আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি যখন বিদ্রুপ ও তামাশা শুরু হয় তখন তা
স্বাভাবিকভাবেই একজন মুসলিমের ক্রোধ ও ঘৃণা উদ্রেক করে । কিন্তু একই সাথে এ
বিষয়টি একটি শুভ লক্ষণ নিয়ে আসে, আর তা হচ্ছে কুফফারদের আসন্ন পরাজয় এর
বার্তা।
আল্লাহতালা বলেন,
“বিদ্রুপকারীদের জন্যে আমিই আপনার পক্ষ থেকে যথেষ্ট।“ (সুরা আল হিজর ১৫, ৯৫)
“যে আপনার শত্রু, সেই তো লেজকাটা, নির্বংশ।“ (সুরা আল কাউসার ১০৮,৩)
এ বিষয়ে ইবনে তাইমিয়া বলেছিলেন অনেকটা এভাবে (আল শারিম আল মাসলুল ১১৬-১১৭ অনুকরণে ইমাম আনওয়ার আল আওলাকী তার দ্যা ডাস্ট উইল নেভার সেটল ডাউন বইতে উল্লেখ করেছেন),
“অনেক নির্ভরযোগ্য মুসলিমগন (যারা অভিজ্ঞ এবং ফকীহ) বেশীরভাগ সময়ই তাদের অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন যখন তারা শামের শহর, দূর্গ এবং খ্রিষ্টানদের আবদ্ধ করে রেখেছিলেন। তারা বলেছেন যে আমরা শহর অথবা দূর্গকে মাসাধিককাল ধরে আবদ্ধ করে রেখেছিলাম, আমাদের অবরোধে তাদের কিছুই করার ছিল না, এবং আমরা প্রায়ই তাদেরকে ত্যাগ করে ছেড়ে চলে যাওয়ার অবস্থায় ছিলাম! এরপর যখনি তারা আল্লাহর রসূল (সাঃ) কে অভিশাপ দিতে লাগল, হঠাৎ করে এর পতন আমাদের হাতে আসতে লাগল, কখনও কখনও এর পতন হতে একদিন বা দুইদিন লাগছিল এবং এটা শক্তির দ্বারা খুলে গেলো। সুতরাং আমরা এটাকে একটা শুভ সংবাদ হিসেবে গ্রহণ করলাম যখন আমরা শুনলাম যে আল্লাহর রসূল (সাঃ) এর প্রতি অভিশাপ দেয়া হয়েছে এমনকি যদিও তাদের প্রতি আমাদের অন্তর ছিল ঘৃণায় পরিপূর্ণ কিন্তু আমরা এটাকে একটা শুভ সংবাদ হিসেবে দেখলাম কারণ এটা ছিল আমাদের আসন্ন বিজয়ের একটি লক্ষণ।
এছাড়াও এই জঘন্য অপরাধের সাথে জড়িত আরও বেশ কিছু বিষয় হচ্ছে (ইসলামকিউএ ডট কম সাইট থেকে অনুদিত। মুল এখানে (ইংরেজি) ),
১.
এই ঘৃন্য অপরাধীদের অন্তরে যা লুকায়িত ছিল যেমন মুসলিমদের প্রতি প্রচন্ড ঘৃণা ও বিদ্বেষ, সেটা বেরিয়ে আসে। যদিও বেশিরভাগ সময় তারা শান্তিপ্রিয় বলে নিজেদেরকে দাবী করে।
“শত্রুতাপ্রসুত বিদ্বেষ তাদের মুখেই ফুটে বেরোয়। আর যা কিছু তাদের মনে লুকিয়ে রয়েছে, তা আরো অনেকগুণ বেশী জঘন্য।“ (আলে ইমরান ৩, ১১৮)
২.
পাশ্চাত্যের দ্বিমুখী নীতি ফুটে ওঠে। এখানে তারা বাক-স্বাধীনতার কথা উল্লেখ করে, কিন্তু যেকোন বিজ্ঞ লোকই জানে যে তাদের এই কথিত বাক-স্বাধীনতার সমাপ্তি প্রয়োজন কেননা সেটা হয় অন্যের অধিকারকে ক্ষর্ব করে এবং সীমালংঘনের মাধ্যমে। তারা বাকস্বাধীনতার নামে তাদের মিথ্যাচারগুলোকে ঢাকার চেষ্টা করে। আমরা কয়েকবছর আগেই দেখেছি যখন একটি রাষ্ট্র তাদের সব মুর্তি ভেঙ্গে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। সারা বিশ্বজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছিল তখন। তখন সেই তথাকথিত স্বাধীনতা কোথায় ছিল? তারা এটাকেও কেন সেই রাষ্ট্রের স্বাধীনতা হিসেবে গন্য করে না?
৩.
কিছু কিছু পাশ্চাত্যবাদীর মোড়ক উন্মোচন যারা বলে থাকে, “তাদেরকে কাফির বলো না, বরং বলো অন্যরা, যেন তাদের ও আমাদের মাঝে কোন্দলের উষ্কানি সৃষ্টি না হয়।”
কিন্তু প্রত্যেকের এটা বোঝা উচিত যে কে সত্যিকার অর্থে অপরকে ঘৃণা করে, অন্যের মতকে অসম্মান করে এবং যখনই সুযোগ পায় তখনই যুদ্ধ বাধায়।
৪.
পারষ্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও সীমা অতিক্রম না করার ওপর ভিত্তি করে সভ্যতার সংলাপের যে আষাঢ়ে গল্প সারা বিশ্বব্যাপী তারা ছড়িয়েছে সেটার অসারতা প্রমাণিত হয়। তারা কি ধরনের সংলাপ আশা করে? তারা কেমন সম্মান আমাদের সামনে তুলে ধরতে চায়? তারা আমাদের কাছে সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ প্রত্যাশা করে এবং এমনকি তাদের সামনে মাথা নত করি কিংবা সিজদারত হয়ে পড়ি সেটাও চায়, কিন্তু বিনিময়ে তারা আমাদেরকে নিয়ে মজা করবে এবং আমাদেরকে নিয়ে ঠাট্টা করবে আর আরো বেশি অত্যাচার করবে?
৫.
মুসলিমদের অন্তরে ঈমান চাঙ্গা হয়। এমনকি যে সব মুসলিম ঠিকমত তাদের ধর্মীয় দায়িত্বগুলো পালন করে না তাদের মধ্য থেকেও বদ্ধমূল ঈমানের লক্ষণ প্রত্যক্ষ করি আমরা এধরনের ঘটনার প্রতিবাদে।
৬.
মুসলিমদের ঐক্যবদ্ধ করা। আমরা দেখেছি, আলহামদুলিল্লাহ, ভাষা ও রাষ্ট্রগত ভিন্নতা সত্ত্বেও তারা অভিন্ন একটি পন্থার ওপর অটল থাকে এই বিষয়ে।
৭.
এটা সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে পশ্চিমারা ইসলামের বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছে। যখনই কোন কাফির রাষ্ট্র অন্যান্যদের সহযোগিতা কামনা করে তখনই অন্য সবগুলো রাষ্ট্র একে অপরকে সহায়তা করে সেসব ব্যঙ্গচিত্র বিভিন্ন ম্যাগাজিন, পত্রপত্রিকার মাধ্যমে ছড়িয়ে দিতে যাতে মুসলিমরা উপলব্ধি করতে পারে যে, তারা সবাই ঐক্যবদ্ধ আছে। আমরা চাইলেও তাদের সবাইকে তিরষ্কার করতে পারবো না।
৮.
কিছু কিছু মুসলিম তাদেরকে ইসলামের পথে দাওয়াত দিতে উদ্বুদ্ধ হয় এবং তাদের সামনে ইসলামের প্রকৃত স্বরূপ তুলে ধরতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়। আমরা দেখেছে মুসলিমরা দ্রুততার সাথে তাদের ভাষায় বইপত্র প্রকাশ ও তাদের মাঝে বিতরণের কাজে নিয়োজিত হয় যাতে তাদের সামনে থেকে বিভ্রান্তির পর্দা উন্মোচিত হয় এবং তারা ইসলামের প্রকৃত স্বরূপ স্পষ্টভাবে দেখতে পায়।
৯.
যারা আমাদের বিরুদ্ধে ও আল্লাহর রাসুলের (সাঃ) বিরুদ্ধে সীমালঙ্ঘন করেছে তাদের পণ্য বর্জনের উপকারিতা ইতোমধ্যে আমরা বেশ কয়েকবার দেখেছি। তাদের জাতিগুলো কোন রাজনৈতিক কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক চাপ দেবার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে [বাক-স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে], এমনকি সর্বোচ্চ পর্যায়ে। কিন্তু এই পণ্য বর্জন বেশিদিন স্থায়ী হয় না যখনই ঐসব প্রতিষ্ঠানের সম্পাদক কিংবা মালিক দুঃখ প্রকাশ করে বিবৃতি দেয় [এটি নিঃসন্দেহে প্রতারণামুলক, কেননা শুরুতে তারাই এই ধরনের অন্যায়ের ইন্ধন যোগায়]।
১০.
পশ্চিমাদের কাছে একটা পরিষ্কার বার্তা পৌছে যায়। যে মুসলিমরা কখনই দ্বীনের প্রতি ও রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর প্রতি এ ধরনের অপমান সহ্য করবে না। আমরা প্রয়োজনে আমার জীবন দিয়ে দেব।
কেউ রাসুলের (সাঃ) অপমান করলে তাদের জবাব দেয়া কি জরুরী?
(ইসলামকিউএ ডট কম সাইট থেকে অনুদিত। মুল এখানে (ইংরেজি))
প্রশ্নঃ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে বিদ্রুপ করে খ্রিস্টানরা যা কিছু করছে সেগুলো সম্পর্কে জানে না আমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই। এবং এগুলো আমাদের অজানা নয় হয়ত আমাদের মধ্যে ইসলাম ও রাসুলের জন্য থাকা “গিরাহ” [রক্ষণাত্নক ঈর্ষাবোধ] এর কারনে। যারা রাসুলকে (সাঃ) অপমান করে তাদের জবাব দেয়া যাবে কি? উল্লেখ্য যে আমি এমন কয়েকজনকে অপমান করেছি এবং আমার আত্নীয়রা অনেকে আমাকে উপদেশ দিয়েছে যাতে আমি ভবিষ্যতে আর এমনটি না করি। কারন সেক্ষেত্রে তারা আরও বেশি করে রাসুলকে (সাঃ) অপমান করবে এবং বিদ্রুপ করবে। এতে করে আমি কি তাদের পাপের ভাগি হবো?
উত্তরঃ
আলহামদুলিল্লাহ।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে অপমান করা এক ধরনের কুফর যা কোন মুসলিম করে থাকলে সেটা তাকে দ্বীন থেকে বের করে দেয় এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের (শাসকদের) উচিত যে এই কাজটি করেছে তাকে হত্যার মাধ্যমে আল্লাহতা’আলা ও তাঁর রাসুলের (সাঃ) এই বিষয়টিকে প্রতিরোধ করা। যদি অপমানকারী জনসম্মুখে এবং সত্যিকার অর্থেই কেউ তওবাহ করে এ কাজের জন্য তবে আল্লাহতা’আলা তাকে ক্ষমা করে দেবেন কিন্তু সেটা তার শাস্তিকে মোটেই কমাবে না, আর এই শাস্তিটি হচ্ছে হত্যা করা।
যদি অপমানকারী মুসলিমদের সাথে চুক্তিবদ্ধ কোন অমুসলিম হয়ে থাকে তবে তৎক্ষণাৎ তার সেই চুক্তি ভেঙ্গে যাবে এবং তাকে অবশ্যই হত্যা করতে হবে কিন্তু এই দ্বায়িত্বটি যথাযথ কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেয়া উচিত। যদি কোন মুসলিম কোন খ্রিস্টান বা অন্য কাউকে রাসুল (সাঃ) কে অপমান করতে দেখে তবে তাকে কঠোর ভাষায় তাকে তিরষ্কার করতে হবে। সে লোককে তিরষ্কার করা অনুমোদিত কারন সেই প্রথম এটা শুরু করেছে। এটা কীভাবে সম্ভব যে রাসুলের (সাঃ) সম্মানে আমরা চুপ করে বসে থাকবো? যথাযথ কর্তৃপক্ষ যে তাকে শাস্তি দিতে পারবে তাকে বিষয়টি জানানো ওয়াজিব। যদি এমন কেউ না থাকে যে আল্লাহ ও তার রাসুলের (সাঃ) নির্ধারিত “হাদ শাস্তি” [এক্ষেত্রে মৃত্যুদন্ড] দিতে পারবে, তবে একজন মুসলিমকে সে যতটুকু পারে ততটুকুই করে যেতে হবে যতক্ষণ না পর্যন্ত অন্য কেউ ক্ষতির সম্মুখীন হয়। কিন্তু যদি একজন মুসলিম কোন কাফিরকে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে ব্যঙ্গ করতে শোনে এবং চুপ থাকে এই ভয়ে যে ঐ লোক হয়ত আরও বেশি করে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করবে তবে তার এই চিন্তাভাবনা ভুল। এই আয়াতটি,
“আর তারা আল্লাহ ছাড়া অন্য যাদের ইবাদত করে তাদেরকে মন্দ বলো না, সেক্ষেত্রে তারাও আল্লাহকে ভুলবশত অজ্ঞতার কারনে গালি দেবে।“ (সুরা আল আনাম ৬,১০৮)
এক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় যেখানে তারাই আল্লাহ ও তার রাসুলকে (সাঃ) প্রথমে বিদ্রুপ করা শুরু করেছে। বরং এখানে বোঝানো হয়েছে যে মুশরিকদের দেবতাদেরকে প্রথমে মন্দ বলা হারাম কারন তারাও না জেনে আল্লাহ সম্পর্কে সেক্ষেত্রে বাজে মন্তব্য করবে। কিন্তু যদি তারাই প্রথমে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সাঃ)কে বিদ্রুপ করা শুরু করে, তখন আমাদেরকে অবশ্যই জবাব দিতে হবে এবং তাদেরকে শাস্তি দিতে হবে এমনভাবে যেন তা তাদের শত্রুতা ও কুফর থেকে বিরত করে। যদি আমরা কাফির ও নাস্তিকদেরকে তিরষ্কার ও শাস্তি না দিয়ে তাদের ইচ্ছেমত বলে যেতে দেই যেটা তারা ভালবাসে তবে অনেক বর ফিতনা সৃষ্টি হবে।
তাদের কথায় মোটেই পাত্তা দেয়া যাবে না যারা বলে যে তাদেরকে অপমান করলে এবং তাদের কথার প্রতিবাদ করলে তাদের একগুয়েমী আরও বাড়বে। একজন মুসলিমের অবশ্যই প্রতিরোধমূলক ঈর্ষাবোধ থাকতে হবে এবং আল্লাহতা’আলার সন্তুষ্টির জন্য এ বিষয়ে তাকে উত্তেজিত হতে হবে। যে কেউ রাসুলের (সাঃ) অপমান হতে দেখবে এবং কোন ধরনের ক্রোধ বা হিংসা অনুভব করবে না সে মুমিন হতে পারে না। -আমরা আল্লাহতা’আলার কাছে অপমান, কুফর ও শয়তানের হাত থেকে সুরক্ষা চাই।
এবং আল্লাহ তালাই ভাল জানেন।
শেইখ আবদ আর-রহমান আল-বাররাক, মাজাল্লাত আদ-দাওয়াহ, মহররম, ইস্যু নং ১৯৩৩
***
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে বিদ্রুপকারীকে হত্যার জন্য কারও অনুমতি দরকার হয় কিনা?
ইসলামকিউএ ডট কম সাইট থেকে অনুদিত। মুল এখানে (ইংরেজি)
প্রশ্নঃ [আবু দাঊদ (৪৩৬১), সুনানে নাসাঈ (৪০৮১) থেকে উম্মু ওয়ালাদ নামের এক দাসীর হত্যার ঘটনা* উল্লেখপূর্বক]
... আমি মুরতাদ (দ্বীন ত্যাগকারী) এর শাস্তির (মৃত্যুদন্ড) কথা জানি এবং এও জানি যে এটা কেবল শাসক বা শাসকের নিযুক্ত কেউ কার্যকর করতে পারে। ... আমি ইসলাম সম্পর্কে কোন সন্দেহের উদ্রেক করবার জন্য নয় বরং কেবল উত্তরটি জানতে চাই যেন যারা ইসলামকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে তাদের জবাব দিতে পারি।
উত্তরঃ
“হাদ শাস্তি” (এক্ষেত্রে যেটা মৃত্যুদন্ড) কেবল শাসক বা শাসকের নিযুক্ত কেউ কার্যকর করতে পারে এই ধারনার বিষয়ে, শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ এই বিষয় সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন,
“এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, দ্বীনত্যাগকারীর হুদুদ শাস্তি কেবল শাসক কিংবা তার নিযুক্ত কেউ কার্যকর করতে পারে।“
তারপর তিনি বলেন,
১. মুনীব তার দাসের হুদুদ শাস্তি কার্যকর করতে পারেন এই দলীলের ভিত্তিতে যে রাসুল (সাঃ) বলেছেন, “তোমরা তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসেদের হুদুদ শাস্তি কার্যকর কর।” (আহমদ(৭৩৬) এবং অন্যান্যদের দ্বারা বর্ণিত, দলীল দ্বারা হাসান বলে সাব্যস্ত বলেছেন আল-আরনাউত; যদিও আলবানীর অভিমত যে এটি আলী (রাঃ) এর বক্তব্য, আল ইরওয়া (২৩২৫) দ্রষ্টব্য।) এবং তিনি (সাঃ) বলেছেন, “যদি তোমাদের দাসী কেউ ব্যাভিচারে লিপ্ত হয় তবে সেজন্য তার শাস্তি কার্যকর কর।” (আবু দাউদ (৪৪৭০),সহীহা গ্রন্থেও এমন একটি বর্ণনা রয়েছে) আমি হাদিস শাস্ত্রের “ফুকাহাহ”দের (যিনি ফিকহ জানেন) মাঝে এমন কারও কথা জানি না যিনি এ বিষয়ে দ্বিমত করেছেন যে সে (মনিব) তার (দাসীর) ওপর শাস্তি কার্যকর করতে পারে। ... ... [এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত দলীলাদি দেবার পর] সুতরাং এই হাদিসটি তাদের জন্য দলীল যারা বলেন যে মনিব দাসের হুদুদ শাস্তি দিতে পারেন তার জ্ঞানের ওপর ভিত্তি করে, সব ক্ষেত্রে।
২. বড়জোর যেটা বলা চলে এ ব্যাপারে তা হলো সে শাসকের অধিকার খর্ব করেছে এবং শাসক চাইলে তাকে ক্ষমা করে দিতে পারেন যে হুদুদ শাস্তি কার্যকর করেছে শাসককে বিষয়টি অবহিত করা ছাড়া।
৩. যদিও এটা একটা হুদুদ শাস্তি, এটা একজন “হারবি” (একজন মুসলিমের সাথে যুদ্ধে রত অমুসলিম)কে হত্যার আওতায়ও পড়ে এবং একটা “হারবি”কে মারা যে কারও জন্য অনুমোদিত।
৪. রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর সময়ও অনুরুপ ঘটনা ঘটেছিল যেমন আল্লাহর রাসুলের (সাঃ) মীমাংসা মেনে নিতে অস্বীকার করায় উমার (রাঃ) এর হাতে এক মুনাফিক খুন হয়েছিল রাসুল (সাঃ) এর অনুমতি ছাড়াই। এবং এর পরে উমার (রাঃ) এর কাজটিকে অনুমোদন করে কুরআনে আয়াত নাজিল হয়েছিল। এছাড়াও মারওয়ানের কন্যাকে [আসমা বিনতে মারওয়ান] এক ব্যক্তি হত্যা করে এবং রাসুল (সাঃ) তাকে আল্লাহ ও রাসুলের সাহায্যকারী হিসেবে অভিহিত করেন। [দ্রষ্টব্যঃ আসমা বিনতে মারওয়ানের হত্যার হাদিসটি দুর্বল, যদিও শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ এখানে এটিকে দলীল হিসেবে উল্লেখ করেছেন আবু দাঊদ (৪৩৬১), সুনানে নাসাঈ (৪০৮১) এ বর্ণিত হাদিসের আলোকে শাসকের অনুমতি ছাড়াই হত্যার বিষয়টিকে প্রমাণ করার জন্য।] এর কারন হচ্ছে যে লোকের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা অনিবার্য হয়ে পড়ে দ্বীনকে ধ্বংস করবার অপচেষ্টার জন্য, সেটা যাকে জিনা কিংবা এরকম বিষয়গুলোর কারনে হত্যা করা হয় তার মতন না।
আল-সারিম আল মাসলুল (২৮৫-২৮৬) থেকে উদ্ধৃত।
০০০
*উম্মু ওয়ালাদ নামের এক দাসীর হত্যার ঘটনাঃ (আবু দাঊদ (৪৩৬১), সুনানে নাসাঈ (৪০৮১) হাদিস দুটি দ্রষ্টব্য। নাসিরুদ্দিন আলবানী উভয় হাদিসকে হাসান বলেছেন)
একজন অন্ধ ব্যক্তি যার অধীনে একজন দাসী ছিল, যার নাম ছিলো উম্মু ওয়ালাদ। উম্মু ওয়ালাদ হচ্ছে একজন আবদ্ধ নারী, যে তার মনীবের বাচ্চা বহন করেন। তাই তাকে উম্মু ওয়ালাদ বলা হত এবং তার ক্ষেত্রে বিশেষ বিধি প্রযোজ্য হয়। এই ব্যক্তি তার উম্মু ওয়ালাদ থেকে দুজন সন্তান বহন করেন। কিন্তু এই মহিলা আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে অভিশাপ দিতেন। এবং তাকে তিনি তা না করার জন্য সাবধান করার পরেও সে বিরত হতো না!
এক রাতে সে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অভিশাপ দিয়েই যাচ্ছিলো। তখন তিনি একটি ছুরি নিয়ে তার পেটে বিদ্ধ করলেন এবং ভিতরে চাপ দিতে থাকলেন যতক্ষণ না তার মৃত্যু হয়!
সকালে আল্লাহর রসূলের নিকট খবর পৌঁছল। আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লোকজনকে একত্র করে বললেন, আমি আল্লাহর নামে তোমাদের আদেশ করছি যে কাজটি করেছো উঠে দাড়াও। অন্ধ ব্যক্তিটি উঠে দাঁড়ালেন এবং হেঁটে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সামনে এসে বসে পড়ে বললেন,“হে আল্লাহর রসূল! আমিই সেই ব্যক্তি যে কাজটি করেছে। সে আপনাকে অভিশাপ দিতো এবং তাকে বিরত থাকার কথা বলার পরও সে বিরত হতো না! তার হতে আমার মুক্তার মতো সন্তান আছে এবং সে আমার প্রতি খুব সদয় ছিলো। কিন্তু গত রাতে সে আপনাকে অভিশাপ দিতে লাগলো। তাই আমি একটি ছুরি নিয়ে তাকে আঘাত করলাম এবং তাকে মেরে ফেললাম!”
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “জেনে রেখো যে তার রক্তের কোন মূল্য নেই।” অর্থাৎ, তার জন্য কোন ক্ষতিপূরণ নেই এবং যে তাকে হত্যা করেছে তারও কোন শাস্তি নেই!
***
আমরা এ বিষয়ে আরও যা যা করতে পারিঃ
(ইসলামকিউএ ডট কম সাইট থেকে অনুদিত। মুল এখানে (ইংরেজি) )
১.
আমাদেরকে অবশ্যই বল প্রয়োগের মাধ্যমে এটাকে প্রতিরোধ করতে হবে, প্রত্যেকে তার নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী, হতে পারে এমনকি পত্র বা লেখা পাঠিয়ে কিংবা ফোনকল করে তাদের সরকার ও পররাষ্ট্র দপ্তরে এবং সংবাদপত্রগুলোতে।
৩.
আমরা তাদেরকে কাছে পরিষ্কার এবং সত্যিকার অর্থে ক্ষমা দাবী করবো। প্রতারণা কিংবা যেই অন্যায়ের সাফাই গাওয়া যেটাকে তারা ক্ষমা বলে আখ্যায়িত করে সেটা না। আমরা মুসলিমদের জন্য অসম্মানজনক কোন ক্ষমা দেখতে চাই না। বরং আমরা চাই তারা তাদের ভুল স্বীকার করুক এবং এই ভুলের জন্য ক্ষমা চাক।
৪.
আমাদের সেই অন্যায়ের [দৃষ্টান্তমূলক] শাস্তি দাবী করা উচিত।
৫.
আমাদের উচিত তাদের ভাষায় বই পুস্তক অনুবাদ করে তাদের হাতে তুলে দেয়া যাতে মানুষ ইসলাম সম্পর্কে, নবী (সাঃ) এবং ওনার জীবনী সম্পর্কে জানতে পারে।
৬.
আমাদের উচিত হবে রেডিও এবং টেলিভিশনে সময় ক্রয় করে রাসুলের(সাঃ) সম্মান রক্ষার্থে বিভিন্ন অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা। যেগুলো সামর্থবান এবং ভাল জ্ঞানী লোকজনের দ্বারা উপস্থাপিত হওয়া উচিত যারা জানে কিভাবে পশ্চিমাদেরকে বুঝাতে হয়। আলহামদুলিল্লাহ এমন অনেকে আছেনও।
৭.
আমাদেরকে পত্রপত্রিকা, ম্যাগাজিন এবং ওয়েবসাইটগুলোতে বিভিন্ন ভাষায় ক্ষুরধার লেখা ছড়িয়ে দেবার চেষ্টা করতে হবে।
৮.
তাদের পন্য বর্জন সম্পর্কে, যদি সেটা কার্যকরী হয়- যেটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে-তাহলে আমরা কেন তাদেরকে বর্জন করছি না এবং যদি সম্ভব হয় তবে মুসলিমদের মালিকানাধীন বিকল্প পণ্য খুঁজছি না?
৯.
ইসলামের সৌন্দর্য এবং সুন্দর যুক্তি উপস্থাপনের মাধ্যমে এবং সন্দেহদূরকারী বক্তব্যের মাধ্যমে আমাদেরকে ইসলামের এবং রাসুলের (সাঃ) বিরুদ্ধে এই ধ্বংসাত্নক আক্রমনকে রুখে দাঁড়াতে হবে।
১০.
আমরা সব বিষয়ে রাসুলের (সাঃ) সুন্নাহের অনুসরণ এবং মেনে চলতে গিয়ে যাতে ধৈর্যের পরিচয় দিতে পারি।
“তোমাদের যদি কোন মঙ্গল হয়; তাহলে তাদের খারাপ লাগে। আর তোমাদের যদি অমঙ্গল হয় তাহলে আনন্দিত হয় আর তাতে যদি তোমরা ধৈর্য্যধারণ কর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর, তবে তাদের প্রতারণায় তোমাদের কোনই ক্ষতি হবে না।“ (সুরা আলে ইমরান ৩, ১২০)
১১.
তীব্র ঘৃণা ও অপছন্দের চশমা দিয়ে তাদেরকে দেখা সত্ত্বেও কাফিরদেরকে ইসলামের দিকে এবং পরকালীন মুক্তির দিকে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে, তাদের প্রতি যেখানে সম্ভব দয়া এবং ক্ষমা দেখিয়ে।
আমরা আল্লাহতা’আলার সাহায্য কামনা করছি যেন তিনি তার দ্বীনকে বিজয়ী করেন এবং তাঁর প্রিয় বান্দাদেরকে বিজয়ী করেন এবং কুফফারদেরকে অপমানিত করেন।
“আল্লাহ নিজ কাজে পূর্ণ ক্ষমতার অধিকারী এবং পারঙ্গম, কিন্তু অধিকাংশ লোক তা জানে না।“ (সুরা ইউসুফ ১২, ২১)
আল্লাহতা'আলা তার রাসুলের ওপর শান্তি ও রহমত বর্ষন করুন।
আরও পড়ুনঃ
The Dust will never settle down
বাংলা অনুবাদ বইঃ এ যুদ্ধ কিয়ামত পর্যন্ত চলতে থাকবে।
লেখকঃ শাইখ আনওয়ার আল আওলাকি রাহিমাহুল্লাহ
শাইখ সালেহ আল মুনাজ্জিদের islamqa.com থেকে একাধিক ফতোয়া অবলম্বনে সংকলিত।
সবগুলো অনুবাদ ও সংকলনেঃ Collected Notes and Discussion
আল্লাহতালা বলেন,
“বিদ্রুপকারীদের জন্যে আমিই আপনার পক্ষ থেকে যথেষ্ট।“ (সুরা আল হিজর ১৫, ৯৫)
“যে আপনার শত্রু, সেই তো লেজকাটা, নির্বংশ।“ (সুরা আল কাউসার ১০৮,৩)
এ বিষয়ে ইবনে তাইমিয়া বলেছিলেন অনেকটা এভাবে (আল শারিম আল মাসলুল ১১৬-১১৭ অনুকরণে ইমাম আনওয়ার আল আওলাকী তার দ্যা ডাস্ট উইল নেভার সেটল ডাউন বইতে উল্লেখ করেছেন),
“অনেক নির্ভরযোগ্য মুসলিমগন (যারা অভিজ্ঞ এবং ফকীহ) বেশীরভাগ সময়ই তাদের অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন যখন তারা শামের শহর, দূর্গ এবং খ্রিষ্টানদের আবদ্ধ করে রেখেছিলেন। তারা বলেছেন যে আমরা শহর অথবা দূর্গকে মাসাধিককাল ধরে আবদ্ধ করে রেখেছিলাম, আমাদের অবরোধে তাদের কিছুই করার ছিল না, এবং আমরা প্রায়ই তাদেরকে ত্যাগ করে ছেড়ে চলে যাওয়ার অবস্থায় ছিলাম! এরপর যখনি তারা আল্লাহর রসূল (সাঃ) কে অভিশাপ দিতে লাগল, হঠাৎ করে এর পতন আমাদের হাতে আসতে লাগল, কখনও কখনও এর পতন হতে একদিন বা দুইদিন লাগছিল এবং এটা শক্তির দ্বারা খুলে গেলো। সুতরাং আমরা এটাকে একটা শুভ সংবাদ হিসেবে গ্রহণ করলাম যখন আমরা শুনলাম যে আল্লাহর রসূল (সাঃ) এর প্রতি অভিশাপ দেয়া হয়েছে এমনকি যদিও তাদের প্রতি আমাদের অন্তর ছিল ঘৃণায় পরিপূর্ণ কিন্তু আমরা এটাকে একটা শুভ সংবাদ হিসেবে দেখলাম কারণ এটা ছিল আমাদের আসন্ন বিজয়ের একটি লক্ষণ।
এছাড়াও এই জঘন্য অপরাধের সাথে জড়িত আরও বেশ কিছু বিষয় হচ্ছে (ইসলামকিউএ ডট কম সাইট থেকে অনুদিত। মুল এখানে (ইংরেজি) ),
১.
এই ঘৃন্য অপরাধীদের অন্তরে যা লুকায়িত ছিল যেমন মুসলিমদের প্রতি প্রচন্ড ঘৃণা ও বিদ্বেষ, সেটা বেরিয়ে আসে। যদিও বেশিরভাগ সময় তারা শান্তিপ্রিয় বলে নিজেদেরকে দাবী করে।
“শত্রুতাপ্রসুত বিদ্বেষ তাদের মুখেই ফুটে বেরোয়। আর যা কিছু তাদের মনে লুকিয়ে রয়েছে, তা আরো অনেকগুণ বেশী জঘন্য।“ (আলে ইমরান ৩, ১১৮)
২.
পাশ্চাত্যের দ্বিমুখী নীতি ফুটে ওঠে। এখানে তারা বাক-স্বাধীনতার কথা উল্লেখ করে, কিন্তু যেকোন বিজ্ঞ লোকই জানে যে তাদের এই কথিত বাক-স্বাধীনতার সমাপ্তি প্রয়োজন কেননা সেটা হয় অন্যের অধিকারকে ক্ষর্ব করে এবং সীমালংঘনের মাধ্যমে। তারা বাকস্বাধীনতার নামে তাদের মিথ্যাচারগুলোকে ঢাকার চেষ্টা করে। আমরা কয়েকবছর আগেই দেখেছি যখন একটি রাষ্ট্র তাদের সব মুর্তি ভেঙ্গে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। সারা বিশ্বজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছিল তখন। তখন সেই তথাকথিত স্বাধীনতা কোথায় ছিল? তারা এটাকেও কেন সেই রাষ্ট্রের স্বাধীনতা হিসেবে গন্য করে না?
৩.
কিছু কিছু পাশ্চাত্যবাদীর মোড়ক উন্মোচন যারা বলে থাকে, “তাদেরকে কাফির বলো না, বরং বলো অন্যরা, যেন তাদের ও আমাদের মাঝে কোন্দলের উষ্কানি সৃষ্টি না হয়।”
কিন্তু প্রত্যেকের এটা বোঝা উচিত যে কে সত্যিকার অর্থে অপরকে ঘৃণা করে, অন্যের মতকে অসম্মান করে এবং যখনই সুযোগ পায় তখনই যুদ্ধ বাধায়।
৪.
পারষ্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও সীমা অতিক্রম না করার ওপর ভিত্তি করে সভ্যতার সংলাপের যে আষাঢ়ে গল্প সারা বিশ্বব্যাপী তারা ছড়িয়েছে সেটার অসারতা প্রমাণিত হয়। তারা কি ধরনের সংলাপ আশা করে? তারা কেমন সম্মান আমাদের সামনে তুলে ধরতে চায়? তারা আমাদের কাছে সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ প্রত্যাশা করে এবং এমনকি তাদের সামনে মাথা নত করি কিংবা সিজদারত হয়ে পড়ি সেটাও চায়, কিন্তু বিনিময়ে তারা আমাদেরকে নিয়ে মজা করবে এবং আমাদেরকে নিয়ে ঠাট্টা করবে আর আরো বেশি অত্যাচার করবে?
৫.
মুসলিমদের অন্তরে ঈমান চাঙ্গা হয়। এমনকি যে সব মুসলিম ঠিকমত তাদের ধর্মীয় দায়িত্বগুলো পালন করে না তাদের মধ্য থেকেও বদ্ধমূল ঈমানের লক্ষণ প্রত্যক্ষ করি আমরা এধরনের ঘটনার প্রতিবাদে।
৬.
মুসলিমদের ঐক্যবদ্ধ করা। আমরা দেখেছি, আলহামদুলিল্লাহ, ভাষা ও রাষ্ট্রগত ভিন্নতা সত্ত্বেও তারা অভিন্ন একটি পন্থার ওপর অটল থাকে এই বিষয়ে।
৭.
এটা সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে পশ্চিমারা ইসলামের বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছে। যখনই কোন কাফির রাষ্ট্র অন্যান্যদের সহযোগিতা কামনা করে তখনই অন্য সবগুলো রাষ্ট্র একে অপরকে সহায়তা করে সেসব ব্যঙ্গচিত্র বিভিন্ন ম্যাগাজিন, পত্রপত্রিকার মাধ্যমে ছড়িয়ে দিতে যাতে মুসলিমরা উপলব্ধি করতে পারে যে, তারা সবাই ঐক্যবদ্ধ আছে। আমরা চাইলেও তাদের সবাইকে তিরষ্কার করতে পারবো না।
৮.
কিছু কিছু মুসলিম তাদেরকে ইসলামের পথে দাওয়াত দিতে উদ্বুদ্ধ হয় এবং তাদের সামনে ইসলামের প্রকৃত স্বরূপ তুলে ধরতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়। আমরা দেখেছে মুসলিমরা দ্রুততার সাথে তাদের ভাষায় বইপত্র প্রকাশ ও তাদের মাঝে বিতরণের কাজে নিয়োজিত হয় যাতে তাদের সামনে থেকে বিভ্রান্তির পর্দা উন্মোচিত হয় এবং তারা ইসলামের প্রকৃত স্বরূপ স্পষ্টভাবে দেখতে পায়।
৯.
যারা আমাদের বিরুদ্ধে ও আল্লাহর রাসুলের (সাঃ) বিরুদ্ধে সীমালঙ্ঘন করেছে তাদের পণ্য বর্জনের উপকারিতা ইতোমধ্যে আমরা বেশ কয়েকবার দেখেছি। তাদের জাতিগুলো কোন রাজনৈতিক কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক চাপ দেবার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে [বাক-স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে], এমনকি সর্বোচ্চ পর্যায়ে। কিন্তু এই পণ্য বর্জন বেশিদিন স্থায়ী হয় না যখনই ঐসব প্রতিষ্ঠানের সম্পাদক কিংবা মালিক দুঃখ প্রকাশ করে বিবৃতি দেয় [এটি নিঃসন্দেহে প্রতারণামুলক, কেননা শুরুতে তারাই এই ধরনের অন্যায়ের ইন্ধন যোগায়]।
১০.
পশ্চিমাদের কাছে একটা পরিষ্কার বার্তা পৌছে যায়। যে মুসলিমরা কখনই দ্বীনের প্রতি ও রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর প্রতি এ ধরনের অপমান সহ্য করবে না। আমরা প্রয়োজনে আমার জীবন দিয়ে দেব।
কেউ রাসুলের (সাঃ) অপমান করলে তাদের জবাব দেয়া কি জরুরী?
(ইসলামকিউএ ডট কম সাইট থেকে অনুদিত। মুল এখানে (ইংরেজি))
প্রশ্নঃ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে বিদ্রুপ করে খ্রিস্টানরা যা কিছু করছে সেগুলো সম্পর্কে জানে না আমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই। এবং এগুলো আমাদের অজানা নয় হয়ত আমাদের মধ্যে ইসলাম ও রাসুলের জন্য থাকা “গিরাহ” [রক্ষণাত্নক ঈর্ষাবোধ] এর কারনে। যারা রাসুলকে (সাঃ) অপমান করে তাদের জবাব দেয়া যাবে কি? উল্লেখ্য যে আমি এমন কয়েকজনকে অপমান করেছি এবং আমার আত্নীয়রা অনেকে আমাকে উপদেশ দিয়েছে যাতে আমি ভবিষ্যতে আর এমনটি না করি। কারন সেক্ষেত্রে তারা আরও বেশি করে রাসুলকে (সাঃ) অপমান করবে এবং বিদ্রুপ করবে। এতে করে আমি কি তাদের পাপের ভাগি হবো?
উত্তরঃ
আলহামদুলিল্লাহ।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে অপমান করা এক ধরনের কুফর যা কোন মুসলিম করে থাকলে সেটা তাকে দ্বীন থেকে বের করে দেয় এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের (শাসকদের) উচিত যে এই কাজটি করেছে তাকে হত্যার মাধ্যমে আল্লাহতা’আলা ও তাঁর রাসুলের (সাঃ) এই বিষয়টিকে প্রতিরোধ করা। যদি অপমানকারী জনসম্মুখে এবং সত্যিকার অর্থেই কেউ তওবাহ করে এ কাজের জন্য তবে আল্লাহতা’আলা তাকে ক্ষমা করে দেবেন কিন্তু সেটা তার শাস্তিকে মোটেই কমাবে না, আর এই শাস্তিটি হচ্ছে হত্যা করা।
যদি অপমানকারী মুসলিমদের সাথে চুক্তিবদ্ধ কোন অমুসলিম হয়ে থাকে তবে তৎক্ষণাৎ তার সেই চুক্তি ভেঙ্গে যাবে এবং তাকে অবশ্যই হত্যা করতে হবে কিন্তু এই দ্বায়িত্বটি যথাযথ কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেয়া উচিত। যদি কোন মুসলিম কোন খ্রিস্টান বা অন্য কাউকে রাসুল (সাঃ) কে অপমান করতে দেখে তবে তাকে কঠোর ভাষায় তাকে তিরষ্কার করতে হবে। সে লোককে তিরষ্কার করা অনুমোদিত কারন সেই প্রথম এটা শুরু করেছে। এটা কীভাবে সম্ভব যে রাসুলের (সাঃ) সম্মানে আমরা চুপ করে বসে থাকবো? যথাযথ কর্তৃপক্ষ যে তাকে শাস্তি দিতে পারবে তাকে বিষয়টি জানানো ওয়াজিব। যদি এমন কেউ না থাকে যে আল্লাহ ও তার রাসুলের (সাঃ) নির্ধারিত “হাদ শাস্তি” [এক্ষেত্রে মৃত্যুদন্ড] দিতে পারবে, তবে একজন মুসলিমকে সে যতটুকু পারে ততটুকুই করে যেতে হবে যতক্ষণ না পর্যন্ত অন্য কেউ ক্ষতির সম্মুখীন হয়। কিন্তু যদি একজন মুসলিম কোন কাফিরকে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে ব্যঙ্গ করতে শোনে এবং চুপ থাকে এই ভয়ে যে ঐ লোক হয়ত আরও বেশি করে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করবে তবে তার এই চিন্তাভাবনা ভুল। এই আয়াতটি,
“আর তারা আল্লাহ ছাড়া অন্য যাদের ইবাদত করে তাদেরকে মন্দ বলো না, সেক্ষেত্রে তারাও আল্লাহকে ভুলবশত অজ্ঞতার কারনে গালি দেবে।“ (সুরা আল আনাম ৬,১০৮)
এক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় যেখানে তারাই আল্লাহ ও তার রাসুলকে (সাঃ) প্রথমে বিদ্রুপ করা শুরু করেছে। বরং এখানে বোঝানো হয়েছে যে মুশরিকদের দেবতাদেরকে প্রথমে মন্দ বলা হারাম কারন তারাও না জেনে আল্লাহ সম্পর্কে সেক্ষেত্রে বাজে মন্তব্য করবে। কিন্তু যদি তারাই প্রথমে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সাঃ)কে বিদ্রুপ করা শুরু করে, তখন আমাদেরকে অবশ্যই জবাব দিতে হবে এবং তাদেরকে শাস্তি দিতে হবে এমনভাবে যেন তা তাদের শত্রুতা ও কুফর থেকে বিরত করে। যদি আমরা কাফির ও নাস্তিকদেরকে তিরষ্কার ও শাস্তি না দিয়ে তাদের ইচ্ছেমত বলে যেতে দেই যেটা তারা ভালবাসে তবে অনেক বর ফিতনা সৃষ্টি হবে।
তাদের কথায় মোটেই পাত্তা দেয়া যাবে না যারা বলে যে তাদেরকে অপমান করলে এবং তাদের কথার প্রতিবাদ করলে তাদের একগুয়েমী আরও বাড়বে। একজন মুসলিমের অবশ্যই প্রতিরোধমূলক ঈর্ষাবোধ থাকতে হবে এবং আল্লাহতা’আলার সন্তুষ্টির জন্য এ বিষয়ে তাকে উত্তেজিত হতে হবে। যে কেউ রাসুলের (সাঃ) অপমান হতে দেখবে এবং কোন ধরনের ক্রোধ বা হিংসা অনুভব করবে না সে মুমিন হতে পারে না। -আমরা আল্লাহতা’আলার কাছে অপমান, কুফর ও শয়তানের হাত থেকে সুরক্ষা চাই।
এবং আল্লাহ তালাই ভাল জানেন।
শেইখ আবদ আর-রহমান আল-বাররাক, মাজাল্লাত আদ-দাওয়াহ, মহররম, ইস্যু নং ১৯৩৩
***
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে বিদ্রুপকারীকে হত্যার জন্য কারও অনুমতি দরকার হয় কিনা?
ইসলামকিউএ ডট কম সাইট থেকে অনুদিত। মুল এখানে (ইংরেজি)
প্রশ্নঃ [আবু দাঊদ (৪৩৬১), সুনানে নাসাঈ (৪০৮১) থেকে উম্মু ওয়ালাদ নামের এক দাসীর হত্যার ঘটনা* উল্লেখপূর্বক]
... আমি মুরতাদ (দ্বীন ত্যাগকারী) এর শাস্তির (মৃত্যুদন্ড) কথা জানি এবং এও জানি যে এটা কেবল শাসক বা শাসকের নিযুক্ত কেউ কার্যকর করতে পারে। ... আমি ইসলাম সম্পর্কে কোন সন্দেহের উদ্রেক করবার জন্য নয় বরং কেবল উত্তরটি জানতে চাই যেন যারা ইসলামকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে তাদের জবাব দিতে পারি।
উত্তরঃ
“হাদ শাস্তি” (এক্ষেত্রে যেটা মৃত্যুদন্ড) কেবল শাসক বা শাসকের নিযুক্ত কেউ কার্যকর করতে পারে এই ধারনার বিষয়ে, শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ এই বিষয় সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন,
“এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, দ্বীনত্যাগকারীর হুদুদ শাস্তি কেবল শাসক কিংবা তার নিযুক্ত কেউ কার্যকর করতে পারে।“
তারপর তিনি বলেন,
১. মুনীব তার দাসের হুদুদ শাস্তি কার্যকর করতে পারেন এই দলীলের ভিত্তিতে যে রাসুল (সাঃ) বলেছেন, “তোমরা তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসেদের হুদুদ শাস্তি কার্যকর কর।” (আহমদ(৭৩৬) এবং অন্যান্যদের দ্বারা বর্ণিত, দলীল দ্বারা হাসান বলে সাব্যস্ত বলেছেন আল-আরনাউত; যদিও আলবানীর অভিমত যে এটি আলী (রাঃ) এর বক্তব্য, আল ইরওয়া (২৩২৫) দ্রষ্টব্য।) এবং তিনি (সাঃ) বলেছেন, “যদি তোমাদের দাসী কেউ ব্যাভিচারে লিপ্ত হয় তবে সেজন্য তার শাস্তি কার্যকর কর।” (আবু দাউদ (৪৪৭০),সহীহা গ্রন্থেও এমন একটি বর্ণনা রয়েছে) আমি হাদিস শাস্ত্রের “ফুকাহাহ”দের (যিনি ফিকহ জানেন) মাঝে এমন কারও কথা জানি না যিনি এ বিষয়ে দ্বিমত করেছেন যে সে (মনিব) তার (দাসীর) ওপর শাস্তি কার্যকর করতে পারে। ... ... [এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত দলীলাদি দেবার পর] সুতরাং এই হাদিসটি তাদের জন্য দলীল যারা বলেন যে মনিব দাসের হুদুদ শাস্তি দিতে পারেন তার জ্ঞানের ওপর ভিত্তি করে, সব ক্ষেত্রে।
২. বড়জোর যেটা বলা চলে এ ব্যাপারে তা হলো সে শাসকের অধিকার খর্ব করেছে এবং শাসক চাইলে তাকে ক্ষমা করে দিতে পারেন যে হুদুদ শাস্তি কার্যকর করেছে শাসককে বিষয়টি অবহিত করা ছাড়া।
৩. যদিও এটা একটা হুদুদ শাস্তি, এটা একজন “হারবি” (একজন মুসলিমের সাথে যুদ্ধে রত অমুসলিম)কে হত্যার আওতায়ও পড়ে এবং একটা “হারবি”কে মারা যে কারও জন্য অনুমোদিত।
৪. রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর সময়ও অনুরুপ ঘটনা ঘটেছিল যেমন আল্লাহর রাসুলের (সাঃ) মীমাংসা মেনে নিতে অস্বীকার করায় উমার (রাঃ) এর হাতে এক মুনাফিক খুন হয়েছিল রাসুল (সাঃ) এর অনুমতি ছাড়াই। এবং এর পরে উমার (রাঃ) এর কাজটিকে অনুমোদন করে কুরআনে আয়াত নাজিল হয়েছিল। এছাড়াও মারওয়ানের কন্যাকে [আসমা বিনতে মারওয়ান] এক ব্যক্তি হত্যা করে এবং রাসুল (সাঃ) তাকে আল্লাহ ও রাসুলের সাহায্যকারী হিসেবে অভিহিত করেন। [দ্রষ্টব্যঃ আসমা বিনতে মারওয়ানের হত্যার হাদিসটি দুর্বল, যদিও শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ এখানে এটিকে দলীল হিসেবে উল্লেখ করেছেন আবু দাঊদ (৪৩৬১), সুনানে নাসাঈ (৪০৮১) এ বর্ণিত হাদিসের আলোকে শাসকের অনুমতি ছাড়াই হত্যার বিষয়টিকে প্রমাণ করার জন্য।] এর কারন হচ্ছে যে লোকের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা অনিবার্য হয়ে পড়ে দ্বীনকে ধ্বংস করবার অপচেষ্টার জন্য, সেটা যাকে জিনা কিংবা এরকম বিষয়গুলোর কারনে হত্যা করা হয় তার মতন না।
আল-সারিম আল মাসলুল (২৮৫-২৮৬) থেকে উদ্ধৃত।
০০০
*উম্মু ওয়ালাদ নামের এক দাসীর হত্যার ঘটনাঃ (আবু দাঊদ (৪৩৬১), সুনানে নাসাঈ (৪০৮১) হাদিস দুটি দ্রষ্টব্য। নাসিরুদ্দিন আলবানী উভয় হাদিসকে হাসান বলেছেন)
একজন অন্ধ ব্যক্তি যার অধীনে একজন দাসী ছিল, যার নাম ছিলো উম্মু ওয়ালাদ। উম্মু ওয়ালাদ হচ্ছে একজন আবদ্ধ নারী, যে তার মনীবের বাচ্চা বহন করেন। তাই তাকে উম্মু ওয়ালাদ বলা হত এবং তার ক্ষেত্রে বিশেষ বিধি প্রযোজ্য হয়। এই ব্যক্তি তার উম্মু ওয়ালাদ থেকে দুজন সন্তান বহন করেন। কিন্তু এই মহিলা আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে অভিশাপ দিতেন। এবং তাকে তিনি তা না করার জন্য সাবধান করার পরেও সে বিরত হতো না!
এক রাতে সে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অভিশাপ দিয়েই যাচ্ছিলো। তখন তিনি একটি ছুরি নিয়ে তার পেটে বিদ্ধ করলেন এবং ভিতরে চাপ দিতে থাকলেন যতক্ষণ না তার মৃত্যু হয়!
সকালে আল্লাহর রসূলের নিকট খবর পৌঁছল। আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লোকজনকে একত্র করে বললেন, আমি আল্লাহর নামে তোমাদের আদেশ করছি যে কাজটি করেছো উঠে দাড়াও। অন্ধ ব্যক্তিটি উঠে দাঁড়ালেন এবং হেঁটে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সামনে এসে বসে পড়ে বললেন,“হে আল্লাহর রসূল! আমিই সেই ব্যক্তি যে কাজটি করেছে। সে আপনাকে অভিশাপ দিতো এবং তাকে বিরত থাকার কথা বলার পরও সে বিরত হতো না! তার হতে আমার মুক্তার মতো সন্তান আছে এবং সে আমার প্রতি খুব সদয় ছিলো। কিন্তু গত রাতে সে আপনাকে অভিশাপ দিতে লাগলো। তাই আমি একটি ছুরি নিয়ে তাকে আঘাত করলাম এবং তাকে মেরে ফেললাম!”
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “জেনে রেখো যে তার রক্তের কোন মূল্য নেই।” অর্থাৎ, তার জন্য কোন ক্ষতিপূরণ নেই এবং যে তাকে হত্যা করেছে তারও কোন শাস্তি নেই!
***
আমরা এ বিষয়ে আরও যা যা করতে পারিঃ
(ইসলামকিউএ ডট কম সাইট থেকে অনুদিত। মুল এখানে (ইংরেজি) )
১.
আমাদেরকে অবশ্যই বল প্রয়োগের মাধ্যমে এটাকে প্রতিরোধ করতে হবে, প্রত্যেকে তার নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী, হতে পারে এমনকি পত্র বা লেখা পাঠিয়ে কিংবা ফোনকল করে তাদের সরকার ও পররাষ্ট্র দপ্তরে এবং সংবাদপত্রগুলোতে।
৩.
আমরা তাদেরকে কাছে পরিষ্কার এবং সত্যিকার অর্থে ক্ষমা দাবী করবো। প্রতারণা কিংবা যেই অন্যায়ের সাফাই গাওয়া যেটাকে তারা ক্ষমা বলে আখ্যায়িত করে সেটা না। আমরা মুসলিমদের জন্য অসম্মানজনক কোন ক্ষমা দেখতে চাই না। বরং আমরা চাই তারা তাদের ভুল স্বীকার করুক এবং এই ভুলের জন্য ক্ষমা চাক।
৪.
আমাদের সেই অন্যায়ের [দৃষ্টান্তমূলক] শাস্তি দাবী করা উচিত।
৫.
আমাদের উচিত তাদের ভাষায় বই পুস্তক অনুবাদ করে তাদের হাতে তুলে দেয়া যাতে মানুষ ইসলাম সম্পর্কে, নবী (সাঃ) এবং ওনার জীবনী সম্পর্কে জানতে পারে।
৬.
আমাদের উচিত হবে রেডিও এবং টেলিভিশনে সময় ক্রয় করে রাসুলের(সাঃ) সম্মান রক্ষার্থে বিভিন্ন অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা। যেগুলো সামর্থবান এবং ভাল জ্ঞানী লোকজনের দ্বারা উপস্থাপিত হওয়া উচিত যারা জানে কিভাবে পশ্চিমাদেরকে বুঝাতে হয়। আলহামদুলিল্লাহ এমন অনেকে আছেনও।
৭.
আমাদেরকে পত্রপত্রিকা, ম্যাগাজিন এবং ওয়েবসাইটগুলোতে বিভিন্ন ভাষায় ক্ষুরধার লেখা ছড়িয়ে দেবার চেষ্টা করতে হবে।
৮.
তাদের পন্য বর্জন সম্পর্কে, যদি সেটা কার্যকরী হয়- যেটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে-তাহলে আমরা কেন তাদেরকে বর্জন করছি না এবং যদি সম্ভব হয় তবে মুসলিমদের মালিকানাধীন বিকল্প পণ্য খুঁজছি না?
৯.
ইসলামের সৌন্দর্য এবং সুন্দর যুক্তি উপস্থাপনের মাধ্যমে এবং সন্দেহদূরকারী বক্তব্যের মাধ্যমে আমাদেরকে ইসলামের এবং রাসুলের (সাঃ) বিরুদ্ধে এই ধ্বংসাত্নক আক্রমনকে রুখে দাঁড়াতে হবে।
১০.
আমরা সব বিষয়ে রাসুলের (সাঃ) সুন্নাহের অনুসরণ এবং মেনে চলতে গিয়ে যাতে ধৈর্যের পরিচয় দিতে পারি।
“তোমাদের যদি কোন মঙ্গল হয়; তাহলে তাদের খারাপ লাগে। আর তোমাদের যদি অমঙ্গল হয় তাহলে আনন্দিত হয় আর তাতে যদি তোমরা ধৈর্য্যধারণ কর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর, তবে তাদের প্রতারণায় তোমাদের কোনই ক্ষতি হবে না।“ (সুরা আলে ইমরান ৩, ১২০)
১১.
তীব্র ঘৃণা ও অপছন্দের চশমা দিয়ে তাদেরকে দেখা সত্ত্বেও কাফিরদেরকে ইসলামের দিকে এবং পরকালীন মুক্তির দিকে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে, তাদের প্রতি যেখানে সম্ভব দয়া এবং ক্ষমা দেখিয়ে।
আমরা আল্লাহতা’আলার সাহায্য কামনা করছি যেন তিনি তার দ্বীনকে বিজয়ী করেন এবং তাঁর প্রিয় বান্দাদেরকে বিজয়ী করেন এবং কুফফারদেরকে অপমানিত করেন।
“আল্লাহ নিজ কাজে পূর্ণ ক্ষমতার অধিকারী এবং পারঙ্গম, কিন্তু অধিকাংশ লোক তা জানে না।“ (সুরা ইউসুফ ১২, ২১)
আল্লাহতা'আলা তার রাসুলের ওপর শান্তি ও রহমত বর্ষন করুন।
আরও পড়ুনঃ
The Dust will never settle down
বাংলা অনুবাদ বইঃ এ যুদ্ধ কিয়ামত পর্যন্ত চলতে থাকবে।
লেখকঃ শাইখ আনওয়ার আল আওলাকি রাহিমাহুল্লাহ
শাইখ সালেহ আল মুনাজ্জিদের islamqa.com থেকে একাধিক ফতোয়া অবলম্বনে সংকলিত।
সবগুলো অনুবাদ ও সংকলনেঃ Collected Notes and Discussion