পৃষ্ঠাসমূহ

আমাদের নারীগণঃ এই উম্মাহর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ।


আল-ক্বুরআনে সুরা আল-ক্বাসাসে মুসা (আ) এবং ফিরআউনের মধ্যে বিরোধের বিষয়টা উঠে এসেছে এবং  এই বিরোধীতাকে কেন্দ্র করে যে আয়াত এসেছে তা হলোঃ 

আর  আমারা চেয়েছিলাম যাদের পৃথিবীতে দূর্বল করে বানানো হয়েছিল তাদের প্রতি অনুগ্রহ করতেএবং তাদেরকে নেতা ও উত্তরাধিকারী করতে - [আল-কাসাসঃ ০৫]
আর ক্ষমতার এই স্থানান্তর একজন নারীকে দিয়ে শুরু হয়েছিল, যেখানে আল্লাহ বলেছেন- 

আর আমরা মুসার মায়ের কাছে অনুপ্রেরণা দিলাম এই বলে একে দুগ্ধপান করাও; তারপর যখন তার সম্বন্ধে আশংকা করো তখন তাকে পানিতে ভাসিয়ে দাও, আর ভয় করো না, দুঃখও করো না নিঃসন্দেহে আমরা তাকে ফিরিয়ে দিব তোমার কাছে , আর তাকে গড়ে তুলবো রাসুলগণের একজন করে – [আল-কাসাসঃ ০৭]

সুতরাং নারীরাই আমাদের প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে সংগ্রামের মূল কেন্দ্রবিন্দু, এবং পরিণতি হিসেবে বিজয় অথবা পরাজয় আসবে তাদের মাধ্যমেই এগুলো কোন বক্তব্য বা কবিতা নয়বরং বাস্তবতা হলো এই যে, আমাদের সবাইকে এ বিষয়ে মনযোগী হতে হবে 

কাজেই আজকে যদি আপনি এই উম্মাহর শ্রেষ্ঠ অংশের দিকে তাকান - এর পুরুষেরা কোথায় ? তারা হয়ত কারাগারে, দেশ হতে বহিষ্কৃত অথবা এই ধরণেরই কোন ভোগান্তি পার করছেন অতএব পরিবারের রক্ষণাবেক্ষণ , সন্তানদেরকে লালন-পালন , এবং দৈনিন্দন জীবনের কাজকর্ম কে দেখাশুনা করেন ? এ নারী ছাড়া আর কেউই নয়। আর আল্লাহকে ধন্যবাদ , এখন অবধি ইসলামিক দাওয়াহ যুদ্ধে জয়ী হতে পারেনি নারীদের সাহায্য ছাড়া, তাদের কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি যা তারা লঙ্ঘন করেছে, দূষণ করেছে বা দূষণের উৎসে পরিণত করেছে তা সত্বেও।

বিপত্তি বাধে সেই সময় যখন আমাদের এই উম্মাহর নারীরা সম্পূর্ণভাবে ইসলামিক নয়, যখন আল্লাহর শারীয়াহ
র সাথে সাংঘর্ষিক অনেক সামাজিক প্রতিবন্ধকতা আমাদের নারীদেরকে ঘিরে রেখেছে । উদাহরণস্বরূপ, তাদেরকে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করা, অবজ্ঞা করা, এবং তার বিরুদ্ধে জাহিলিয়্যাহর আচরণের প্রসার ঘটানো এই নির্মম বাস্তবতাই আধুনিক মুক্ত জাহিলিয়্যাহকে সেই সব বঞ্চিত নারীদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে।

তাদের এইসব অশ্লীল শয়তানী কর্মকান্ড দ্বারা তারা নারীদেরকে প্রদর্শনের বস্তু হিসেবে রুপান্তরিত করার লক্ষ্য বাস্তবায়ন করছে। এই কারণে আমাদের মধ্যে যারা দাওয়াহ
র কাজের সাথে জড়িত , আমাদের নিজেদেরকে জিহিলিয়্যাতের সেই দুইটি প্রকার থেকে মুক্ত রাখা উচিৎ - মানুষের অসততার জাহিলিয়্যাহ এবং মুক্তনীতির জাহিলিয়্যাহ । সঠিক পথ কেবল ইসলামেই আছে , যা নারীদেরকে সন্মান এবং মূল্যায়ন করে এবং তাদের শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রের অধিকারকে সুরক্ষিত করে, সেই সাথে শারীয়াহর নির্দেশাবলীর মাধ্যমে তাদের স্বত্তাধিকার, উত্তরাধিকারেরও সুরক্ষা নিশ্চিত করে

আর আমদেরকে অবশ্যই উচিৎ বিয়েতে উচ্চ মোহরানা নির্ধারণের শয়তানী বার্তার বিরুদ্ধে কঠিন প্রতিরোধ গড়ে তোলা, এবং সেই ইসলামিক স্লোগানকে প্রতিষ্ঠিত করা যত কম মোহরানা, তত বেশি কল্যাণ। যেখানে বর্তমানে অবিবাহিত ছেলে এবং মেয়েরা এমন একটা সময় পার করছে যখন তাদের বিয়ে করা কর্তব্য, সেখানে এরকম ক্ষতিকর গুপ্ত প্রতিবন্ধকগুলো  নেক কাজগুলোকে ধ্বংস করে দিতে পারে। আর এতে কোন সন্দেহ নেই যে, মোহরানা হ্রাস সেই সম্ভাবনাকে প্রতিরোধ করতে সক্ষম। একই সাথে আমাদেরকে এই নোংরা জাহিলিয়্যাহর শেকলকে ভেঙে ফেলা উচিৎ যা স্বামী-স্ত্রীকে একই সামাজিক মর্যাদার অধিকারী হওয়ার দাবি করে । এটা একটা ভিত্তিহীন শর্ত, যেখানে জয়নব বিনতে জাহাশ (রা) যিনি ছিলেন একজন ক্বুরাইশ বংশীয় অথচ তিনি বিয়ে করেছিলেন জায়েদ বিন হারিছা (রা) কে, যিনি ছিলেন একজন ক্রীতদাস......

এবং আমি এমন সব মানুষকে দেখেছি যারা তাদের কন্যাদেরকে প্রয়োজনে অবিবাহিত করে রাখবে তবু সেই  সব মুসলিমদের কাছে বিয়ে দিবে না যারা তাদের স্বদেশী অথবা স্বগোত্রীয় নয়। এই ধরণের লোকদেরকে শারীয়াহয় যালিম অভিভাবক বলা হয়েছে, এবং তাদের অসঙ্গত কাজ আর অজ্ঞতার কারণে তাদের অভিভাবকত্বও বাতিল বলে গণ্য হবে।

নারীরা আমাদের এই উম্মাহর গুরুত্বপূর্ন অংশ, এবং তার কোন ত্রুটি-বিচ্যুতি সত্যিই একটি ব্যর্থতা।  কাজেই আমাদের এই বিষয়ে সজাগ এবং যথেষ্ট মনোযোগী হওয়া উচিৎ।আমরা দেখেছি ব্যর্থতা এসেছে এমন কিছু পুরুষের জন্য যারা এই পথে দায়িত্বে অবহেলা করেছে। আর এখন অবধি আমাদের বোনদের কোন ব্যর্থতা আমরা দেখিনি । বরং আমরা শুধু দেখেছি ধৈর্য, দৃঢ়তা, বিশ্বাস এবং সত্য সংকল্প। আমাদের ফিলিস্তীনের মা-বোনেরা এক্ষেত্রে আল্লাহর এক বিস্ময় , আর তাদের কারো কারো সংগ্রাম, সংযম এবং সংকল্পের তুলনা শত পুরুষ মুজাহিদীন দিয়েও হয়না। অনুরূপভাবে আমরা দেখেছি উপসাগরীয় দেশগুলোতে নারীদের মধ্যকার সচেতনতা পুরুষদের থেকে অনেক বেশি, আর এই দ্বীনের জন্য অন্তর থেকে এত বিশুদ্ধভাবে সমর্থন আমরা পুরুষদের মধ্যেও দেখিনি । তাই সকল প্রশংসা আল্লাহ্‌র জন্য, যিনি জগতসমূহের মালিক। যেমন পাশ্চাত্যে অনারবীয় ভাইদের স্ত্রীগণের মধ্যে যে সচেতনতা দেখা যায় তার খুব সামান্যই দেখা যায় পুরুষদের মধ্যে । তেমনিভাবে আরব অভিবাসী স্ত্রীগণ, যারা সাধারণত তাদের স্বামীদের থেকে উৎকৃষ্ট এবং সচ্চরিত্র ।

আমি অনেক মুসলিম বোনের কাছে তাদের স্বামীর ধর্মীয় বিধি-নিষেধ মেনে চলার ক্ষেত্রে দুর্বলতার অভিযোগ শুনেছি। আর এই অভিযোগ আমাদের বোনেরা যে উচ্চ মর্যাদাকে ধারন করে এবং আল্লাহ্‌র অনুগ্রহে তারা যে পুরুষদের চেয়ে উৎকৃষ্টতর তা প্রমাণ করে ।  

খেয়াল রাখা  উচিৎ শয়তান এবং তার সহচারীরা আদর্শিক দ্বন্দ্বে ধার্মিক নারীদের হিজাবকে গুরুত্বসহকারে তুলে ধরছে । অতএব এটা এক অবাক করা বিষয় যে ফ্রান্সে অনেক সমস্যা থাকা সত্ত্বেও হিজাবের বিরুদ্ধে যুদ্ধকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে এবং হিজাবকে নিষিদ্ধ করার আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে। অনেক ইউরোপীয় দেশ এই নারকীয় আচরণকে অনুকরণ করছে । আপনি যদি বিভিন্ন কনফারেন্সগুলো দেখেন, যেগুলোর মূল বিষয়বস্তু এবং সার্বিক প্রচেষ্টা থাকে পারিবারিক কাঠামো ও নারীদেরকে ধ্বংস করার, তাহলে আপনি উপলব্ধি করতে পারবেন নারীরা হলো দূর্গস্বরূপ, যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই এটা এমন এক যুদ্ধ যা আমরা অবহেলা করতে পারি না ।
 
আমাদের উচিৎ নারীদেরকে শিক্ষিত করে তোলা , কারণ শিক্ষাই নারীকে ব্যর্থতার হাত থেকে রক্ষা করবে । একজন মূর্খ মহিলা তার নিজের, তার স্বামীর,পরিবারের এবং সমাজের শত্রু। আর তাদের অধিকারসমূহকেও রক্ষা করতে হবে। এটা দাঈ , আলিম এবং ধর্মভীরু পুরুষদের কর্তব্য যে, জাহিলিয় সামাজিক রীতি-নীতি থেকে ইসলামের সত্যকে উন্মোচন করা । কারণ ভিত্তিহীন সামাজিক রীতি-নীতিই হলো নারীদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত আধুনিক জাহিলিয়্যাহর হাতিয়ার ।

কেন আমরা বর্তমানে চুক্তিবদ্ধ বিয়ের কথা শুনি ? আমি এখানে এর বিধান নিয়ে আলোচনা করছি না। বরং আমি এখানে একটা অদ্ভুত বিষ্ময়কর সামাজিক আচরণের কথা বলছি, কেননা আমাদের আদর্শ হলো সবার মাঝে বিয়ের প্রসার ঘটানো ।এধরণের বিয়ের সুস্পষ্ট কারণ হল সামাজিক অবক্ষয় যাতে উচ্চ মোহরানা এবং স্বামী-স্ত্রীকে সমান সামাজিক মর্যাদার অধিকারী হওয়াকে শর্ত হিসেবে জুড়ে দেওয়া হয়েছে । কাজেই তরুণরা বিয়ে  থেকে দূরে সরে যাচ্ছে এবং অবিবাহিতই থেকে যাচ্ছে । আর স্বাভাবিকভাবেই তা বিয়ের প্রকৃত কাঠামোকে বিকৃত করার ফলাফল । এই বিকৃত কাঠামো কেবল তখনই পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসতে পারে যখন নারীরা মহান আল্লাহর আনুগত্যে মননিবেশ করবে। আর যদি তারা অন্য আর দশ জন নারীদের মত হয়, তাহলে নিঃসন্দেহে এর ফলস্বরূপ তারা বড় ক্ষতির সম্মুখীন হবে।

আমাদের মা, বোন, কন্যাদের জন্য আমাদের হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা থাকা উচিত,  আমাদের উচিত তাদের যথাযথ সন্মান এবং মূল্যায়ন করা। এবং আমাদের ধৈর্যশীল স্ত্রীদের প্রতি থাকতে হবে সর্বোচ্চ ভালোবাসা, প্রার্থনা এবং কৃতজ্ঞতা। কারণ তারা না হলে আমাদের কোন অস্তিত্বই থাকত না আর তাদের ছাড়া আমাদের সন্তানদেরও কোন ভবিষ্যৎ নেই......... 


মূল লেখাঃ শায়খ আবু কাতাদা আল ফিলিস্তিনি (হাফিজাহুল্লাহ)
অনুবাদঃ আল মালহামা অনুবাদক টিম কতৃক অনূদিত