার উদ্দেশ্য বাড়ীতে ইন্টারনেট সংযোগের
অপব্যাবহারের ভয়ংকর পরিণতি (বিশেষ করে শিশুদের জন্সম্পর্কে আপনাদের সচেতন করা। উটপাখির মত আমরাও সাধারণত মাথা পেতে চলিনা, যুক্তির ব্যবচ্ছেদ ছাড়া কোন
কথা মেনে নিতে আগ্রহী নই। তাই আসুন শয়তানের প্ররোচনার মাধ্যম হিসেবে ইন্টারনেট ও
এর ব্যবহার সম্পর্কিত কিছু ঘটনা ও তথ্য উপাত্ত সততার সাথে মূল্যায়ন করা যাক।
পর্নোগ্রাফির উন্মুক্ত দ্বারঃ ইন্টারনেটে পর্নোগ্রাফিক
ফাইলগুলো লাগামহীন ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, যার প্রচারণা হচ্ছে স্পামে, নগ্ন প্রদর্শনী
এবং সার্চ ইঞ্জিনগুলোতে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে, আর কয়েকটা ক্লিকস করে যে কেউ প্রবেশ
করতে পারে সংখ্যায় অগণিত পর্নোগ্রাফির আধার হয়ে থাকা সাইটগুলোতে। বিভিন্ন
পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে, ক্রমবর্ধমানভাবে শিশুরাই পর্নোগ্রাফি বা অশ্লীল
বিষয়বস্তু দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে। এই অশ্লীল বিষয়বস্তুগুলো যে কাউকে ঘৃণ্য ও
অরুচিকর কাজে প্ররোচিত করতে পারে, এমনকি শিশুদেরকেও। শুধু পর্নোগ্রাফির মত শিল্পে
পৃথিবী জুড়ে বার্ষিক রাজস্বের পরিমান ৬০ বিলিয়ন ডলারের চেয়ে বেশি, যেটা হলিউডকেও
হার মানায়। লন্ডন স্কুল অফ ইকোনোমিকসের এক গবেষণায় দেখা গেছে যুক্তরাজ্যের প্রতি
১০ জনের মধ্যে ৬ জন শিশুর নিয়মিতভাবে পর্নোগ্রাফি দেখা হত, তার মানে অধিকাংশ শিশুই।
প্রায় ৯০ শতাংশ শিশু যাদের বয়স ৮ থেকে ১৬ বসর,
ইন্টারনেটেই পর্নোগ্রাফি দেখেছে। আর ইন্টারনেটে অনেকভাবেই শিশুরা এই শয়তানী
জিনিসগুলো দেখতে পারে। যে কেউ যার ইমেইল আইডি আছে সে জানে কিভাবে ইমেইল করে
প্রতক্ষ ও পরোক্ষভাবে পর্নোগ্রাফির বিজ্ঞাপন দিয়ে নৈতিকতার উপর ধারাবাহিক ভাবে
বোমাবর্ষণ করা হয়। ইন্টারনেটে অনেকগুলো গেমসের সাইট রয়েছে যেগুল সুস্থ চিন্তার
গেমস খেলার সেবা প্রদান করে, কিন্তু ওখানেও যৌনবিকারগ্রস্ত সাইটগুলোর বিজ্ঞাপন
থাকে। শীর্ষস্থানীয় দশটি সমীক্ষা রিপোর্টমতে কমপক্ষে ২৬ টি কার্টুন চরিত্র রয়েছে
যেগুলো পর্ণসাইটগুলর সাথে লিঙ্ক করা, আর এইভাবেই শিশুদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে যৌনবিকারগ্রস্ত
কন্টেন্টগুলো।
পীড়াদায়ক পরিসংখ্যানঃ
১। প্রায় ৮৯ শতাংশ যুবক-যবতী চ্যাটরুমে যৌন
সংসর্গের প্রস্তাব পেয়ে থাকে।
২। ঐ শিশুদের শতকরা ৭৩ শতাংশের ক্ষেত্রে ইন্টারনেট
ব্যবহার বা অনুসন্ধান করার সময় অশ্লীলতা প্রকাশিত হয়েছে, বাকি ২৭ শতাংশের ক্ষেত্রে
হয়েছে কোন ইমেইল খুলতে অথবা ইমেইলে কোন লিঙ্কে ক্লিক করতে কিংবা ইনস্ট্যান্ট মেসেজ
খোলার সময়।
৩। শতকরা ৬৭ শতাংশ হয়েছে বাড়িতে ইন্টারনেট ব্যবহার
করার সময়, বাকি ১৫ শতাংশ স্কুলে, ৩ শতাংশ লাইব্রেরিতে আর বাকিগুলো হয়েছে বন্ধুবাড়ি
কিংবা অন্য কোথাও।
৪। আর তাদের সামনে যে ছবিগুলো প্রকাশিত হত অধিকাংশ
ছিল নগ্ন এবং তার ৩২ শতাংশ ছিল সেক্সুয়াল অ্যাক্ট বা রতিক্রিয়া।
৫। ওয়েব সার্চ বা সার্চইঞ্জিনগুলো হচ্ছে এ জাতীয়
জিনিসগুলো ছড়ানোর প্রধান মাধ্যম( ৪৭ শতাংশ)
৬। যেসব শিশুদের উপর জরিপ চালানো হয়েছে তাদের ব্যবহারের
শতকরা ২৬ ভাগ ক্ষেত্রে দেখা গেছে তারা ঐ
সাইটে বা ঐরকম আরেকটি সাইটে “mouusetrapped”১ হয়ে গেছে। (১ একটা প্রোগ্রাম যার মাধ্যমে কাউকে বারবার একই সাইটে
থাকতে বাধ্য করা হয়, এমনকি ঐ ট্যাব ক্লোজ করলেও অটোমেটিকভাবে ঐ সাইটের নতুন ট্যাব
খোলা
হয়)
ইন্টারনেট-শয়তানের হাতিয়ার
শয়তান আমাদের স্পষ্ট ও প্রকাশ্যা শত্রু। ইন্টারনেট
বা যেকোনো মাধ্যমে সে মুমিনগণ এবং তাদের সন্তানদের নৈতিকতা, বিশ্বাস ও সম্মানকে
কলুষিত করতে নিজেই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। কুরআন-কারীমে আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন বলেছেন “
শয়তান তোমাদের অভাব-অনটন দিয়ে ভীতি প্রদর্শন করে আর অশ্লীল কর্মে(ফাহি’শাহ) লিপ্ত
হতে আদেশ দেয়।”( সূরা ২:২৬৮)
ফাহিশাহ শব্দের ব্যাখ্যাঃ
ভাষাগতভাবে ফাহি’শাহ শব্দের অর্থ হচ্ছে “সীমালঙ্ঘন
বা নিদারুন দুষ্কর্ম” এমন কোন জিনিস যেটা সীমার বাহিরে এবং অতিশয় নোংরা, অশুভ, অনৈতিক,
অশ্লীল, বিশ্রীরকম অশোভন, এমন কোন পাপ বা অপকর্ম যা অতীব নোংরা; ব্যভিচার অথবা
অবৈধ রতিক্রিয়া।
ইন্টারনেট ব্যবহারকারী সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ
সুবহানাল্লাহি তাআ’লার দৃষ্টিগোচরে থেকেও কবিরা গুনাহের স্তুপে পড়তে পারে, কারন
এটা হচ্ছে ফাহি’শাহ এবং যে কাজগুলো মানুষকে ফাহি’শাহতে লিপ্ত করে তার পসরা। আর শয়তানের
প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে মানুষের সর্বোচ্চ সংখ্যাকে জাহান্নামের দিকে প্ররোচিত করা, বনী
আদামের সাথে তার যুদ্ধ সে প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছে( ঈর্ষাপরায়ণ হয়ে)। আল্লাহ
সুবহানাল্লাহি তাআ’লা আমাদের এবং আমাদের বংশধরদের কে হেফাযত করুন।(আমীন)
মনস্তাত্ত্বিক প্রভাবঃ
দীর্ঘসময়ধরে অথবা বারবার পর্নোগ্রাফিক দেখাটা
শিশুদের জন্য ইমান ধ্বংসকারী এবং মনের উপর দীর্ঘস্থায়ী গুরুতর আঘাত, যেটা তাদেরকে
মানসিক এবং আচরণগত জটিলতার দিকে পরিচালিত করে। যে কেউ অনুধাবন করতে পারে যে,
শিশুদের স্মৃতিতে তাদের দেখা নোংরা ছবি এবং ভিডিওগুলো থেকে যায়। যখন এই “মন্দ বীজ”
যখন শিশুদের নিষ্পাপ হৃদয়ে রোপণ করা হয় তখন ফল হয়ে এমন যুবক বেরিয়ে আসে যারা যৌন
বিকারগ্রস্ত, উচ্ছৃঙ্খল, ব্যভিচারী, মানসিকভাবে অপরিপক্ক, নীতিভ্রষ্ট মুসলিম এবং
নিজেদের পাপের সাথে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত।
আমদের সুপারিশসমূহঃ
ফাহি’শাহ
বা এজাতীয় কাজের(বিশেষভাবে ইন্টারনেট থেকে উদ্ভূত) ভয়াল থাবা থেকে আমাদের ঘর সুরক্ষিত, এটা নিশ্চিত
করতে মা-বাবাকে সক্রিয় ভুমিকা পালন করতে হবে। আমাদের মতামতগুলো নিম্নোলিখিত করা
হল।
১। থাকা ও খাওয়ার বড় ঘর ছাড়া অন্যকোন কক্ষে
ইন্টারনেটের সংযোগ না রাখা এবং কম্পিউটার এমনভাবে সেট করা যাতে কক্ষে প্রবেশ করার
সময় মনিটর নজরে আসে।
২। শিশুদের জন্য ইমেইল আইডি কিংবা ফেসবুক, টুইটার,
এমএসএন ও ইয়াহুতে অ্যাকাউন্ট থাকাটা অপ্রয়োজনীয়। ইউটিউবের ব্যবহারও পর্যবেক্ষণ করা
উচিৎ।
৩। কোনভাবেই শিশুদের চ্যাটরুম ব্যবহার করতে না
দেয়া।
৪। শুধুমাত্র কোন দায়িত্বশীলের তত্ত্বাবধানে
ইন্টারনেট ব্যবহার করতে দেয়া।
৫। ঘরে নিজের শিশুর জন্যে কিছু সাইট বুকমার্ক করে রাখা উচিৎ এবং শুধু ঐ
অনুমোদিত সাইটগুলো ব্যবহার করতে দেয়া। অ্যাড্রেস বারে তাদের টাইপ করার সুযোগ না
দেয়া।
৬। ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার সেটিংস্ পরিবর্তন করে
অশ্লীল অ্যাডাল্ট সাইটগুলো ব্লক করে দেয়া।
৭। সফটওয়ার ইন্সটল (internet protection software)
করে ইন্টারনেটকে শিশুদের জন্যে উপযোগী করে তোলা- যেটা অনলাইনে বিনামূল্যে পাওয়া
যায়।
৮। যেসব সাইটগুলোতে ভিজিট করা হয়েছে তার ইতিবৃত্ত যাতে মুছে ফেলা না যায় সেটা
নিশ্চিত করা।
সতর্কীকরণঃ
ইন্টারনেট যে বিপত্তি নিয়ে আমাদের ভবিষ্যৎ- আমাদের
শিশুদের কাছে আবির্ভূত হচ্ছে, দয়া করে আমরা সেটাকে অবজ্ঞা না করি। যদি করি সেটা
হবে অযোগ্য ও দায়িত্বজ্ঞানহীন অভিভাবক হওয়ার শামিল। ধরাযাক ৫০০ পৃষ্ঠার একটি
বিশ্বকোষ যার ৫০ পৃষ্ঠা অশ্লীলতায় ভরে আছে, এরকম একটি বই আমরা শিশুদের হাতে তুলে দিলাম
আর প্রত্যাশা করলাম ঐ ৫০ পৃষ্ঠা তাদের সামনে উন্মোচিত হয়নি, ব্যপারটা কি যৌক্তিক?
বিচক্ষন পিতামাতা অবশ্যয় শিশুর হাতে দেয়ার আগে ঐ ৫০টি পৃষ্ঠা সরিয়ে ফেলবে অথবা
তাদের পাশে বসে এটা নিশ্চিত করবে যে, প্রয়োজনীয় ছাড়া ক্ষতিকর কোন কিছু যেন তাদের
দৃষ্টিতে না আসে।
আসুন জগতসমূহের মালিক আল্লাহ সুবহানাল্ললাহি
তা’য়ালার কাছে এই দোয়া করি যাতে তিনি আমাদের এবং আমাদের শিশুদেরকে চারপাশে ঘিরে
থাকা ফাহি’শাহ এবং ফিতনা থেকে রক্ষা করেন এবং শয়তানের ফাঁদ থেকে আমাদের মুক্ত
রাখেন। আমীন
মূল লেখাঃ kalamullah.com থেকে সংগৃহীত।
অনুবাদঃ আল মালহামা অনুবাদক টিম কতৃক অনূদিত