পরম করুনাময়, দয়ালু আল্লাহর নামে।
“... একটি প্রজন্ম গঠনে মায়ের ভুমিকা অনেক । সন্তান পালনে মা যত ভাল হবে, উম্মাহ তত সফলভাবে তৈরি হবে । আর ততই ভাল বীর তৈরি হবে । আপনি এমন কোন মহান লোক পাবেন না যেখানে তার পেছনে একজন মহান নারীর অবদান নেই, যার ব্যক্তিত্বে তার মায়ের কিছু বৈশিষ্ট্যের ছাপ থেকে যায় তার দুধপান ও তার উষ্ণতার বন্ধনে আশ্রয় নেয়ার মাধ্যমে ।
বেশিরভাগ মানুষই তার মায়ের সাথে থাকা
সেই উজ্জ্বল স্মৃতিগুলো মন থেকে মুছে
ফেলতে পারে না । শিরায় শিরায় প্রবাহিত ছোটবেলার সেসব
অসাধারন স্মৃতি তার মনে গভীর দাগ কাটে এবং সেসব সে গভীর শ্রদ্ধা ও গর্বভরে স্মরণ
করে । সে তার মায়ের সরল সহজ কথাগুলো স্মরণ
করে যা তার উদ্দেশ্য অর্জনের পথে মাইলফলক ও পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করে ।
তাকে তার মা জীবনের দীর্ঘ সময় ধরে যে
সুবিশাল ছায়া দিয়ে রেখেছিল, যে আবেগময় ভালবাসা দিয়ে পালন করেছিল, তাতে
আশ্রয় নিতে হয় । মনে জন্ম নেওয়া এসব বাস্তবতা তার
ব্যক্তিত্বের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে যায় যা সে কখনোই সরিয়ে দিতে পারে না যদি না সে
মানবতা বিবর্জিত হয় ।
এজন্যই এই অনুগ্রহকে মনে রেখে তাদের
অনুগ্রহের প্রতিদান দেয়া ইসলামে ফরজ করা হয়েছে যা সরাসরি তাওহিদের সাথেই এসেছে, “...তোমার প্রতিপালক নির্দেশ দিয়েছেন
যে তোমরা তিনি ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করবে না, এবং
পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করবে ...।” (সুরাঃ আল-ইসরা;
২৩) এবং তাদের অবাধ্যতা সরাসরি কুফরির সাথে এসেছে।
মাকে সম্মান করা ইসলামের উপরের ধাপের
এবং একটি বড় মাপের ইবাদত । সহীহ হাদিছে আছে যে, এক ব্যক্তি রসুলুল্লাহ (সঃ) এর নিকট এসে বলল, “হে আল্লাহর নবী, কে আমার সবচেয়ে বেশি দয়ার্দ্র
আচরনের উপযুক্ত?” তিনি উত্তর দিলেন, “তোমার মা ।” লোকটি জিজ্ঞাসা করল, “তারপর কে?” তিনি
উত্তর দিলেন, “তোমার মা ।” লোকটি
আবার জিজ্ঞাসা করল, “তারপর কে?”
তিনি উত্তর দিলেন, “তোমার মা ।” লোকটি
আবার জিজ্ঞাসা করল, “তারপর কে?” তিনি
উত্তর দিলেন, “তোমার বাবা ।”
আমি একবার মক্কার মসজিদুল হারামের ইমাম ইবরাহীম আল-আখদারকে জিজ্ঞাসা করলাম, “পৃথিবীর সব জায়গা থেকে আগত মুসলমানদেরকে আপনি কেন
আপনার মধুর তিলাওয়াত থেকে বঞ্চিত করছেন ? আপনি কিভাবে
মদিনায় ফিরে যাওয়ার আবেদন করতে পারলেন, যখন অনেকে বলে যে
আপনার তিলাওয়াত শুনলে মনে হয় যেন সরাসরি কুরআন নাযিল হচ্ছে ।”
তখন সে উত্তরে বলল, “দুনিয়াতে আমার সম্পদ হচ্ছে আমার
দাদী এবং আমার মা এবং আমাকে অবশ্যই তাদের প্রতি আমার দায়িত্বসমূহ পূর্ণ করতে হবে ।
আমি ছাড়া এটা করার কেউ নেই ।”
আমি বললাম, “আপনি কেন
আপনার দাদীকে এখানে নিয়ে আসছেন না ?”
সে বলল, “তিনি মদিনা ত্যাগ করতে চাচ্ছেন না
যদি মদিনার বাইরে মারা যান এই ভয়ে । তার বড় ইচ্ছা আল-বাকীর কবরস্থানে সমাহিত হওয়া
।”
সত্য সত্যই ইবরাহীম মক্কার মসজিদুল
হারাম ছেড়ে মদিনার ছোট একটি মসজিদের ইমামতি শুরু করলেন, বেহেশতের সান্নিধ্যে থেকে যা তার মা
এবং দাদীর পায়ের নিচে ।”