এইমাত্র আমি এক সিরিয়ান
ভাইয়ের সাথে কথা বললাম, যে গত ১৩ বছর ধরে গুয়েন্তানামো কারাগারে বন্দি ছিল । আমি
তাকে শেষ দেখেছিলাম বাগরামে ২০০২ সালে, যখন আমেরিকান সৈন্যরা তাকে মারছিল এবং টেনে
হেঁচড়ে একটি কক্ষে নিয়ে যাচ্ছিল । এত দীর্ঘ সময় কারাগারে থাকলেও তার বিরুদ্ধে কোন
অভিযোগ তারা গঠন করতে পারেনি এমনকি ২০০৬ সালে তাকে মুক্তি বা অন্যত্র স্থান্তরের
ছাড়পত্র দেয়া হলেও তা কার্যকর হয়নি । এতগুলো বছর পর তার চেহারা দেখে
প্রত্যাশিতভাবেই যেন এক অপরিচিত, সম্পূর্ণ ভিন্ন একজন মানুষকে দেখলাম । সত্যি কথা হচ্ছে একজন ভিন্ন মানুষকে দেখাইতো স্বাভাবিক
কারন, অত্যাচারের কষ্ট এবং জোর করে অনশন
ভাঙ্গানোর সময়ের অকথ্য ভাষার গালি তাকে এতগুলো বছর সহ্য করতে হয়েছে ।
সিরিয়ায়
বিপ্লব শুরু হওয়ার আগে তার স্ত্রী যখন শুধুমাত্র তার মুক্তির দাবি জানিয়েছিল তখন
তার স্ত্রীকে আসাদ সরকার এক বছর কারাগারে বন্দী করে রাখে । এই ভাইটি গুয়েন্তানামো
কারাগারে থাকতে আসাদ বাহিনীর বোমার আঘাতে তার ১৫বছরের ছেলের মৃত্যুর সংবাদ পায় ।
শেষবার যখন সে তার ছেলেকে দেখেছিল তখন তার বয়স ছিল ৩বছর । আমেরিকানদের হাতে অপহৃত
হওয়ার আগে আমি তার পরিবারের সাথে দেখা করেছিলাম আর স্মরণ করছিলাম সে তার ছেলেকে কত
ভালোবাসত ।
সুতরাং প্রত্যাশিতভাবেই তুমি ধারনা করতে পারো তার চেহারা হবে তিক্ত,
বিষাদপূর্ণ এবং সময়ের সাথে চলা অত্যাচার এবং সংগ্রামের কারনে বিবর্ণ একটি মুখ ।
প্রকৃতপক্ষে যদিও এই ভাইটির বয়স হয়েছিল, চোখ ধূসর হয়েছিল এবং দীর্ঘদিনের অনাহারের
প্রভাব পড়েছিল তারপরও তার চেহারা থেকে একটা নূর আমার কম্পিউটারের পর্দাকে ছাপিয়ে
দিচ্ছিলো । তার হাসি এমন ছিল যা সবাইকে প্রভাবিত করতে পারে এবং গুয়েন্তানামো
কারাগারের অন্য বন্দীদের ব্যাপারে তার উদ্বেগ ছিল দৃঢ়প্রতিজ্ঞ । আমরা শাকেরআম্মের
এবং অনন্যা বন্দীদের নিয়ে কথা বলছিলাম যারা এখনও মুক্তি পায়নি এবং এই ভাইটি বাকি
বন্দীদের মুক্তির লক্ষ্যে তার চেষ্টাকে উৎসর্গ করতে চায় । সে বলছিল, উরুগুয়ের মানুষ তাকে এবং অন্য পাঁচ অভিবাসীকে কি আন্তরিক অভ্যর্থনা এবং
আতিথেয়তা জানিয়েছে । সে মিডিয়া সম্বন্ধে জানতে আগ্রহী এবং তার ঘটনা মিডিয়াতে জানাতে
চাচ্ছিল । সে মুক্তি পাওয়া অন্য গুয়েন্তানামো বন্দীদের সম্বন্ধে এবং পৃথিবীতে কি
হচ্ছে তাও জানতে চাচ্ছিল । আমি তাকে টুইটার, ফেসবুক, ইউটিউব ইত্যাদির সাহায্য
নেওয়ার জন্য বললাম যেগুলো সম্বন্ধে সে এর আগে শোনেনি বা ব্যবহার করেনি । আমি এটা
ভেবে বেশি চিন্তিত ছিলাম, যে পৃথিবী সে চিনত তা এখন পুরোপুরি বদলে গেছে । আমরা এটা
নিয়ে হাসাহাসি করলাম এবং বললাম এই ধরণের আধুনিক বিষয়ে ইউনিভার্সিটি অফ ইউসুফে (
কারাগারে) এখনও কিছু পড়ানো হয়নি ।
তার ছেলের জন্য সে একই সাথে
দুঃখিত এবং আনন্দিত কারন তার ছেলে একজন শহীদ ইনশাআল্লাহ্ । আমি তার এই
প্রতিক্রিয়া শুনে কাঁদতে চাচ্ছিলাম কিন্তু আমি চোখের পানি সামলে এই আলোচনার বিষয়টা
পরিবর্তন করি ।
সে আগামী কিছুদিনের মধ্যে
তার পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে মিলিত হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে । তার অন্য
সন্তানেরা বড় হয়ে গেছে এবং মাঝখানের হারিয়ে যাওয়া বছরগুলো ফিরে পাওয়া অসম্ভব । আমি
মাত্র ৩ বছর দুর্বিষহ কষ্ট সহ্য করেছি, কিভাবে কেউ ১৩ বছর এই কষ্ট সহ্য করে ?
আল্লাহ্ তার পরিবারের সাথে পুনর্মিলন আনন্দ, ভালোবাসা, ধৈর্য এবং পরস্পরের বোঝাপড়া
দিয়ে পরিপূর্ণ করে দিন ।
ইতিহাস সাক্ষী থাকবে
গণতন্ত্র এবং স্বাধীনতার নামে এই মানুষগুলো কি দুঃখকষ্ট সহ্য করেছে । আগামী
প্রজন্ম যেন এই ইতিহাস ভুলে না যায় এটা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে ।