আল্লাহ সুবহানা ওয়াতাআলা, যিনি সর্বশক্তিমান, বলেন,
"পক্ষান্তরে তোমাদের কাছে হয়তো
কোন একটা বিষয় পছন্দসই নয়, অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর হয়তোবা কোন একটি বিষয়
তোমাদের কাছে পছন্দনীয় অথচ তোমাদের জন্যে অকল্যাণকর। বস্তুতঃ আল্লাহই জানেন, তোমরা
জান না।" (আল-বাকারা ২: ২১৬)
কুরআনের
এই আয়াত বান্দার জন্যে বেশ বিবেচনাপূর্ণ, অর্থবহ এবং এতে
বান্দার জন্য উপকারিতাও রয়েছে । বান্দা যখন অনুধাবন করে যে
দুর্ভাগ্য থেকেও তার কোন আকাঙ্ক্ষিত বস্তু আসতে পারে , আবার
তার আকাঙ্ক্ষিত বস্তু থেকে কোন দুর্ভাগ্য জন্ম নিতে পারে, তখন কোন আনন্দের উপলক্ষ থেকে যে বিপদের
সুত্রপাত হতে পারে এই অনিশ্চয়তা থেকে সে নিরাপদ অনুভব করবে না, একই সাথে কোন
বিপদ থেকেও যে আনন্দের উপলক্ষ আসতে পারে সেই আশাও সে হারাবে না । নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সুবহানাওয়াতাআলা
তা জানেন যা বান্দা জানে না আর এই পরিপ্রেক্ষিতে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো অবশ্যই লক্ষ্য
রাখা উচিত
ঃ
আল্লাহ সুবহানাওয়াতাআলার সিদ্ধান্তগুলোর আনুগত্য
করার চেয়ে বান্দার জন্য উপকারি আর কিছুই নেই, যদিও প্রথম দিকে তা খুবই কঠিন মনে হয়, কারণ এই আনুগত্যের
ফলাফল হবে সর্বোত্তম, আনন্দদায়ক এবং মনোরম । একিভাবে যা নিষেধ করা হয়েছে তা করার চেয়ে
ক্ষতিকর আর কিছুই হতে পারে না, যদিও বান্দা তা করতে ভালবাসে । এর সব পরিণতি শুধুই কষ্ট
, গভীর দুঃখ, মন্দ আর দুর্ভাগ্য।
উপরন্তু
, পরিশেষে বান্দা যে গভীর আনন্দ আর অন্তহীন সুখ অনুভব করবে তার তুলনায় সে এখানে যে ক্ষুদ্র কষ্ট অনুভব করবে তা কিছুই না । একিভাবে
যা কিছু তাকে পরিহার করতে বলা হয় তাও সে যে বিশাল পুরষ্কার পাবে আর যে বিশাল কষ্ট আর
দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি থেকে বেঁচে যাবে তার তুলনায় কিছুই না।
এইভাবে
আমরা দেখতে পাই যে ব্যক্তি কিছু জানে না, তার চিন্তা জীবনের প্রাথমিক জিনিসগুলোর বাইরে
যায় না; তার দৃষ্টি জীবনের লক্ষ্যের দিকে থাকে না, কিন্তু যে বুদ্ধিমান তার জীবনের
প্রতিটি কর্মের পিছনে তার লক্ষ্যের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ থাকে।
বুদ্ধিমান
ব্যক্তি নিষিদ্ধ জিনিসগুলোকে এমনভাবে দেখে যেন তা সুস্বাদু খাবার, কিন্তু বিষাক্ত।
যখনি সে তার প্রতি লোভ অনুভব করে, তার মধ্যে যে বিষ আছে এই সত্যতা অনুভব করে সে তা
থেকে দূরে থাকে। আবার সে আল্লাহ সুবহানাওয়াতাআলার আদেশগুলোকে তিক্ত ওষুধ হিসেবে দেখে
যা থেকে সুস্বাস্থ্য আর আরোগ্য লাভ হয়। যখনি এর তিক্ততা তাকে দূরে ঠেলে দেয়, এর উপকারিতার
সত্যতা তাকে তা গ্রহণ করতে উদ্বুদ্ধ করে। কিন্তু এর জন্য ইসলামের মৌলিক জ্ঞানের চেয়ে বেশি জ্ঞান অর্জন করা প্রয়োজন
যাতে অপরিহার্য লক্ষ্যগুলো কি তা বুঝতে পারা যায়। এর সাথে খাপ খাওয়ানোর জন্য আরও প্রয়োজন
প্রবল সহনশীলতা, যাতে লক্ষ্যে পৌঁছানোর পথে যে কঠিন সময়গুলো আসবে সে সময় ধৈর্য্য ধরা
সম্ভব হয়। তাই সে যদি নিশ্চয়তা আর ধৈর্য্য হারায়, তাহলে লক্ষ্য অর্জন খুবই কঠিন হয়ে
যায় , অপরপক্ষে সে যদি অবিচল থাকে আর তার ধৈর্য্য দৃঢ় থাকে, তাহলে স্থায়ী সুখ আর অনন্ত
শান্তির খাতিরে সব মুশকিলই তার কাছে সহজ হয়ে যায়।
এই
আয়াতের আরও কিছু অর্থ রয়েছে। আয়াতটি বান্দার কাছে দাবি করে যে, সে যেন তার সকল বিষয়ে
আল্লাহ্র উপর নির্ভর করে যিনি সকল বিষয়ের ফলাফল জানেন এবং আল্লাহ্ তার জন্য যা নির্ধারণ
করেছেন তারই উপর সন্তুষ্ট থাকে। আয়াতটির অর্থের মধ্যে আরও রয়েছে যে, বান্দার নিজে থেকে
কোন কিছু প্রস্তাব করা বা তার রবের হয়ে কোন কিছু নির্ধারণ করা উচিত না এবং তার এমন কোন কিছু চাওয়া
উচিত না যে সম্পর্কে তার কোন জ্ঞান নেই, কারণ হতে পারে এর মধ্যে তার ক্ষতি আর ধ্বংস
রয়েছে কিন্তু সে জানে না। তার উচিত তার রবের কাছে চাওয়া তিনি যেন তার জন্যে যা উত্তম
তার ফয়সালা করে দেন এবং বান্দাকে যেন সেই ফয়সালাতে সন্তুষ্ট করে দেন কারণ প্রকৃতপক্ষে
এটাই হবে সর্বোত্তম সমাপ্তি। শুধু তাই না, বান্দা যখন তার সব বিষয়কে তার রবের উপর ছেড়ে
দেয় এবং তাঁর ফয়সালাতে সন্তুষ্ট থাকে, তখন আল্লাহ্ তাকে সামর্থ্য, দৃঢ়তা আর ধৈর্য্য
দিয়ে সহায়তা করেন। আল্লাহ্, যিনি সর্বশক্তিমান তিনি তাঁর বান্দাকে তখন সমস্ত মন্দ থেকেও
দূরে রাখেন , বান্দা নিজে থেকে বাছাই করলে যেগুলোর সম্মুখীন তাকে হতে হতো । আল্লাহ
বান্দাকে তাঁর ফয়সালার ইতিবাচক ফলগুলো প্রদর্শন করেন, বান্দা নিজে থেকে পছন্দ করলে
যেগুলো থেকে সে বঞ্চিত হত।
এই
ধরনের মন-মানসিকতা বান্দাকে নিজে থেকে পছন্দ করার ভার থেকে মুক্তি দেয়, কারণ আল্লাহ্
তার হৃদয়কে নানা ধরনের হিসাবনিকাশ আর পরিকল্পনা থেকে অব্যাহতি দেন, যেগুলো বাধাবিপত্তির
সাথে সাথে পরিবর্তন হয় । তবে এত কিছু সত্ত্বেও বান্দা সবসময় তাই দ্বারা পরিবেষ্টিত
থাকবে যা তার তাকদীরে ছিল। যদি সে আল্লাহ্ সুবহানাওয়াতাআলার ফয়সালায় সন্তুষ্ট থাকে,
তাকদীর তাকে তাই প্রদান করবে যা প্রশংসার যোগ্য, কৃতজ্ঞতার যোগ্য আর আল্লাহ্র রাহমাত
পাওয়ার যোগ্য। তা নাহলে তাকদীর তার উপর তাই পতন করবে যা নিন্দনীয় আর আল্লাহ্র রাহমাত
পাওয়ার অযোগ্য, কারণ এটা ছিল তার নিজের পছন্দ । যদি সে সত্যিকার অর্থেই তার সব বিষয়
আল্লাহ্র উপর ছেড়ে দেয় আর তাতেই সন্তুষ্ট থাকে, তাহলে সে তাকদীরে অনুগ্রহ আর যত্ন
দিয়ে ঘেরা থাকে, আর আল্লাহ্র যত্ন আর দয়াশীলতার অধীনে থাকে। আল্লাহ্র দয়া সে যা কিছু
ভয় করে তা থেকে তাকে রক্ষা করে আর তাঁর যত্ন তাকে তাকদীরে যা আছে তা গ্রহণ করা সহজ
করে দেয়।
বান্দার
তাকদীরে যা আছে তা বাস্তবায়িত হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ তা এড়ানোর চেষ্টা করা। এজন্য, আত্মসমর্পণ
করার চেয়ে তার জন্য উপকারি আর কোন কিছুই নেই ।
মূলঃ ইবন আল-কায়্যিম (রাহিমাহুল্লাহ)
অনুবাদঃ আল মালহামা অনুবাদক টিম কতৃক অনূদিত