তাদের জন্য কত বড় পরিতাপের বিষয়
যারা সুযোগকে নষ্ট করে!
১) আত্নীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করাঃ “যে ব্যক্তি আশা করে যে তার রিযিক বৃদ্ধি পাক এবং তার জীবন
দীর্ঘ হোক, সে যেন তার আত্নীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে।”(আল-বুখারি এবং মুসলিম)
২) মহান দুই হারামে(মক্কা এবং মদিনা)বেশি বেশি সালাত আদায়
করাঃ “আমার মসজিদে সালাত পড়া অন্য
যেকোন মসজিদে হাজার বার সালাত পড়ার চেয়ে উত্তম, তবে মসজিদুল হারাম(মক্কা) ব্যতিত, এবং মসজিদুল হারামে
সালাত পড়া অন্য যেকোন মসজিদে একলক্ষ বার সালাত পড়ার চেয়ে উত্তম।”(আহমদ এবং ইবনে মাজাহ)
৩) জামাতে সালাত আদায় করাঃ “জামাতে সালাত আদায় করা একাকী সাতাশ বার সালাত করার চেয়ে
উত্তম”(আল-বুখারি এবং মুসলিম)
৪)ফজর এবং ইশার সালাত জামাতে আদায়
করাঃ “ যে ব্যক্তি ইশার সালাত জামাতে আদায়
করলো সে যেন অর্ধেক রাত্রি সালাত পড়লো। সে ব্যক্তি যে ফজরের সালত জামাতে পড়ল, এটা এমন যেন সে সারা রাত্রি সালাত পড়লো।”(ইমাম মালিক বুর্ণিত)
৫) বাসায় নফল সালাত আদায় করাঃ “একজন মানুষের প্রকাশ্য ইবাদতের চাইতে নিভৃত ইবাদত ততোটাই উত্তম
যেভাবে নফল ইবাদতের চাইতে ফরজ ইবাদত উত্তম।”(আল-বাইহাকী, এই হাদীসকে আলবানি
সহীহ বলেছেন) “একজন ব্যক্তির সবচেয়ে উত্তম
সালাত হচ্ছে তার বাড়িতে পড়া সালাত, তবে ফরজ সালাত
ব্যতিত।”(আল-বুখারি এবং মুসলিম)
৬) জুমার দিনের কিছু আমলঃ “যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করে(তার মাথা পরিষ্কার করে এবং বলা হয় যেঃ তার স্ত্রীর সাথে
সহবাস করে যাতে করে সে জুমার দিন নিজের দৃষ্টিকে আনত রাখতে পারে), তারপর প্রথম খুতবার পূর্বে সবার আগে গাড়িতে না চড়ে পায়ে
হেঁটে মসজিদে উপস্থিত হয়, ইমামের পাশে বসে, কথা না বলে ইমামের কথা মনযোগের সাথে শুনে – প্রত্যেক কাজের জন্য আল্লাহ তাকে এক বছর রোজা রাখা এবং
সালাতে দড়ানোর সওয়াব দিবেন।”(আহল আস-সুনান)
৭) সালাতুল ইশরাকঃ “যে ব্যক্তি জামাতে আল-ঘাদাহ(অর্থাৎ ফজরের সালাত)পড়ে, তারপর সূর্য উদয় না হওয়া পর্যন্ত আল্লাহর যিকিরে মশগুল থাকে, অতপর দুই দুই করে চার রকা’আত সালাত পড়ে, তার জন্য আছে একটি
পূর্ণাঙ্গ হজ্জ এবং উমরার সওয়াব (রাসূল সঃ এর গুরুত্ব
বোঝানোর জন্য পূর্ণাঙ্গ শব্দটি তিনবার ব্যবহার করেছেন)।”(আত-তিরমিদি, আলবানী হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন)
৮) মসজিদে বয়ানে যোগদান করাঃ “যে ব্যক্তি কিছু ভালো কথা শিখতে অথবা শিখাতে মসজিদে যায়
তাকে আল্লাহ তায়ালা হজ্জ পূর্ণকারী ব্যক্তির সওয়াব দিবেন।”(আত-তাবারাণী, আলবানী কর্তৃক সহীহ স্বীকৃত)
৯) রমজান মাসে উমরাহ পালন করাঃ “রমজান মাসে উমরাহ করা আমার সাথে হজ্জ করার সমান।”(আল-বুখারী)
১০) বাধ্যতামূলক সালাত মসজিদে
পড়াঃ “যে ব্যক্তি পবিত্র অবস্থায়
ফরজ সালাত জামাতের পড়ার উদ্দেষ্যে ঘর ত্যাগ করে, তার সওয়াব ইহরাম অবস্থায় থাকা হজ্জ পালনকারী ব্যক্তির মত(অর্থাৎ সে হজ্জের সময় ইহরামে সময় ব্যয়ের মত অনুরুপ সওয়াব পাবে”। (আবু
দাউদ, আলবানি হাদিসিটিকে সহিহ বলেছেন)। সুতরাং কারো উচিত মসিজিদে অজু করার চাইতে
বাড়ী থেকেই অজু করে বেরোনো, অবশ্য জরুরত ব্যতীত।
১১) জামাতের সালাত গুলোতে প্রথম
কাতারে থাকাঃ ‘ ইরবাদ বিন সারিইয়াহ, আল্লাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট হোক, বলেনঃ “আল্লাহর রাসূল (সঃ) প্রথম কাতারের লোকদের
জন্য তিনবার ক্ষমা চাইতেন এবং দ্বিতীয় কাতারের লোকদের জন্য মাত্র একবার।” (আন-নাসাঈ এবং ইবনে-মাজাহ) “আল্লাহ এবং তার ফেরেশতারা প্রথম কাতারের
লোকদের জন্য রহমত ও দোয়া করেন।”(আহমদ,)
১২) মদিনায় মসজিদুল কুবাতে সালাত
পড়াঃ “যে ব্যক্তি ঘরে নিজেকে পবিত্র
করে অতঃপর কুবা মসজিদে আসে এবং এতে সালাত পড়ে, তাকে আল্লাহ উমরার সওয়াব দিবেন।”
(আন-নাসাঈ এবং ইবনে-মাজাহ)
১৩) মুয়াজ্জিন যা বলে তা বলাঃ “তারা(মুয়াজ্জিন)যা বলে তা বল, এবং যখন তুমি শেষ কর, চাও এবং তোমাকে দেওয়া হবে।”(আবু-দাউদ এবং আন-নাসাঈ) এটা হচ্ছে দোয়া যখন
মুয়াজ্জিনের পরে আযানের পূনরাবৃত্তি করা শেষ কর।
১৪) রমজান মাসে রোজারাখা এবং
পরবর্তী সাওয়াল মাসে ছয় রোজা রাখাঃ
“যে
ব্যক্তি রমজানে রোজা রাখে এবং তার পরবর্তী সাওয়াল মাসেও ছয়দিন রোজা থাকে, এটা এমন যেন সে সবসময় রোজা থাকে।”(মুসলিম)
১৫) প্রত্যেক মাসে তিনদিন রোজা
থাকাঃ “যে ব্যক্তি প্রত্যেক মাসে
তিনদিন রোজা থাকে, এটা সবসময় রোজা থাকার
মত।”(আত-তিরমিজি) পবিত্র কোর’আনের একটা আয়াতে বলা
হয়েছে, যে ব্যক্তি একটা ভালো কাজ করে
আল্লাহ তাকে তার দশগুন পুরুষ্কার দেবেন।”
একদিন
সমান দশদিন।
১৬) রোজা ভাঙ্গার জন্য খাবার
দেওয়াঃ “যে ব্যক্তি কোন রোজাদার
ব্যক্তিকে ইফতার করায়, সে রোজাদার ব্যক্তির
রোজার সওয়াব লাভ করবে, কিন্তু রোজাদার
ব্যক্তির সওয়াব কোন অংশে কমানো হবেনা।”(আত-তিরমিজি এবং ইবনে-মাজাহ)
১৭) লাইলাতুল ক্বদরে সালাতে
দাড়ানোঃ “লাইলাতুল ক্বদর এক হাজার
মাসের চাইতে উত্তম।”(কুর’আন-৯৭;৩) যেটা প্রায় তিরাশি
বছর ইবাদতের চাইতে উত্তম।
১৮) জিহাদঃ
“আল্লাহর রাস্তায় সারিবদ্ধভাবে
দাঁড়ানো একজন ব্যক্তির মর্যাদা ষাট বছর ইবাদাতের চাইতে উত্তম।”(আল-হাকিম, আলবানী হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন) এটা হচ্ছে শুধু আল্লার রাস্তায় সারিবদ্ধভাবে দাড়ানোর জন্য, সুতারাং সে ব্যক্তির মর্যাদা কেমন হবে যে আল্লাহর রাস্তায়
দিনের পর দিন, মাসের পর মাস এবং বছরের পর জিহাদ
করছে?
১৯) রিবা-তঃ “যে ব্যক্তি আল্লাহর
রাস্তায় একদিন ও একরাত পাহারা দেয়ার দায়িত্ব নেয়(মুসলিম ভুখন্ডের সীমানায় যেখানে শত্রু আসার সম্ভাবনা রয়েছে), আল্লাহ তাকে একমাস রোজা রাখার এবং সালাত পড়ার সওয়াব দেবেন, এবং যে ব্যক্তি এ অবস্থায় মারা যায় সে অনুরুপ সওয়াব পেতেই
থাকে, এবং তাকে আরো দেওয়া হবে
জান্নাত এবং আল-ফাত্তান(আল-ফাত্তান হচ্ছে কবরের
শাস্তি) থেকে নিরাপদ করা হবে।”(মুসলিম)
২০) জিলহাজ্ব মাসের প্রথম দশদিনের ভালো
আমলঃ “এমন কোন দিন নেই যে দিনগুলোতে
করা ভালো আমল আল্লাহর কাছে জিলহাজ্ব মাসের
দশদিনের চেয়ে বেশি প্রিয়।” তারা বলল, “হে রসূল(সঃ), এমনকি আল্লাহর
রাস্তায় জিহাদও?” তিনি বললেন, “এমনকি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও না, তবে সে ব্যক্তি বাদে যে সম্পদ নিয়ে বের হয় এবং এর কোনটা
নিয়ে ফিরে আসে না(জীবন ও সম্পদ)।” (আল-বুখারী)
২১) কোর’আনের সূরাগুলো ঘন ঘন পাঠ
করাঃ “ক্বুল হুয়াল্লাহু আহ্বাদ” হচ্ছে কোর’আনের তিন ভাগের এক
ভাগ এবং “ক্বুল ইয়া আইয়ুহাল কাফিরুন” হচ্ছে কোর’আনের চার ভাগের এক
ভাগ।(আত-তাবারাণী, আলবানী একে হাসান
বলেছেন)
২২) আল-ইস্তিগফারঃ “যে ব্যক্তি বিশ্বাসী নারী এবং পুরুষের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা
করে, আল্লাহ প্রত্যেক বিশ্বাসী
নারী ও পুরুষের জন্য(যাদের জন্য সে দোয়া
করেছে) তার খাতায় একটা করে সওয়াব
লিখেন।”(আত-তাবারাণী, আলবানী হাদীসটি সহীহ
বলেছেন)
২৩) মানুষের প্রয়োজন পূরণ করাঃ “আমার কাছে কোন মুসলিম ভাইয়ের সাথ(তার প্রয়োজন পুরা করার উদ্দেশ্যে) হাঁটা মুসজিদে একমাস ইতিকাফে থাকার চেয়ে বেশি প্রিয়।” (ইবনে আবি দুনিয়া,
একে
আলবানী হাসান বলেছেন)
২৪) যিকিরঃ “আর আমি বলি ‘সুবহান আল্লাহ, ওয়াল হামদুলিল্লাহ
ওয়া লা ইলাহা ইল্লা আল্লাহু ওয়া’ল্লাহু আকবার’ এটা আমার কাছে তার থেকে অধিক প্রিয় যার উপর রবি উদিত হয়েছে।” (মুসলিম)
“ যে ব্যক্তি বাজারে প্রবেশ করে
এবং বলেঃ ‘লা ইলাহা ইল্লা আল্লাহু
ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল
হামদু ইউহই ওয়া ইউমিইতু ওয়া হুয়া হাইয়ুন লা ইয়ামুত, বি ইয়াদিহিল খাইর, ওয়াহুয়া আলা কুল্লে
শাইয়িন ক্বাদির’(আল্লাহ ব্যতিত ইবাদের
উপযুক্ত আর কেউ নেই, তার কোন শরিক নেই, সকল প্রশংসা এবং ক্ষমতা একমাত্র তার, তিনিই জীবন সৃষ্টি করেন এবং তিনিই মৃত্যু ঘটান, তিনি চিরঞ্জীব,সকল ভালো তারই হাতে, তিনি সবার উপরে।)
আল্লাহ
তার জন্য দশলক্ষ নেকি লিখবেন, তার দশলক্ষ গুনাহ মাফ
করে দেবেন, এবং তার সম্মান দশলক্ষগুন
বাড়িয়ে দেবেন।”(আত তিরমিজি, এই হাদীসকে আলবানী সহীহ বলেছেন) আল্লাহর স্মরনে আরো কত দোয়া আছে যেগুলো পড়লে আল্লাহ আমাদের
অসংখ্য পুরষ্কার দেবেন।
“আল্লাহর দুইটা রহমত থেকে
অধিকাংশ মানুষ বঞ্চিত হয় তা হল ভাল স্বাস্থ এবং অবসর সময়।”(আল-বুখারী)
মূল লেখাঃ সুলায়মান ইবনে সালিহ
আল-খারাশি
অনুবাদঃ আল মালহামা অনুবাদক টিম কতৃক অনূদিত