“..সুতরাং,
তোমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে লড়ো, তখন, যখন তোমার পক্ষে ইচ্ছাপূরণ করা সম্ভব।
মানুষের মন কিছুতেই ভরে না। তাই ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষাকে সুযোগ দেওয়ার অর্থ হলো –
এক আকণ্ঠ তৃষ্ণার্ত লোকের সমুদ্র থেকে পানি খাওয়ার মতো। সে যতো বেশি পানি
খায়, ততোই তার পিপাসা বাড়তে থাকে, কারণ সমুদ্রের নোনা জলে এই পিপাসা কখনোই
মেটার নয়। রোমানদের দেখো, তারা সবরকম খাবার আর মিষ্টি খেতো। কোনোটা বাদ
দিতো না। একসময় এমন অবস্থা হলো যে তাদের খাবারের রুচিই চলে গেলো। তখন তারা
উপবাস থাকতে শুরু করলো, যাতে আবার খাবারে রুচি ফিরে পায়! তেমনি করে, তারা
যৌনমিলনেও এতো বেশি অভ্যস্ত হয়ে পড়লো যে একটা সময়ে নারী দেখলেই তাদের
ঘেন্না হতে লাগলো! তখন তারা শহর ছেড়ে দূর-দূরান্তে চলে যেতো, এরপর নারীর
প্রতি স্বাভাবিক আকর্ষণ ফিরে এলে শহরে ফিরে আসতো। পশ্চিমারা তো এখন যৌনতাকে
এতো সস্তা করে ফেলেছে যে খাদ্য, পানীয়, অক্সিজেনের মতো “যৌনমিলন”ও এখন
সর্বত্র বিরাজমান! কিন্তু ফলস্বরূপ কি দেখা যাচ্ছে? অগণিত ধর্ষণের কাহিনী,
যৌনতার কারণে ছড়িয়ে পড়া নানান রকম রোগ, ইত্যাদি। এর কারণ হলো, মানুষের
খায়েশ কখনো মেটে না। আকাঙ্ক্ষার কোন শেষ নেই। সাধ-আহ্লাদকে যেই না একটুখানি
জায়গা দেবে, তারা আরও মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে।
যখন তুমি তোমার আত্মাকে দিতে থাকবে, তোমার আত্মার চাওয়া বাড়তেই থাকবে। আর যখন একে দমিয়ে রাখা হবে, তখন সে অল্পেই খুশি থাকবে।
জাবির
(রা) একদিন বাজারের দিকে যাচ্ছিলেন। উমার (রা) তাঁকে দেখে জিজ্ঞেস করলেন,
“কোথায় যাচ্ছো জাবির?” তিনি উত্তর দিলেন, “আমার খুব মাংস খেতে ইচ্ছা করছে,
তাই মাংস কিনতে যাচ্ছিলাম।” উমার বললেন, “হে জাবির! যখনই তোমার কোন কিছু
পেতে ইচ্ছা করে, তুমি কি সেটা কিনে ফেলবে?”
একদিন উমার
(রা) এর সামনে কিছু খাবার রাখা হলো, আর তিনি তা দেখে কাঁদতে শুরু করলেন।
তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো, “আপনি কেন কাঁদছেন, হে আমীরুল মু’মিনীন?” (সে সময়
তিনি মুসলিম জাহানের খলিফা ছিলেন।) তিনি বললেন, “আমার ভয় হচ্ছে যে কেয়ামতের
দিনে আমাকে বলা হবে,
যেদিন
কাফেরদেরকে জাহান্নামের কাছে উপস্থিত করা হবে সেদিন বলা হবে, তোমরা
তোমাদের সুখ পার্থিব জীবনেই নিঃশেষ করেছ এবং সেগুলো ভোগ করেছ সুতরাং আজ
তোমাদেরকে অপমানকর আযাবের শাস্তি দেয়া হবে; কারণ, তোমরা পৃথিবীতে অন্যায়
ভাবে অহংকার করতে এবং তোমরা পাপাচার করতে। [সূরা আহকাফ: আয়াত ২০]“
সুতরাং,
প্রবৃত্তিকে দমন করা এবং দুনিয়াবি ভোগ-বিলাসিতা-আরাম-আয়েশ থেকে দূরে থাকা
আমাদের প্রত্যেকের জীবনের লক্ষ্য হওয়া উচিত। কেননা দুনিয়াবি শখ-আহ্লাদকে পা
দিয়ে পিষে ফেলার আগে মানুষের আত্মা কক্ষণো ওপরে উঠতে পারে না। যে আত্মা
ইতিমধ্যে তার খাহেশাতের কাছে, তার সাধ-আহ্লাদের কাছে বন্দী হয়ে গেছে, সে
কোনদিন যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুর মোকাবেলা করতে পারবে না। তাই, তুমি যদি
আল্লাহর রাহে চলতে চাও, নিজেকে থামাও!
দুঃখজনক হলেও
সত্যি, এসব জ্ঞান কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে দেওয়া হয় না। চরিত্র গঠনের শিক্ষা,
আদব-কায়দা এসব এখন আর শেখানো হয় না। এগুলো শেখানোর আলেমরাই আমাদের মাঝে
নেই। এমনকি আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয়েও এগুলো শেখানো হয় না। কোন শরীয়াহ কলেজে
যাও – এগুলো পাবে না। আদব আখলাকের শিক্ষা, আত্মাকে গড়ে তোলার শিক্ষা,
নফসের পবিত্রকরণের শিক্ষা – এসব কোথাও নেই।
তাই তুমি
দেখবে, আজকাল অনেকে আছে যারা কতো কিছু মুখস্থ করে ফেলেছে, মাশাআল্লাহ। হয়তো
অনেক বই আর হাদীসের গ্রন্থ পড়েছে। রিয়াদুস সলেহীন, রাওয়াদুন নযীর, লাইল
আল-আওতার, সুবুস সালাম, ফাতহুল বারি, সব তার পড়া। কিন্তু সে কখনো নফল রোজা
রাখে না, কিয়ামুল লাইলে দাঁড়ায় না! আরাম-আয়েশের একটি সুযোগকেও সে হাতছাড়া
করে না। তাই এতোকিছু সত্ত্বেও, তার অন্তর আসলে মৃত। কারণ, তার অন্তর
অসুস্থ। সে নিজের (মনের) যত্ন নেয় নি। সে নিজের সাধ-আহ্লাদের লাগামকে … আমি
আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করি!”
মূল লেখাঃ [শায়খ আব্দুল্লাহ আযযামের (রাহিমাহুল্লাহ) আত-তারবিয়াহ আল জিহাদিয়াহ ওয়াল বিনা; ১/৩৬৭-৩৬৮]
অনুবাদঃ Collected From A sister