শায়খ ওয়াহিদ আব্দুসসালাম বালি এর “আল-খাউফ মিন আল্লাহ” লেকচার থেকে
“যারা মুমিন, তাদের জন্যে কি আল্লাহর স্মরণে এবং যে সত্য অবর্তীর্ণ হয়েছে, তার কারণে হৃদয় বিগলিত হওয়ার সময় আসেনি? তারা তাদের মত যেন না হয়, যাদেরকে পূর্বে কিতাব দেয়া হয়েছিল। তাদের উপর সুদীর্ঘকাল অতিক্রান্ত হয়েছে, অতঃপর তাদের অন্তঃকরণ কঠিন হয়ে গেছে। তাদের অধিকাংশই পাপাচারী।”[সূরা আল হাদিদ-১৬]
আল্লাহ আমাদের আমাদের জন্য কোরআন
পাঠিয়েছেন এবং
“আল্লাহ উত্তম বাণী তথা কিতাব নাযিল করেছেন, যা সামঞ্জস্যপূর্ণ, পূনঃ পূনঃ পঠিত। এতে তাদের লোম কাঁটা দিয়ে উঠে চামড়ার উপর, যারা তাদের পালনকর্তাকে ভয় করে, এরপর তাদের চামড়া ও অন্তর আল্লাহর স্মরণে বিনম্র হয়। এটাই আল্লাহর পথ নির্দেশ, এর মাধ্যমে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথ প্রদর্শন করেন। আর আল্লাহ যাকে গোমরাহ করেন, তার কোন পথপ্রদর্শক নেই।” [কুরআনঃ
৩৯-১৬]
তিনি আমাদেরকে কুরআনের মাধ্যমে
আশা ও হুমকি দিয়েছেন এবং আমাদের কাছে অত্যন্ত নিখুঁতভাবে বলেছেন যে তার বিশ্বাসী
বান্দাগণ হবেন ভীতিসম্পন্ন এবং তারা তাদের মহান রবের ভয়ে কম্পিত অবস্থায় থাকবে।
আমাদের মহান রব সুস্পষ্টভাবে বলেছেন তার
বিশ্বাসী বান্দাগণ সম্পর্কে যে, যখনি তাদের ঈমান শক্তিশালী এবং সুস্থিত হবে তারা
আরো বেশি আল্লাহর ভয়ে ভীত হবে।
ক্রদনরত
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ(রাঃ)
কে বলেছেন “আমাকে কুরআন পাঠ করে শুনাও” সে
বলল “ও আল্লাহর রাসূল, আমি কি আপনাকে তেলোয়াত করে শুনাবো যেটা আপনার কাছেই অবতীর্ণ
হয়েছে ? তিনি বললেন হ্যাঁ, কারন আমি অন্যের কাছ থেকে শুনতে পছন্দ করি” “আমি সূরা
নিসা পাঠ করছিলাম এই আয়াত আসা পর্যন্ত
“আর তখন কি অবস্থা দাঁড়াবে, যখন আমি ডেকে আনব প্রতিটি উম্মতের মধ্য থেকে অবস্থা বর্ণনাকারী এবং আপনাকে ডাকব তাদের উপর অবস্থা বর্ণনাকারীরূপে।”(আন নিসাঃ ৪-৪১)
তিনি
তখন আমাকে থামতে বললেন।আমি উনার অস্রুশিক্ত চোখ দেখতে
পেলাম” (ফাত আল বারি ৮ঃ৭১২)
আব্দুল্লাহ
ইবনে আশ-শিখখির(রাঃ) বলেছেনঃ “আমি আল্লাহর রাসুল(সাঃ) এর সাথে নামাজ পড়ছিলাম এবং আমি উনার হৃদয়
নিঙ্গড়ানো কান্নার আওয়াজ শুনতে পেলাম যেমনি করে
পানি পাত্রের মধ্যে ফুটলে শব্দ হয়”।(আবু দাঊদ,আন-নাসাই এবং তিরমিযি,অথেন্টিকেটেড বাই ইবনে খুজাইমা,ইবনে হিব্বান
এবং আল-হাকিম)
আবু বকর (রাঃ) এর কান্না
আয়শা (রা) বলেছেন, “আল্লাহর রাসুল(সাঃ)
অসুস্থতার সময় আমাকে বললেনঃ “আবু বকরকে বল নামাজ পড়াতে, জবাবে আমি বললাম, “বস্তুত
যদি আবু বকর আপনার জায়গায় ইমামতি করে লোকজন উনার
(অতিরিক্ত) কান্নার কারনে কিছুই শুনতে পাবে না”(আল-বুখারী)
আমাদের কান্না
ধার্মিক ব্যাক্তি কান্না
করে,অনুরাগী ব্যাক্তি কান্না করে, এবং বিশাসীরাও কাঁদে ।এবং এই সময় এমনও লোক আছে
যাদের একটা সম্পূর্ণ বছর চলে যায় কিন্তু তারা আল্লাহর ভয়ে তাদের দুচোখ বেয়ে এক
ফোটা জলও গড়ায় না।
ও আল্লাহ আমরা আপনার কাছে আশ্রয়
কামনা করি অন্তরের কাঠিন্যতা থেকে। ও আল্লাহ আপনার স্মরনে আমাদের অন্তর বিগলিত করে
দাও।
যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর যিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে; জেনে রাখ, আল্লাহর যিকির দ্বারাই অন্তর সমূহ শান্তি পায়। [আর
রাদ(১৩)-২৮]
“যারা ঈমানদার, তারা এমন যে, যখন আল্লাহর নাম নেয়া হয় তখন ভীত হয়ে পড়ে তাদের অন্তর। আর যখন তাদের সামনে পাঠ করা হয় কালাম, তখন তাদের ঈমান বেড়ে যায় এবং তারা স্বীয় পরওয়ারদেগারের প্রতি ভরসা পোষণ করে।" [সূরা-আনফাল-২]
তাহলে
কেন আমরা আজকে কাঁদি না ? আমরা কাঁদতে পারি না শক্ত হৃদয় এবং দুনিয়ার প্রতি আমাদের
অন্তরের আসক্তি থাকার কারনে। তাই আমাদের অন্তর শক্ত হয়ে গেছে এবং আমাদের চোখগুলো
শুকিয়ে গেছে।
আমরা
আমাদের রব থেকে দূরে সরে গেছি।আল্লাহর স্মরণে অন্তর কখনো কঠিন হয় না।তাই যার এক
সপ্তাহ চলে যায় এক ফোঁটা পানি চোখ থেকে ঝরে না তাকে এটা নিয়ে বসা উচিৎ, এটা নিয়া
চিন্তা করা এবং আল্লাহর অনুগ্রহ কামনা করা এবং নিজেকে বিনম্র করা উচিত । হয়ত তার অন্তর বিগলিত হবে এবং তার চোখ বেয়ে
অশ্রু গড়াবে। এবং যদি অন্তর সিক্ত না হয় তাহলে কুরআন
খুলে এর আয়াতসমুহ বুঝে বুঝে অত্যন্ত বিনয়ের সাথে পড়া উচিত । ফলে সে কাঁদবে ,তার অন্তরে আল্লাহর ভয় আসবে এবং তার আত্মা
বিনম্র হবে,তবেই তো সফলতা। এবং এভাবেও যদি তার অন্তর আগের কঠিন অবস্থায় থাকে,তাহলে
তার একটা অন্ধকার রুমে গিয়ে চিৎকার করে কান্না করা উচিৎ তার মরে যাওয়া অন্তরের
জন্য।
অনুবাদঃ আল মালহামা অনুবাদক টিম কতৃক অনূদিত।