একটা প্রশ্ন
প্রায় করা হয় “ কিভাবে একজন তার ইলম শিক্ষা, দাওয়া ও জিহাদের প্রচেষ্টার মধ্যে
সমন্বয় করবে। কোথা থেকেই বা তার প্রচেষ্টা শুরু করবে।”
এটি একটি
দুদোল্যমানতা যা দ্বীনের কাজে নিয়োজিত অনেক তরুণকে দ্বিধান্বিত করে যখন বিভিন্ন দল তাদেরকে ইলম শিক্ষা ও জিহাদের দাওয়াত
দেয়।
কেন একজন
তার গন্ডীকেই ইসলাম হিসাবে বিবেচনা করে এবং
ইসলামের এই খন্ডিত অংশ নিয়েই অন্য অংশের সাথে বিরোধে লিপ্ত হয়। আমরা কেন
আমাদের পূর্ববর্তীদের অনুসরণ করি না।
সাহাবীরা (
রাদিয়াল্লাহু আনহুম ) রাসুল ( সাল্লালাহি আলাইহি ওয়াস সাল্লাম ) এর সাথে ফজরের
সালাত আদায় করতেন। এর পর সূর্য উঠা পর্যন্ত তার শিক্ষার আসরে বসতেন। সূর্য উঠার পর জীবিকার জন্য বের হতেন। উনিই আবার দেখা
যেত, দিনের শেষাংশে কোন এক বেদুইন কে দীন শেখাচ্ছেন। এবং এর মধ্যে যদি কোন জিহাদের ডাক আসত তখন উনিই
সবার সামনে থাকতেন।
উপরের
সবগুলোর সমন্বয়েই ইসলাম এবং দ্বীন – একটি সম্পূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। এগুলো সবগুলিই
ঐশী বিধান যা রদ করার বা খন্ডিত করার কোন উপায় নেই। তারা এই দ্বীন
শিখেছিলেন মহান শিক্ষক রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহি আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট থেকে;
যিনি তাদেরকে বলেছিলেন “তোমরা আমার পক্ষ থেকে একটি আয়াত হলেও
প্রচার কর” ( সহীহ বুখারী )
তাই একজন লোক কুরআন এর একটি চ্যাপ্টার শিখবে, এরপর সে এটি তার পরিবার কে শিখাবে , তার
প্রতিবেশীকে এবং সম্ভব হলে তার কওম কে।তিনি বুঝেছেন, দিনে তিনি যে সুরাটি মুখস্ত করেছে তার চেষ্টার ফল পাওয়ার জন্য
তাকে রাতে সালাতে দাড়িয়ে তিনি যা শিখেছেন তা তার মহান রবের সামনে পড়বেন এবং তার
সাধ্যানুযায়ী ঐ সূরার শিক্ষা নিজের জীবনে কাজে লাগাবেন। তিনি তার এসব কাজের
মধ্যে এবং জীবিকার সন্ধানে প্রচেষ্টার মধ্যে কোন বৈপীরত্য খুজে পান না। কজন মানুষের জীবন আসলে সাদৃশ্যময় কাজে পরস্পর সম্পর্কযুক্ত ও পরিপূরক কাজেরই সমষ্টি। যা একটি
আরেকটির বিপরীত নয়।
এটা বলা যাবে না যে আপনি সাহাবীদের ( রাদিয়াল্লাহু আনহুম) মধ্যে এমন কেউ নাই
যিনি দীনের কোন একটি বিষয়ে বিশেষ পারদর্শিতা অর্জন করেছেন, কিন্তু সেটা হয়ত তাঁকে
অন্য কোন বিষয়ে পিছিয়ে দিয়েছে। যেমনটি খালেদ বিন ওয়ালিদ ( রাদিয়াল্লাহু আনহু ) বলেছেন
“জিহাদ আমাকে কুরআন শিক্ষা ( গবেষনা) থেকে পিছিয়ে দিয়েছে। ”
তবে এখানে কিছু পূর্বশর্ত আছে যেমন কেউ যদি দায়ীর কাজ করে সে অজ্ঞ হলে হবে না।
সে তারই দাওয়া দিবে যা সে আল্লাহ আজওয়াজ্জাল এর দীন ইসলাম সম্বন্ধে জেনেছে।
একইভাবে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে আগ্রহী ব্যক্তিকে আগে জিহাদ এর বিধি বিধান গুলি
যেনে নিতে হবে। তাকে জানতে হবে কার বিরুদ্ধে সে যুদ্ধ করছে, জিহাদ এর উদ্দেশ্যই বা
কি, কিভাবে জিহাদ করতে হবে তা। সাহাবারা ( রাজিয়াল্লাহু আনহুম ) এই দুই বিষয়ের
মধ্যে কোন বৈপরত্য পান নি। বস্তুতঃ এই সবগুলি প্রতেকটিই ছিল তাদের জীবনের অংশ।
আমরা দেখতে পাই জিবরীল ( আলাইহি ওয়াসসালাম )
রাসুলুল্লাহ ( সাল্লালাহি আলাইহি অসাল্লাম ) এর কাছে একবার মানুষের বেশে
এসেছিলেন। তিনি রাসুলুল্লাহ ( সাল্লালাহি আলাইহি অসাল্লাম ) কে ইসলাম, ইহসান এবং
ইমান সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহি আলাইহি অসাল্লাম তার
প্রশ্নের উত্তর দেন। এরপর সাহাবাদের বলেন ইনি জিবরীল যিনি তোমাদের কে দীন শিক্ষা
দেওয়ার জন্য এসেছিলেন। এগুলো সবই প্রতিনিধিত্ব করে দ্বীন কে এবং আল্লাহ
সুবহানআল্লাহ তাআলার আনুগত্যকে।
ভাল কাজ না করার পেছনে কোন অজুহাত খোজা এবং এই
অপারগতাকে জাষ্টিফাই করার চেষ্টা একটা ভুল মনোভাব। আপনার যদি কোন একটি ভাল কাজ করার সুযোগ না থাকে তবে, অন্যেরা
যারা এই কাজটা করার চেষ্টা করছে তাদের সমালোচনা না করে এবং দোষ খুজে না বেরিয়ে
তাদের সাহায্য করা, তাদের ভাল পরামর্শ দেওয়া অথবা নিদেন পক্ষে তাদের দোয়া করাই আপনার উচিত।
নিজের প্রচেষ্টা কে উত্তম আর অন্যের প্রচেষ্টাকে খাটো করে দেখার মাধ্যমে শয়তান যেন আপনাকে বিপথে পরিচালনা করতে না
পারে। আপনি হয়ত দ্বীন শিক্ষার কাজে নিয়োজিত কোন ভাইকে খাটো করে দেখছেন কারন আপনি
ভাবছেন তিনি কম গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিজেকে নিয়োজিত করে জিহাদ এর মত গুরুত্বপূর্ণ
কাজকে অবহেলা করছে। অথবা অন্য একজন ভাইকে যার সম্পর্কে আপনার
ধারনা সে দ্বীন শিক্ষায় যথেষ্ট প্রচেষ্টা না চালিয়েই জিহাদ এ যোগ দিচ্ছেন।
অথবা মাসজিদে তরুণদের মধ্যে দাওয়ার কাজে ব্যাস্ত কাউকে কারন আপনার ধারনা সে ভাল
আলেম থেকে নিজে জ্ঞান অর্জন না করেই এই কাজ করছে।
কিন্তু নিশ্চয় উপরের সব কাজই সৎ কাজের অন্তর্ভুক্ত এবং তারা সেইসব কাজই করছে
যার পিছনে আমাদের সকলেরই দৌড়া উচিত। যদি কারো কোন একটি
বিষয়ে জ্ঞানের ঘাটতি থাকে তবে প্রত্যেক দলেরই উচিত একে অন্যের পরিপূরক হিসাবে কাজ করা, যেমনটি আল্লাহ সুবহানু ওয়া তায়ালা আমাদের উপর আরোপ করেছেন।
মুমিনরা পরস্পর পরস্পরের বন্ধু হওয়া উচিত।
মূল লেখাঃ শায়েখ
সালমান আল আওদাহ
অনুবাদঃ আল মালহালা অনুবাদক টিম কতৃক অনূদিত