পৃষ্ঠাসমূহ

‘ফিদায়ী অভিযানের’ বিষয়ে ইসলামের বিধান – শাইখ ইউসূফ ইবন সালেহ আল-উয়াইরী [পর্ব ১]



ভূমিকা 
যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার জন্য, যিনি আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন,

وَلَوْلَا دَفْعُ اللَّهِ النَّاسَ بَعْضَهُم بِبَعْضٍ لَّفَسَدَتِ الْأَرْضُ وَلَٰكِنَّ اللَّهَ ذُو فَضْلٍ عَلَى الْعَالَمِينَ [٢:٢٥١]

“ আল্লাহ  যদি একদল  মানুষকে  অপর  দল  দ্বারা  প্রতিহত  না  করতেন  তাহলে  সমগ্র  পৃথিবী  বিধ্বস্ত  হয়ে  যেত” ১

দূরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক দিক-নির্দেশনা দানকারী ইমাম, সাইয়্যেদুল মুরসালিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি যিনি ঘোষণা দিয়েছেন,

"সেই মহান সত্তার শপথ! যার হাতে আমার জীবন, আমার ইচ্ছে হয় যে, আমি আল্লাহর পথে (যুদ্ধ করে ) নিহত হই, আবার জীবিত হই, আবার নিহত হই আবার জীবিত হই, আবার নিহত হই । ” ২


এবং তিনি আরও বলেছেন,

"তোমরা আমল করতে থাক, কারণ যাকে যে আমলের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে, তার জন্য সেই কাজ সহজ করে দেয়া হবে। ” ৩

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা এই উম্মাহর সম্মানে জিহাদের বিধান দিয়েছেন, যদিও আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা জানেন যে এটি আমাদের জন্য কতটা অপছন্দনীয়। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছেন,
كُتِبَ عَلَيْكُمُ الْقِتَالُ وَهُوَ كُرْهٌ لَّكُمْ ۖ وَعَسَىٰ أَن تَكْرَهُوا شَيْئًا وَهُوَ خَيْرٌ لَّكُمْ ۖ وَعَسَىٰ أَن تُحِبُّوا شَيْئًا وَهُوَ شَرٌّ لَّكُمْ ۗ وَاللَّهُ يَعْلَمُ وَأَنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ [٢:٢١٦]

"তোমাদের উপর যুদ্ধ ফরজ করা হয়েছে, যদিও তা তোমাদের নিকট অপছন্দনীয় । তোমরা এমন বিষয়কে অপছন্দ করছ মূলতঃ যা তোমাদের জন্য মঙ্গলজনক । পক্ষান্তরে তোমরা এমন বিষয়কে পছন্দ করছ যা প্রকৃতপক্ষে তোমাদের জন্য অকল্যাণকর । বস্তুত আল্লাহ জানেন তোমরা জানো না ।” ৪

আজ মানুষ ইসলামের এই বিরাট নির্দেশটিকে অবহেলা করেছে এবং এর বিনিময়ে দুনিয়ার এই স্বল্প মূল্যের জীবনকেই বেছে নিয়েছে । তারা যার প্রতি মোহগ্রস্থ সেটিকেই নিজেদের জন্য কল্যাণকর মনে করছে, আর এ কারণেই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা যা আদেশ দিয়েছেন তা অনুধাবন করতে ব্যর্থ হচ্ছে।
'কুফর' -এর প্রতিনিধিত্বকারী রাশিয়ান আর্মির বিরুদ্ধে চেচনিয়াতে যুদ্ধ করার তৌফিক দান করে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা আমাদের প্রতি রহমত বর্ষণ করেছেন এবং আল্লাহ তা'আলার কাছে আমরা প্রার্থনা করি, যেন তিনি আমদেরকে শক্তি এবং সাহায্য দান করেন। আমরা আল্লাহ তা'আলার প্রশংসা করি এ কারণেও যে, তিনি আমাদেরকে বহুবার শত্রুদের বিরুদ্ধে বিজয়ী হইয়ার সুযোগ দিয়েছেন। আমাদের অনেকেই তাদের প্রতিজ্ঞা (যেমন শাহাদাত) পূর্ণ করেছেন এবং আমাদের অনেকেই এখনো অপেক্ষায় রয়েছেন।

শোষণ আর নির্যাতনের যাঁতাকলে পিষ্ট হবার পর জিহাদের মাধ্যমে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা আমাদের সম্মান প্রদান করেছেন এবং আমাদের সঙ্গে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা তার ওয়াদা পূর্ণ করেছেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার অপার করুণায় আমাদের শহীদ ভাইয়েরা তাদের রক্ত দিয়ে এমন এক ইতিহাস তৈরি করে গিয়েছেন, যা নিয়ে আমরা গর্ব অনুভব করি। আমরা শুধু জানি যে, 'লা ইলাহ ইল্লাল্লাহ ' -এই কালিমার জন্যেই তাদের রক্ত নির্গত এবং প্রবাহিত হয়েছে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার জন্যেই আমাদের ভাইদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো টুকরো টুকরো হয়েছে এবং আল্লাহর শানেই তাদের মাথাগুলো ছিন্ন ভিন্ন হয়েছে। আর তাদের এই কুরবানী আমাদের শাহাদাতের আকাংখাকে আরও তীব্রভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে, যাতে আমরা আগামী কালই আমাদের প্রিয়তম মানুষ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তার সাথীদের সাথে সাক্ষাত লাভ করতে পারি। আহা !!!! সেটি কত বড় সুখবর এবং আনন্দদায়ক ব্যাপার !!  সেই ব্যক্তি কতই না সৌভাগ্যবান, যে তার রবের সাথে সাক্ষাত করবে এবং তার রবকে তার উপর সন্তুষ্ট দেখতে পাবে এবং সে উত্থিত হবে নবী, সিদ্দীক ও সালেহীনগণের সাথে এবং সঙ্গী হিসেবে তারা কতই না উত্তম!

আমরা আল্লাহর কসম খেয়ে বলছি, আমাদের একেকজন তো উমাইর ইবনে আল হামাম আল আনসারিরই মত, যিনি অনবরত বলছিলেন,
'এই খেজুরগুলো খাওয়া পর্যন্ত যদি আমি জীবিত থাকি, তাহলে সে তো এক দীর্ঘ জীবন। '  ৫  

মুসলিমরা দুর্বল হয়ে যাবে- এই আশঙ্কা যদি আমরা না করতাম, তাহলে আমরা সকলে ইবনে আল হামাম এর মত করার জন্য পরস্পরের সাথে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতাম। কেননা, নিঃসন্দেহে আমরা আমাদের প্রিয় মানুষদের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য মরিয়া হয়ে আছি। সুতরাং মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার কাছে আমরা প্রার্থনা করি, তিনি যেন আমাদের সঠিক পথে পরিচালিত করেন এবং তার সাথে সাক্ষাত লাভের পূর্ব পর্যন্ত যেন তার পথে আমাদেরকে দৃঢ় রাখেন।

যে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধক্ষেত্র রচনা করে চেচনিয়ার সাহসী যোদ্ধারা রাশিয়াকে ভীত-সন্ত্রস্ত করেছে, তার অন্যতম একটি দিক হল ফিদায়ী আক্রমণ। যারা এ দায়িত্ব পালন করেন তারা তাদের জীবন উৎসর্গ করেন, যেন তারা অতি দ্রুত আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার নিকট থেকে পুরস্কার পেতে পারেন। পৌত্তলিক কুফফার শত্রুর হৃদয়ে কম্পন আর ত্রাস সঞ্চার করে তারা অতি দ্রুত আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার রাহে নিজেদের সমর্পণ করেন, অতি উচ্চ বাসস্থানের (জান্নাত) তীব্র আকুতির জন্য, সেই মহান সত্তা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা, যিনি সকল দয়ালু থেকে অতি বড় দয়ালু এবং সকল ক্ষমাকারীর থেকে সবচেয়ে বড় ক্ষমাকারী।

এই উম্মাহ এতদিন পর্যন্ত দ্বীনের জন্য কেবল পুরুষদের আত্মোৎসর্গের ইতিহাসই শুনে এসেছে, নারীদের আত্মোৎসর্গের সঙ্গে তারা পরিচিত নয়।  মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার ইচ্ছায় 'হাওয়া বারায়েভা' নামের এক তরুণী এমন একজন আত্মোৎসর্গকারী শহীদ হিসেবে ইতিহাসের পাতায় নিজেকে চিরস্মরণীয় করে রেখেছেন আর তার আত্মোৎসর্গের মধ্য দিয়ে আমাদের জন্য এক অসাধারণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গিয়েছেন।

রাশিয়ানরা এখন সকল পথ থেকেই (নারী কিংবা পুরুষ) তাদের মৃত্যুর প্রহর গুনতে পারে এবং হাওয়া বারায়েভার মত নারীর কারণে ভীত - বিহবল হতে পারে। প্রতিটি পুরুষেরই তার মত নারীর দিকে হিংসার (গিবতা) দৃষ্টিতে দেখা উচিত। প্রতিটি কাপুরুষেরই ধূলা- কাদায় জর্জরিত করে নিজের মাথা মাটিতে পুতে রাখা উচিত। কেননা, এই নারী যা করেছে তা খুব কম পুরুষই করতে পেরেছে। প্রতিটি সত্যের অনুসারীরই তার মত নিজেদেরও বিলিয়ে দেয়া উচিত। আর এই উম্মাহর মাঝে এমন একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপিত হওয়ার, এই উম্মাহর গর্বিত হওয়া উচিত। আমরা নিশ্চিত, তার মত তরুণী যে উম্মাহর মাঝে রয়েছে, আল্লাহর কসম, সেই উম্মাহর কখনোই কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হতে পারে না।

যা হোক, আমরা যখন আমাদের বোনের এই আত্মোৎসর্গের ঘটনায় খোশ মনে ছিলাম এবং তার জন্য আল্লাহর নিকট মাগফিরাত এবং রহমত কামনা করছিলাম, যে সময় আমরা কিছু ই-মেইল পেলাম যা আমাদের আনন্দের মাঝে মেঘের ঘনঘটার সূচনা করল ।  এই প্রপ্রাগান্ডাটি আমাদের শত্রু কিংবা বিদ্বেষী কারো থেকে নয়, বরং এমন লোকদের কাছ থেকে যাদের নিকট আমরা গঠনমূলক সদুপদেশ আশা করেছিলাম। তারা হাওয়া বারায়েভা এর মত বড় মুজাহিদাকে দোষী সাব্যস্ত করল এবং প্রপ্রাগান্ডা করল যে, হাওয়া বারায়েভা এর মত এরকম আত্মহত্যা (!) অনুমোদনযোগ্য নয়। শুধু তাই নয়, তারা মত দিল যে, আমাদের ওয়েব সাইটে তার পরিচিতি তুলে ধরাটাও অনুমোদনযোগ্য নয়, বরং আমাদের উচিত ছিল তার সমালোচনা করা। তারা এ ক্ষেত্রে এমন কিছু দলীলের উল্লেখ করেছেন যাতে এটিই প্রতীয়মান হয় যে, তারা তাদের প্রদত্ত দলীলের অপপ্রয়োগ করেছেন।

এই আলোচনায় আমরা এই বিষয়টি পরিষ্কার করব (ইনশাল্লাহ) যে, হাওয়া বারায়েভা এবং অনুরূপভাবে আব্দুর রহমান আশ-শিশানি, কাজী মাওলাদি, খাতিম, তার ভাই আলী, আব্দুল মালিক এবং অন্যান্যরা আল্লাহর ইচ্ছায় চিরস্থায়ী জান্নাতে সবুজ পাখীর হৃদয়ে স্থান নিয়ে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার আরশ থেকে ঝুলন্ত ঝাড়বাতিতে তাদের আহার খাচ্ছেন।

আত্মোৎসর্গকারী ফিদায়ী আক্রমণের বিষয়ে আলোকপাত করার পূর্বে আমাদের উচিত হবে এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্টভাবে উত্তর দেওয়া।

প্রথমতঃ তুমি যদি না জানো, তাহলে তুমি কি জিজ্ঞেস করে নেবে না? কোন একটি বিষয়ে সুচিন্তিত এবং সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে বা ফাতাওয়া না জেনে কারো জন্যেই এ সম্পর্কে উল্টোপাল্টা মন্তব্য করা সঙ্গত নয়। যারা আমাদের সমালোচনা করেন তারা যদি এ বিষয়ে সর্ব প্রথম নিজেরা অনুসন্ধান করতেন, তাহলে তারা দেখতেন যে, তাদের উত্থাপিত অভিযোগের সঙ্গে শারীয়াহ-বিশারদ আলিমগণ আদৌ একমত পোষণ করেননি। সুতরাং, এই কৃতিত্বপূর্ণ কাজের জন্য কখনোই আমাদের সমালোচনা করা উচিত নয়।

দ্বিতীয়তঃ আমরা সত্য অনুসন্ধানী ভাইদের অনুরোধ করি, পূর্ববর্তী শারীয়াহ বিশারদ, ইমামদের রায়কে খন্ডন করার পূর্বে আমাদের সমালোচনা করবেন না ।

তৃতীয়তঃ প্রিয় ভাই ও বোনেরা! প্রতিটি ফিদায়ী আক্রমণই বৈধ নয়, কিংবা সকল ফিদায়ী আক্রমণই নিষিদ্ধ নয়। বরং এ বিষয়ে রায়টি শত্রুর অবস্থা, যুদ্ধ পরিস্থিতি, সক্ষম শহীদের ব্যক্তিগত পরিস্থিতি এবং অপারেশনের নিজস্ব ধরণ বা উপাদানের উপর নির্ভর করে। এভাবে প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে ভালভাবে না জেনে-বুঝে কেউ এমন হামলা সম্পর্কে কোন মতামত দিতে পারে না। আর এতদ অবস্থা সম্পর্কে কেবল মুজাহিদদের নিকট থেকেই জানা যেতে পারে , কুফফারদের থেকে নয়। সেক্ষেত্রে, আমাদের অবস্থা ও পরিস্থিতি সম্পর্কে না জেনে কিভাবে আমাদের বিরুদ্ধে আপনারা অজ্ঞতার অভিযোগ উত্থাপন করেন? এবং এই হামলাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেন?  ৬ 

পরিশেষে, আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি , তিনি যেভাবে পছন্দ করেন , যেভাবে রাজি-খুশী থাকেন, যেভাবে মুজাহিদদের সফলতা দান করেন এবং তিনি যেন অনেক শত্রুকে মেরে ফেলার পর তার রাস্তায় আমাদের শহীদ হিসেবে কবুল করে নেন।

إِنَّ مَوْعِدَهُمُ الصُّبْحُ ۚ أَلَيْسَ الصُّبْحُ بِقَرِيبٍ [١١:٨١]
 "প্রভাতই তো তাদের প্রতিশ্রুত সময়। প্রভাত কি খুব নিকটে নয়? ৭


আত্মোৎসর্গকারী ফিদায়ী আক্রমণের সংজ্ঞা এবং শত্রুর ওপর তার ফলাফলঃ
ফিদায়ী আক্রমণের বা আত্মোৎসর্গমূলক অপারেশন বলতে এমন অপারেশন বুঝায় যেখানে এক  বা একাধিক ব্যক্তি তাদের থেকে অস্ত্রশস্ত্রে এবং সংখ্যাধিক্যে প্রবল শত্রুর বিরুদ্ধে অপারেশন পরিচালনা করে; যদিও তারা জানে যে এতে নিশ্চিতভাবে তাদের মৃত্যু ঘটবে।

সম্প্রতি এমন ক্ষেত্র  তৈরী হয়েছে যে, ব্যক্তির দেহ, যানবাহন বা স্যুটকেস বিস্ফোরক দ্বারা সজ্জিত করে শত্রুর ঘাটিতে অথবা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় প্রবেশ পূর্বক হামলা চালিয়ে শত্রু ব্যূহের সর্বোচ্চ ক্ষতি সাধনের উদ্দেশ্যে যথাযথ স্থানে বিস্ফোরিত করা হয়। সাধারণতঃ যিনি এই ঘটনাটি ঘটান তিনিই এতে সর্বপ্রথম মৃত্যুবরণ করেন।

 আরেকটি কৌশল হল, কোন আর্মড মুজাহিদ যখন বাঁচার কোন প্রস্তুতি না নিয়ে কিংবা বাঁচার সম্ভাবনা উপেক্ষা করে শত্রুর ব্যারাকে অথবা মিলনস্থলে অতর্কিতে ঢুকে অনবরত গুলিবর্ষণ করে, উদ্দেশ্য থাকে যত বেশি সংখ্যক সম্ভব শত্রু নিধন করা, যখন তিনিও প্রায় নিশ্চিত যে, এতে তিনিও মারা যাবেন। ৮

"আত্মঘাতী বোমা হামলা” বলে যে লেবেল সেঁটে দেয়া হয় তা ভ্রান্ত ও সঠিক নয়। মূলতঃ এই গালি টি আমাদের ভাইবোনদের এই কাজ হতে অনুৎসাহিত করার জন্য ইহুদীদের চক্রান্তের ফসল। পূর্ব এবং পশ্চিমের মাঝে কত বড় ব্যবধান! অসুখী মানসিকতা, ধৈর্য্যের অভাব এবং ঈমানের দুর্বলতার কারণে যে আত্মহত্যা করে, সে তো জাহান্নামের আগুনে জ্বলবে এবং সে আল্লাহর লা'নত অর্জন করেছে। অন্যদিকে শাহাদাত বরণকারী ব্যক্তি ঈমানের শক্তিতে বলিয়ান হয়ে পূর্ণ আন্তরিকতা এবং নিষ্ঠার সাথে নিজেকে আল্লাহর রাহে উৎসর্গ করার মধ্য দিয়ে ইসলামের নিজয় আনয়ন করে এবং আল্লাহর বাণীকে বুলন্দ করে।

আমরা আমাদের অভিজ্ঞতার আলোকে দেখেছি, আত্মোৎসর্গকারী ফিদায়ী আক্রমণ ব্যতীত শত্রুর বিরুদ্ধে ফলাফল আনয়নের ক্ষেত্রে আর কোন অপেক্ষাকৃত উৎকৃষ্ট কৌশল নেই, যে কৌশল দিয়ে তাদের হৃদয়ে বেশি ত্রাস সঞ্চার করা যেতে পারে। একদিকে যেমন তা তাদের প্রচণ্ড আঘাতে পর্যুদস্ত করে, অন্যদিকে তাদের উদ্যম ও প্রাণশক্তিকে বিপর্যস্ত করে তুলে। এর ফলে, ভীরুতার কারণে জনগণের সঙ্গে মেশা থেকে এবং জনগণকে শোষণ-নির্যাতন করা থেকে তারা বিরত থাকে এবং লুটপাট ও হেনস্থা করা থেকে দূরে থাকে। এই জাতীয় অপারেশন যাতে সংঘটিত না হতে পারে, সেদিকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে  ব্যস্ত থাকার কারণে অন্য অত্যাচার নির্যাতন থেকে মানুষ রেহাই পায়। সকল প্রশংসা আল্লাহ তা'আলার যার ইচ্ছায় ওদের অনেকগুলি গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে, উপরন্তু, ওদের দশা এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে, খোদ পুতিন তার সরকারের স্বরাষ্ট্র দফতর এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপর সমস্ত দায়ভার চাপিয়ে ওদের অভিযুক্ত করেছে এবং মন্ত্রণালয় দুটির উচ্চ পর্যায়ে ব্যাপক রদবদলের হুমকি দিয়েছে। যে ট্রুপগুলো ফিদায়ী আক্রমণ ভন্ডুল করতে সচেষ্ট বা তৎপর নয় তাদেরকে ময়লা-পচা পরিষ্কার, আহতদের শুশ্রুষা এসব কাজে নিয়োজিত করা হয়েছে। এই হল ওদের নৈতিক অবস্থা!    

বস্তুগত পর্যায়ে এই অপারেশন শত্রুর জন্য বয়ে আনে মারাত্মক ক্ষতি, আর আমাদের জন্য সর্বনিম্ন ত্যাগ। শত্রুর ব্যাপক ক্ষতির তুলনায় এই ত্যাগ খুবই সামান্য, বস্তুতঃ শত্রুর বিস্ফোরকসমূহের ক্ষতি এবং যানবাহনের যুদ্ধ পরিত্যক্ত জিনিস হিসেবে আমাদের প্রাপ্তির ব্যাপারটি যেন এমন যে, আমরা আমাদের পদ্ধতিতেই রাশিয়ানদের তা ফেরত দিতাম। এর মানবিক ত্যাগ হল একটি মাত্র জীবনের ত্যাগ, যে মূলতঃ শহীদ ও বীর আল্লাহর ইচ্ছায় সে সরাসরি জান্নাতে চলে গেছে। পক্ষান্তরে, শত্রুর জন্য ওদের ক্ষতির দিক সর্বোচ্চ । গত অপারেশনের পর ওদের নিহত ও আহতের সংখ্যা ছিল ১৬০০ এবং এর ফলে চেচনিয়াতে রাশিয়ান  ফোর্সের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক স্থাপনাটি সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়ে গেছে।

এ সকল কিছু অর্জিত হয়েছে কেবল চারজন বীরের কারণে। আমরা দৃঢ়ভাবে উপলব্ধি করি এরকম অপারেশন অনবরত চলতে থাকলে রাশিয়ানরা আর বেশী দিন আমাদের ভূমিতে থাকতে পারে না। হয় তারা আক্রমণের সহজ টার্গেট পরিণত হতে পুনরায় জোটবদ্ধ হতে ভয় পাবে, নতুবা এই হামলাগুলি মোকাবিলার জন্য একত্রিত হবে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা চাইলে ফিদায়ী আক্রমণই তাদের ছিন্নভিন্ন করার জন্য যথেষ্ট হবে। যদি বাস্তবিক তারা বিষয়গুলোকে তাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে চায় প্রতিটি শহরে তাদের ৩,০০,০০০ সৈন্যের টুপ লাগবে, আর তা কোন অতিরঞ্জন নয়।

--------------------------------------------------------------------------------------------------------------

১. সূরা আল বাকারাহঃ ২৫১
২. অনুরূপ শব্দ দ্বারা আল-বুখারী (৩৬, ২৭৯৭, ৭২২৬) এবং মুসলিম (১৮৭৬)-র বর্ণিত হয়েছে । আল-আলবানীর 'সহীহ আত তারগীব' (১২৬৬, ১৩৫৪)এবং 'সহীহ আল জামী' (১৪৯১, ৭০৭৫) তে সহীহ বলা হয়েছে । আল ওয়াদীর 'আল জামই আস সহীহ' (২/৩১৯, ৩/১৭১, ৬/২৬৯) এবং 'আস-সহীহ আল মুসনাদ' (১০৫৩) - এ হাসান হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে । হাফিজ ইবনে আবদিল বার (রহীমাতুল্লাহ) 'আত-তামহীদ' (১৪/৩৪০) এ একে সহীহ বলেছেন।                 
৩.  অনুরূপ শব্দ দ্বারা আরও বর্ণিত হয়েছে আল বুখারী (৪৯৪৯, ৭৫৫১), মুসলিম (২৬৪৭, ২৬৪৯)। আল আলবানী 'আস সিলসিলাহ আস-সাহিহাহ' (৮৯৮) এবং 'সহীহ আল জামী' (১০৭৪) তে এটিকে হাসান উল্লেখ করেছেন । হাফিজ ইবনে আবদিল বার তার 'আত-তাহমীদ' (৭/৬) এ একে সহীহ বলেছেন।         
৪. সূরা আল বাকারাহঃ ২১৬
৫. মুসলিম কর্তৃক তার সহীহ হতে বর্ণিত হাদিসের সূত্র ধরে , বদরের দিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম বলেন, 'সেই জান্নাতের দিকে উঠে দাঁড়াও যার প্রশস্ততা আসমান এবং জমিনের সমান।' উমাইর ইবনে আল হামাম (রদিআল্লাহু আনহু) বললেন, "হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম! জান্নাতের প্রশস্ততা কি আসমান এবং জমীনের সমান? ” রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তর দিলেন,  "হ্যাঁ! " । উমাইর তখন বললেন, "বাখিন! বাখিন!” রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, "কোন জিনিসটি তোমাকে বাখিন বাখিন বলতে উদ্ধুদ্ধ করেছে?” সুতরাং উমাইর (রদিআল্লাহু আনহু) তখন উত্তর দিলেন, "সেই আল্লাহর কসম! হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি এর একজন অধিবাসী হওয়ার আশা রাখি এটি ছাড়া আর কোন ব্যাপার নয়।” সুতরাং রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, "তাহলে নিশ্চিত তুমি তাদের একজন হবে।” পরে সে কিছু খেজুর নিল এবং খেতে শুরু করল। তখন্সে আক্ষেপের সাথে বলল, "হায়! এই খেজুর খেতে যদি আমার দেরী হয়ে যায়, তাহলে নিশ্চিতভাবে এই জীবনের জন্য এটি এক দীর্ঘ সময়। ” সুতরাং, তিনি খেজুর গুলি নিক্ষেপ করলেন এবং তার মৃত্যু  না হওয়া পর্যন্ত শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করলেন। এটি মুসলিম (১৯০১) কর্তৃক বর্ণিত এবং আল-আলবানীর 'সহীহ আত তারগীব' (১৩১২) কর্তৃক সত্যায়নকৃত। 
৬ . শাইখ আবু কুতাইবাহ আশ-শামি বলেন, "মুজাহিদিন ভাইদের প্রতি একটি বাধ্যতামূলক ব্যাপার যে, তাদের নিজেদের কাজগুলিকে আরও সুসংগঠিত এবং সুনিবদ্ধ করার নিমিত্তে কিছু বিষয় গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতে হবেঃ যেখানে সর্বাধিক সংখ্যক শত্রু সেনার ক্ষতি সাধন সম্ভব এমন সামরিক টার্গেটে নিজেদের বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়ার মত সামরিক অপারেশন পরিচালনা করাতে দৃষ্টি নিবদ্ধ করা, আল্লাহর আইনের বিরুদ্ধে মানব রচিত আইন যেখানে রচনা করা হয়, সেরকম মুশরিকী সংসদের মত টার্গেটে আঘাত করা, কিংবা এমন বিল্ডিং টার্গেট করা যেখানে হামলার পরেও তাওয়াগিতরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে । কিন্তু এরকম উপায় ব্যতীত অন্য কোন উপায়ে সদ্যই তাদের আক্রমণ করা যায়, সেক্ষেত্রে এরকম ফিদায়ী অপারেশন চালানো উচিত নয়।এটি ভাইদের প্রতি একটি বাধ্যতামূলক অনুসৃত বিষয় যে, দুই-একজনকে হত্যা করতে এমন অপারেশন চালানো উচিত নয়। এর কারণ হল- ঐ ভাই যেন দামী মুক্তার মত এবং এরকম ভাইদের সংখ্যা অনেক কম (যারা নিজেদের ইচ্ছায় আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিজেদের জীবনকে উৎসর্গ করে দিতে ইচ্ছুক)। তাই এটি বাধ্যতামূলক যে, খুব ব্যাপক ও লোম হর্ষক বৃহৎ টার্গেট ছাড়া তাদের ব্যবহার না করা।”
৭. সুরা হুদঃ ৮১
৮. আরেক ধরনের ফিদায়ী অপারেশন যা "শাহাদাতমূলক অপারেশনঃ শাহাদাতের সর্বোচ্চ চূড়া” নামক পুস্তকে উল্লেখ করা হয়েছে। আর তা হল, "অথবা সে একাকী কোন বিস্ফোরক দ্রব্য শরীরে বহন না করেই শত্রুর কোন ঘাঁটি আক্রমণ করার জন্য যায় যাতে মজুদ রয়েছে প্রচুর পরিমাণে বিস্ফোরক দ্রব্য। এটি ধ্বংস করা সম্ভব নয়, যতক্ষণ না সে নিজে ঐ বিস্ফোরক দ্রব্যগুলির বিস্ফোরণ ঘটায় (গুলি করা বা এরকম কিছুর মাধ্যমে) যেখানে সে নিজে মাঝখানে থাকে (এবং এভাবে শাহাদাত বরণ করে)। শাহাদাতমূলক অপারশনের অনেক ধরণ আছে যা আমাদের পক্ষে এখানে উল্লেখ করা এবং গণনা করা সম্ভব নয়। সুতরাং সে নিজেকে বিস্ফোরক কিংবা আগুণের মধ্যে (সূরা বুরুজের গর্তের লোকদের ঘটনার অনুরূপ) উৎসর্গ করে অথবা অনুরূপ কোন পদ্ধতি অবলম্বন করে-  নিয়মটি একই রকম এবং এর লক্ষ্যও একই  (আল্লাহর বাণীকে উন্নীত করা এবং দ্বীনের কল্যাণের জন্য মুসলিমদের শত্রুদের ক্ষতি সাধন করা) - মৃত্যু অর্জনের উপায় বিভিন্ন রূপ কিন্তু মৃত্যু সর্বক্ষেত্রে একই।


ইনশা আল্লাহ চলবে...

 অনুবাদঃ সংগৃহীত