পৃষ্ঠাসমূহ

পরকালে মানুষের স্তরসমূহ।



 [ উৎস: ইবনুল কায়্যিম রাহিমুল্লাহ এর পরকালে মানুষের স্তরসমূহের সংক্ষিপ্ত বর্ণনাহতে সংগৃহীত।]

ইবনুল কায়্যিম রাহিমুল্লাহ পরকালে মানুষের আবাস স্থলের বিভিন্ন স্তর ও মর্যাদার কথা উল্লেখ করেছেন, এবং এই স্তর সমূহ সংখ্যায় ১৮ টি।


সর্বোচ্চ স্তরে থাকবেন রাসূলগন (তাঁদের উপর আল্লাহ্‌ সুবহানা ওয়াতায়ালার পরিপূর্ণ শান্তি ও নিরাপত্তা বর্ষিত হোক) নবী-রাসূলগন যে তিনটি সর্বোচ্চ স্তরে থাকবেন তার মধ্যে প্রথম স্তরে থাকবেন-


১। অতি উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন পাঁচ জন রাসূল বা উলুল আজম গন:  নূহ(عليه السلام), ইব্রাহিম(عليه السلام), মুসা(عليه السلام), ঈসা(عليه السلام) এবং মুহাম্মদ ()তাঁদের উপর আল্লাহ্‌ সুবহানা ওয়াতায়ালার পরিপূর্ণ শান্তি ও নিরাপত্তা বর্ষিত হোক। অতঃপর থাকবেন; 


২।  আল্লাহ্‌ সুবহানা ওয়াতায়ালার অন্যান্য রাসূলগন, তাঁদের উপর আল্লাহ্‌ সুবহানা ওয়াতায়ালার পরিপূর্ণ শান্তি ও নিরাপত্তা বর্ষিত হোক। অতঃপর থাকবেন; 


৩। নবী/আম্বিয়া গন (যারা তাঁদের জাতি সমূহর কাছে রাসূল রুপে প্রেরিত হন নি), তাঁদের উপর আল্লাহ্‌ সুবহানা ওয়াতায়ালার পরিপূর্ণ শান্তি ও নিরাপত্তা বর্ষিত হোক। অতঃপর থাকবেন;            


৪। রাসূলগনের যোগ্য ও আন্তরিক অনুসারীগণ (আস-সিদ্দিকিন)- যারা রাসূলদের উত্তরাধিকারী, যারা তাঁদের জ্ঞান, কর্ম ও আল্লাহ্‌ সুবহানা ওয়াতায়ালার দিকে আহ্বানের মাধ্যমে রাসূলগনের আনিত দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত করেন অতঃপর থাকবেন;            


৫। ন্যায়নিষ্ঠ ইমাম/নেতা ও শাসক গন। অতঃপর থাকবেন;            


৬। যারা নিজেদের জান-মাল নিয়ে আল্লাহ্‌ সুবহানা ওয়াতায়ালার রাস্তায় সংগ্রাম ও জিহাদ করেনঅতঃপর থাকবেন;            


৭। যারা নিজেদের উপর অন্যদের প্রাধান্য দেন, মানুষের সাথে ভাল ব্যবহার করেন এবং সাদাকা করেন। অতঃপর থাকবেন;            


৮। যাদের জন্য আল্লাহ্‌ সুবহানা ওয়াতায়ালা নামায, রোজা, হাজ্জ, যাকাত ও অন্যান্য আরও সৎ কর্ম সমূহের দরজা খুলে দিয়েছেন, যা তাঁদের দ্বারা সীমিত ছিল। অতঃপর থাকবেন;            


৯। পরিত্রান প্রাপ্ত লোকসকল, যারা আল্লাহ্‌ সুবহানা ওয়াতায়ালার আদেশ-নিষেধ সমূহ মেনে চলেছেন। অতঃপর থাকবেন;


১০। যারা আল্লাহ্‌ সুবহানা ওয়াতায়ালার আদেশ সমূহ অমান্য করে গোনাহ করেছেন এবং নিজেদের উপর জুলুম করেছেন, অতঃপর আল্লাহ্‌ সুবহানা ওয়াতায়ালার  তাদের মৃত্যুর পূর্বে আন্তরিক তওবা করার সুযোগ দিয়েছেন। তাই তাঁরা আন্তরিক তওবার উপর মৃত্যু বরণ করেছেন, আর আল্লাহ্‌ সুবহানা ওয়াতায়ালা তাঁদের তওবা সমূহ মঞ্জুর করেছেন। অতঃপর থাকবেন;


১১। সেই সকল লোক যারা সৎ কর্ম করেছেন আবার গোনাহও করেছেন কিন্তু আন্তরিক তওবা করার পূর্বেই মৃত্যু বরণ করেছেন। তাসত্ত্বেও তাঁদের সৎ কর্ম সমূহ তাঁদের গোনাহ সমূহকে অতিক্রম করেছে। তাই তাঁরা সফলকাম হয়েছেন আর রক্ষা পেয়েছেন। অতঃপর থাকবেন;


১২। সেই সকল লোক যাদের সৎ কর্ম ও গোনাহ সমূহ পরস্পর সমান হয়েছে, তাই তারা জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যবর্তী স্থান (আল-আরাফ) এ স্থান পেয়েছেন; অবশেষে জান্নাতে প্রবেশ করেছেন। অতঃপর থাকবেন;


১৩। যারা দুর্দশাগ্রস্ত ও তাহাদিত পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছেন, আল্লাহ্‌ সুবহানা ওয়াতায়ালা আমাদের রক্ষা করুন ও নিরাপত্তা দান করুন; এবং এরা হোল সেই সব দুর্বল ইমানদার মুসলিম যাদের গোনাহ সমূহ তাদের সৎ কর্ম সমূহকে অতিক্রম করেছে। হাদিসের বর্ণনা অনুসারে তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবেন এবং তাদের অমল অনুযায়ী সেখানে অবস্থান করবেন অতঃপর সুপারিশ কারীর সুপারিশ ও পরম করুণাময়ের করুনায় তারা জাহান্নাম হতে বের হয়ে আসবেন। অতঃপর থাকবেন;


১৪। সেই সমস্ত লোক যারা সৎ কর্মও করেননি গোনাহও করেননি, সত্যিকার ঈমানও আনেননি আবার অবিশ্বাসও করেননি। এরাই হোল সেই সমস্ত লোক যাদের নিকট ইমানের বাণী পৌঁছায়নি, যারা মানসিক বিকারগ্রস্ত, যারা চিন্তা শক্তিহীন, যারা বধির এবং অমুসলিমদের শিশু সন্তানগণ যারা সঠিক ভাবে কিছু উপলব্ধি করার পূর্বেই মৃত্যু বরণ করেছেন। এদের ব্যাপারে ওলামা গণের মাঝে ইখতিলাফ রয়েছে এবং আটটি মত রয়েছে। তবে সর্বাধিক সঠিক মতটি হোল তারা পুনরুত্থানের দিন পরিক্ষিত হবেন এবং তাদের নিকট একজন রাসূল প্রেরন করা হবে অতঃপর যারা ইমান আনবেন তারা জান্নাতে প্রবেশ করবেন আর যারা অবিশ্বাস করবেন তারা জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবেন। কারণ আল্লাহ্‌ সুবহানা ওয়াতায়ালা ততক্ষণ পর্যন্ত কাউকে শাস্তি দেন না যতক্ষণ না পর্যন্ত তার নিকট সত্য প্রকাশিত হয় এবং সে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং অবাধ্যতা বসত তা অস্বীকার করে, আর আল্লাহ্‌ সুবহানা ওয়াতায়ালা বলেন-

وَمَا كُنَّا مُعَذِّبِينَ حَتَّىٰ نَبْعَثَ رَسُولًا

কোন রাসূল না পাঠানো পর্যন্ত আমি কাউকেই শাস্তি দান করি না। [সূরা আল-ইসরা ১৭:১৫]

অতঃপর থাকবেন;


১৫। মুনাফিক গণ, যারা বাহ্যত ইসলাম প্রদর্শন করে আর অন্তরে অবিশ্বাস তথা কুফরি করেন। এরাই জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে থাকবেন। অতঃপর থাকবেন;


১৬। অবিশ্বাসীদের (কুফফারদের) প্রধান গণ, অবিশ্বাসীদের (কুফফারদের) নেতা গণ এবং এর দিকে আহ্বান কারী গণ। অতঃপর থাকবেন;


১৭।  অবিশ্বাসীদের (কুফফারদের) অজ্ঞ ও অন্ধ-অনুসারী গণ এবং যাদের কুফরীর ব্যাপারে উম্মাহ সম্মত হয়েছেন। এবং সর্বশেষে থাকবেন;


১৮। জিন গণ, তারা তাদের কর্ম অনুযায়ী শাস্তি ভোগ করবেন অথবা পুরস্কৃত হবেন। এবং আল্লাহ্‌ সুবহানা ওয়াতায়ালা বলেন-

وَلِكُلٍّ دَرَجَاتٌ مِّمَّا عَمِلُوا ۖ وَلِيُوَفِّيَهُمْ أَعْمَالَهُمْ وَهُمْ لَا يُظْلَمُونَ

প্রত্যেকের জন্যে তাদের কৃতকর্ম অনুযায়ী বিভিন্ন স্তর রয়েছে, যাতে আল্লাহ তাদের কর্মের পূর্ণ প্রতিফল দেন। বস্তুতঃ তাদের প্রতি যুলুম করা হবে না।

[সূরা আল-আহক্বাফ ৪৬:১৯]


অনুবাদঃ আল মালহামা অনুবাদক টিম কতৃক অনূদিত