প্রশ্ন : সুরা ইউসুফের ২৪ নং আয়াত “ সেই মহিলা তার প্রতি ( অসৎ কাজের)
ইচ্ছা/ সংকল্প করেছিল এবং সেও তার ( সেই মহিলার) প্রতি ইচ্ছা করেই ফেলত /দুর্বল হয়ে পড়ত” – এর তাফসীর কি? যদি ইউসুফ (আঃ)একজন ন্যায়নিষ্ঠ / পুণ্যবান বান্দা হয়ে থাকেন এবং তিনি আল আযীযের স্ত্রীর কু প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যানই করেন, তবে কিভাবে তিনি সেই মহিলার খারাপ সংকল্পের প্রতি প্রায় দুর্বল/ আসক্ত হয়ে যেতে নিয়েছিলেন? অর্থাৎ ক্ষণিকের জন্য হলেও এ ধরণের একটা অনুভূতি কিভাবে ওনার মনে স্থান পেতে পারল?
উত্তর : সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ্ তায়ালার। আল্লাহ্ কুরআনে বলেছেন-
ইচ্ছা/ সংকল্প করেছিল এবং সেও তার ( সেই মহিলার) প্রতি ইচ্ছা করেই ফেলত /দুর্বল হয়ে পড়ত” – এর তাফসীর কি? যদি ইউসুফ (আঃ)একজন ন্যায়নিষ্ঠ / পুণ্যবান বান্দা হয়ে থাকেন এবং তিনি আল আযীযের স্ত্রীর কু প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যানই করেন, তবে কিভাবে তিনি সেই মহিলার খারাপ সংকল্পের প্রতি প্রায় দুর্বল/ আসক্ত হয়ে যেতে নিয়েছিলেন? অর্থাৎ ক্ষণিকের জন্য হলেও এ ধরণের একটা অনুভূতি কিভাবে ওনার মনে স্থান পেতে পারল?
উত্তর : সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ্ তায়ালার। আল্লাহ্ কুরআনে বলেছেন-
“ এবং নিশ্চয়ই সেই মহিলা তার প্রতি ( অসৎ কাজের) ইচ্ছা/ সংকল্প
করেছিল এবং সেও তার ( সেই মহিলার) প্রতি ইচ্ছা করেই ফেলত যদি না সে আল্লাহর পক্ষ
থেকে কোন নিদর্শন না দেখত” ( সুরা ইউসুফ, ১২:২৪) ।
আল আযীযের স্ত্রী আল্লাহকে ভয় না করে জেনে বুঝে ইচ্ছাকৃতভাবেই একটা পাপ কাজ
করার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু সেই মুহূর্তে যদি ইউসুফ (আঃ) আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন
নিদর্শন না দেখতেন, তবে আল্লাহ্ প্রদত্ত মানুষের ফিতরাহগত কারণে তিনিও ওই মহিলার পরিকল্পনার
প্রতি দুর্বল হয়ে পড়তেন। কিন্তু তিনি তা হননি। কারণ আল্লাহ্ ওনাকে তাঁর নিদর্শন
দেখিয়েছিলেন।
আবু হাতিম বলেন- “
আমি আবু উবায়দার কাছে গারিব আল কুরআন শিক্ষা করতাম। এভাবে আমি সুরা ইউসুফ এর ২৪ নং আয়াত “এবং নিশ্চয়ই সেই মহিলা তার প্রতি ( অসৎ কাজের) ইচ্ছা/ সংকল্প
করেছিল এবং সেও তার ( সেই মহিলার) প্রতি (অসৎ কাজের )ইচ্ছা করেই ফেলত” পাঠ করলে তিনি আমাকে বলেন “ এই আয়াতে এটা বুঝানো
হচ্ছে যে, ইউসুফ (আঃ) ওই মুহূর্তে আল্লাহর পক্ষ থেকে নিদর্শন
দেখেছিলেন। তাই তিনি আর ওই মহিলার ব্যাপারে কোনরুপ আকাঙ্ক্ষা করেননি”।
( আল কুরতুবি, আল- জানি’ লি আহকাম আল কুরআন, ৯/১৬৫)
আদওয়া আল বায়ান (৩/৫৮) এ আল শানকিতি বলেন যে, সুরা ইউসুফ এর ২৪ নং আয়াতের পুরো ব্যাপারটির দুই রকম ব্যাখ্যা হতে পারে।
১ম ব্যাখ্যাটি হল:
“ ইউসুফ (আঃ)ও সেই মহিলার প্রতি ( অসৎ কাজের) ইচ্ছা করে ফেলতেন”
এই কথাটি দ্বারা এটা বুঝানো হচ্ছে যে, এ ধরণের
একটা চিন্তা ওনার মনে চলে এসেছিলোই যা, তিনি সেই চিন্তা
দ্বারা প্রভাবিত হননি। বরং ওনার তাক্বওয়া ওনার অন্তর থেকে সেই পাপ কাজের ইচ্ছা/ চিন্তা সম্পূর্ণ মুছে দিয়েছিল।
তাদের মধ্যে একজন বলেন যে, মনের এ ধরণের দুর্বলতা ও সহজাত প্রবৃত্তি- এগুলো মানুষের স্বাভাবিক
ফিতরাতের অন্তর্গত। আল্লাহই মানুষকে এভাবে তৈরি করেছেন। তবে একই সাথে আল্লাহ্
তায়ালা এ ধরণের দুর্বলতা ও প্রবৃত্তিকে অন্তরের তাকওয়া দ্বারা সংযত করতে আদেশ
দিয়েছেন।কখনো মনে এ ধরণের দুর্বলতা চলে আসলে সেটাকে গুনাহ বলা যায় না। কারণ এটা
অন্তরের এমন একটা বিষয় যার উপর মানুষের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই।
হাদিসে বলা হয়েছে,
নবীজি (সঃ) ওনার প্রত্যেক স্ত্রীর সাথে ন্যায় ও ইনসাফপূর্ণ আচরণ করতেন এবং সব স্ত্রীকে সমান ভাবে সময় দিতেন। এরপরও তিনি আল্লাহর
কাছে এই বলে প্রার্থনা করতেন যে, “ হে আল্লাহ্, যেটুকু বিষয় আমার নিয়ন্ত্রনে আছে
সেটুকুর সাথে আমি এভাবে ইন্সাফ করার চেষ্টা করলাম। এর বাইরে যা আমার নিয়ন্ত্রনের
ঊর্ধ্বে তার জন্য তুমি আমাকে পাকড়াও করো না”।– অর্থাৎ নবীজি (সঃ) এখানে অন্তরের এমন প্রবৃত্তি, ইচ্ছা
আকাঙ্ক্ষার কথা বলছেন যা ওনার নিয়ন্ত্রনে ছিল না। ( আবু দাউদ, আল সুনান, হাদিস নং- ২১৩৪)
আরও পরিষ্কার করে বললে বিষয়টা হল এমন-
রোজা থাকা অবস্থায় একজন রোজাদার ব্যক্তির অন্তরে স্বাভাবিক ভাবেই ঠাণ্ডা পানীয়, খাবার- এসবের প্রতি দুর্বলতা, আকর্ষণ কাজ করে। কিন্তু তারপরও সেই রোজাদার ব্যক্তি তার তাকওয়া থেকে খাদ্য,
পানি এসবের প্রতি অন্তরের দুর্বলতা, আকর্ষণ কে
সংযত করে। রসূল (সঃ) বলেন, “ যে ব্যক্তি কোন একটা পাপ কাজের চিন্তা করল কিন্তু তা বাস্তবে
সম্পাদন করল না, তার আমলনামায় একটি নেকি লেখা হয়” [ সহিহ বুখারি, নং- ৬৪৯১, মুসলিম,
নং- ২০৭]
২য় ব্যাখ্যাটি হল:
ইউসুফ (আঃ) ওই মহিলার ন্যায় আদৌ কোন অসৎ কাজ করার কথা চিন্তা করেননি। কারণ
ওনার মনে সে ধরণের কোন চিন্তা আসার আগেই আল্লাহ্ ওনাকে তাঁর নিদর্শন দেখিয়ে দেন।
যার কারণে ইউসুফ (আঃ) এর তাক্বওয়া আরও অনেক
বৃদ্ধি পেয়ে যায়। আবু হাসান সহ আরও অনেকে এই ব্যাখ্যাটি গ্রহন করেছেন। আরবি ভাষার
রীতি অনুযায়ী আলোচ্য আয়াতের এই ব্যাখ্যাটি বেশি সঠিক।তিনি এই মত গ্রহনের কারণ
হিসেবে আল্লাহর দেখানো নিদর্শনকে উল্লেখ করেছেন।
উপরোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে সুরা ইউসুফ এর ২৪ নং আয়াত এর ব্যাখ্যা সম্পর্কে
এটা বলা যায় যে ( আল্লাহ্ সবচেয়ে ভালো জানেন)- যদি ইউসুফ (আঃ) আল্লাহর নিদর্শন না
দেখতেন তবে তিনি আল আযীযের স্ত্রীর কু প্রস্তাবের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়তেন। কিন্তু
ওই মহিলার কু প্রস্তাবের প্রতি দুর্বল হয়ে যাবার আগেই এবং কোনরুপ পাপ কাজ করার কথা
ভাবার আগেই ওনাকে আল্লাহর পক্ষ থেকে নিদর্শন দেখানো হয়েছিল। যে কারণে তিনি শুরু
থেকেই চিন্তা মনন এর দিক থেকে ছিলেন সম্পূর্ণ পবিত্র । একই সাথে, কোন খারাপ / অন্যায় কাজ বাস্তবিক ভাবে
সম্পাদন না করলে, শুধুমাত্র চিন্তা করার কারণে ইসলামে সেটিকে
পাপ/গুনাহ বলে গণ্য করা হয় না। আল্লাহ্ সর্বজ্ঞানী। তিনি ওনার নবীকে দয়া ও শান্তি
দান করুন।
----------------------------------***---------------------------------
মূল লেখাঃ শাইখ সালেহ আল মুনাজ্জিদ
অনুবাদঃ আল মালহামা অনুবাদক টিম কতৃক অনূদিত
মূল লেখাঃ শাইখ সালেহ আল মুনাজ্জিদ
অনুবাদঃ আল মালহামা অনুবাদক টিম কতৃক অনূদিত