পৃষ্ঠাসমূহ

সততার অধিকারীদের জন্যে ত্যাগ তিতিক্ষা সহজ। [পর্ব ৩]




হে লেবাননের সুন্নীগণ...(৪র্থ বিভাগ)

শাম এর ভাইদের অনুসরণ করুনঃ

শামের ভাইদের পথ অনুসরণ করার সময়টি আপনাদের নিকটে চলে এসেছে, এবং আপনাদের শত্রু হিযবুশ শাইত্বান(হেযবুল্লাহ) এর বিপক্ষে শক্ত অবস্থান নেয়ার সময় হয়ে গেছে, যারা রাত-দিন আপনাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে ব্যস্ত। যারা হত্যা করেছে নিষ্পাপ শিশুদের, হত্যা করেছে শামের সুন্নী মা-বোনদের এবং বৃদ্ধদের। লেবানন ও যদি একই পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়, তখন এরাও সুন্নীদের উপর অত্যাচার করার এই সুযোগটি হাতছাড়া করবে না।


বিগত দিনের ইতিহাসঃ

সাম্প্রতিককালের একের পর এক ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর ভিতর দিয়ে ধীরে ধীরে তাদের হিংস্ররূপ প্রকাশ পেতে শুরু করেছে। এই লোকগুলো সুন্নীদের অত্যন্ত ঘৃণা করে, এবং এক নম্বর শত্রু মনে করে। তারা তাদের থেকে প্রতিশোধ নিতে চায়, যারা চৌদ্দ শবছর আগে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাতি হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুকে হত্যা করেছিল, এবং এটাকেই তারা তাদের ধর্মের ভিত্তি বানিয়েছে।
এই দাবির মাধ্যমেই তারা সুন্নী হত্যা করাকে নিজেদের জন্য বৈধ করে নিয়েছে, এবং এই উপায়েই ইরান তার ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করেছে, যে ক্ষমতাকে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু তাদের থেকে ছিনিয়ে নিয়েছিলেন।

আজকের ইতিহাসঃ

এবং আজকের লেবাননের হিযবুল্লাহ এমন এক আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে জড়াতে যাচ্ছে যার ব্যাপারে জ্ঞানীব্যক্তিবর্গ তাদেরকে বহুকাল ধরে সতর্ক করে আসছিলেন, এবং বেচারা হাসান নাসরাল্লাহ কিছুই শিখলো না-
নুসাইরি রাজত্বের সাথে যা হয়েছে তার থেকে,
না শিখলো মুজাহিদদের হাতে নিহত হওয়া তারই গোত্রের শত শত লোকের পরিণতি থেকে,
না শিখলো দক্ষিণাঞ্চলের বিস্ফোরণগুলোর থেকে, যেগুলো তাদেরই ঘরবাড়ির উপর আঘাত করেছিল,
তারা ইরাকের রাফিদাহদের(শিয়া) ঘটনাগুলো থেকে কিছুই শিখলো না,
সুন্নীদের ক্ষতি করতে চাওয়া সে প্রতারিত আত্মাগুলোর সাথে যা হয়েছে তার থেকেও তারা কিছু শিখলো না,
এবং শাম এর সুন্নীদের বিরুদ্ধে কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে গিয়ে যে আঘাতগুলো সে পাচ্ছে, তা নিয়ে সে এখনও গর্ববোধ করে চলেছে। আরসালের ঘটনা এবং তার আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলি থেকে এটা সকলের নিকট পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, লেবাননের সেনাবাহিনী মূলতঃ হিযব এর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, হিযব এর আদেশ মেনে চলা এবং লেবাননি শিয়াদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করাই এর কাজ।
সেনাবাহিনী হতে নিজ সন্তানদের সরিয়ে নিনঃ
হে সুন্নীগণ, আপনাদের সন্তানদের এই সেনাবাহিনী থেকে সরিয়ে নিন, এরা তো আপনাদের শত্রুদের তল্পিবাহক সম্প্রদায়, এবং তাদেরকে মুজাহিদদের দলে শামিল করুন, কেননা মুজাহিদগণই আক্বীদাহ ও দ্বীনের রক্ষক এবং এটাই মুসলিমদের উপর ঘটিত অত্যাচারগুলো নিঃশেষ করার উপায়।

হে জাবহাতুন নুসরাহর ভাইয়েরাঃ(সেকশন ৫)

আপনারা এমন এক কার্য সাধন করেছেন যার মাধ্যমে আপনারা আল্লাহ আয যাওয়াজাল কে সন্তুষ্ট করেছেন, আপনাদের জন্য থাকছে এক অনিন্দ্য সুন্দর স্মৃতি, এবং জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে।
হে মুজাহিদ্গণ, আল্লাহকে সাহায্য করুন, আল্লাহ আপনাদের সাহায্য করবেন। আল্লাহর রাস্তায় লড়াই করুন, এবং নিজেদেরকে এই পথে উৎসর্গ করুন।
হে যারা ঈমান এনেছ, তোমরা দৃঢ়নিষ্ঠ থাকো, সহ্য কর, এবং নিজেদের অনড় রাখো; এবং আল্লাহকে ভয় কর যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো।
এবং জেনে রাখুন, এরপর এরূপ আর অন্য কোন শত্রু পাবেন না, তাদের আর আমাদের মাঝে বাকি রয়েছে আরো একটি পর্ব, সেখানে আল্লাহ চাহেন তো আমরাই হব বিজয়ী। আর যুদ্ধক্ষেত্রে থেকে পলায়ন করবেন না, সাবধান! এমন যেন না হয় যে আল্লাহ আপনাদের পরাজিত হতে দেখেন।
ক্রুসেডারদের জোট আপনাদের সাথে যুদ্ধ করতে চায়, এবং আপনাদেরকে নিজ দ্বীন থেকে ফিরিয়ে দিতে চায়। নুসায়রিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে আপনাদের ও শামের অধিবাসীদের যে অর্জন ও ত্যাগ-উৎসর্গ সেগুলোকে তারা ধুলোর মত উড়িয়ে দিতে চায়।
আমরা এমন লোকদের হারানোর দুঃখ ভোগ করেছি যারা ছিল আমাদের তরুণদের মধ্যে এবং বয়ঃপ্রাপ্তদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। আপনাদের কোন অপরাধ ছিল না এটা ছাড়া যে আপনারা সুন্নিদের রক্ষা করতে চেয়েছেন এবং লোকেরা আপনাদের দলে যোগ দান করছিল।
এখন আপনাদের কাছে সুযোগ এসেছে ক্রসের পূজারীদের ও তাদের চাকরদের বিরুদ্ধে নতুন এক যুদ্ধ শুরু করার, আরবের জঞ্জালগুলোর মধ্যে, এবং ওয়াল্লাহি এটা আপনাদের জন্যই, আপনাদের বিরুদ্ধে নয়,

আজকের দিন হলঃ


সেই দিন, যেদিন সত্যের পথিকেরা বিজয়ী হয়েছে,



আমি ভয় পাব না, মৃত্যু যখন কড়া নাড়বে,



আমার বর্শাকে রাঙাবো তাদের রক্তে, যাদের চোখ আছে,



তাদের ঢাল তলোয়ার আমি গুড়িয়ে দেব



আগামীকে আমি দেখছি সম্ভবতঃ সত্যের ঘাটি রূপে



অনন্তকালের জান্নাতে এবং আমি মিলিত হচ্ছি আমার পূর্ববর্তিদের সাথে।

(কবিতা)


হে ইসলামের অনুসারীগণ! আপনারা তাদের বিমানগুলোকে ভয় পাবেন না, কেননা তারাই আপনাদের সম্মুখে আসতে ভয় পায়, আর আল্লাহ তাদেরও উপরে আছেন, সুউচ্চ এবং সুমহান তিনি।
হে ঈমানদার ও কুরআনের বাহকগণ! তোমাদের মধ্যে যারাই তাদের হাতে মারা যাবে তাদের অবস্থান হবে জান্নাত, আর তাদের মধ্যে যারা তোমাদের হাতে মারা যাবে তাদের অবস্থান হবে জাহান্নাম। সীমালংঘনকারীর জন্যে সবক্ষত্রেই ক্ষমা রয়েছে। এই আনন্দই আমাদের প্রথম বিজয়, ইন শা আল্লাহ। অবিশ্বাসীরাও পরিকল্পনা করেছে, আল্লাহও পরিকল্পনা করেন। এবং নিশ্চয়ই আল্লাহই সর্বশ্রেষ্ঠ পরিকল্পনাকারী।
হে জাবহাত আন নুসরাহর সৈনিকগণ! লোকদের প্রতি দয়াপরবশ হোন, তাদেরকে তাদের ক্ষমতার অতিরিক্ত বোঝা চাপিয়ে দিবেন না, তাদের সেবাইয় নিজেদের নিয়োজিত করুন, তাদের জন্য দয়ার ডানা বিছিয়ে দিন। যমীনবাসীর উপর দয়া করুন, যিনি আকাশের উপরে আছেন তিনি আপনাদের উপর দয়াপরবশ হবেন। ছোটদের স্নেহ করুন, বড়দের সম্মান করুন এবং তাদের সম্মানিত ব্যক্তিদের সম্মান প্রদর্শন করুন, তাদের মতামতকে গুরুত্ব দিন, এবং তাদের অবস্থান অনুসারে তাদের সাথে উত্তম আচরণ করুন।
মূর্খদের মূর্খতার ব্যাপারেও চিন্তা করুন কারণ দীর্ঘ সময় ধরে তারা সত্য থেকে বঞ্চিত ছিল। যারা আপনাদের পাশে দাড়িয়েছে তাদেরকে বর্জন করবেন না, এবং তাদের ও তাদের রক্তকে রক্ষা করে যেতে থাকুন।
আল্লাহ মুহাজিরদের ও তাদের পরিবারদের সাথে থাকুন, প্রতিটি আনসারির উচিত একজন করে মুহাজিরকে নিয়ে নিজের ঘরে থাকতে দেয়া এবং তার জান মালের রক্ষা করা, নিজের জানের বিনিময়ে হলেও।
জ্ঞানীদের ও আলিমদের সম্মান করুন, বুযুর্গ লোকদের কথার শুনুন।
নেতৃবৃন্দের উত্তম কথা শুনুন এবং মেনে চলুন। অবিচার ও জুলুম করার ব্যাপারে সাবধান! কেননা কিয়ামতের দিনে জুলুম হবে অন্ধকার।
আপনাদের উপর যে বিশ্বাস রয়েছে তা রক্ষা করে চলুন। যারা আপনাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে তাদের সাথে আপনারা বিশ্বাসঘাতকতা করবেন না। হকদারের কাছে তার হক পৌছে দিন, এবং ন্যায়বিচার করুন।
লোকজনের প্রতি ঘৃণা যেন আপনাদের ন্যায়বিচার থেকে বিচ্যুত করে না ফেলে। সত্যের সাথে সবসময় থাকুন, নিন্দাকারীদের নিন্দার পরওয়া করবেন না।
নিজের প্রতিটি গুনাহ এর জন্য আল্লাহর কাছে অনুতপ্ত হোন।
মিথ্যাকে মিথ্যা দ্বারা মোকাবেলা করবেন না, মিথ্যাকে সত্য দ্বারাই মোকাবেলা করা হয়।
সেসব মুজাহিদ উপদলদের সাহায্য করুন যারা সত্যের ও ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত, যারা তাওহীদ ও ইসলামের বন্ধনকে আপনাদের মধ্যেকার বন্ধন হিসেবে বিশ্বাস করে, এর কারণেই আপনারা শত্রুতা ও মিত্রতা স্থাপন করবেন এবং ইসলামের নীতির আলোকেই আপনারা একতাবদ্ধ হবেন।
যারা ক্রুসেডারদের সাথে মিত্রতা স্থাপন করেছে এবং কাজ করছে তাদের ব্যাপারে সাবধান!
কোন মিত্রকে অথবা নিরপেক্ষ দলকে আক্রমণ করবেন না।
শত্রুদের প্রতি কঠোর হোন।
গুপ্তচর ও তথ্য প্রদানকারীদের প্রতি কোন দয়া দেখাবেন না, এবং ক্রস পূজারীদের সাহায্যকারীদের প্রতিও কোন দয়া নেই।
আল্লাহকে মেনে চলুন এবং নিজেদের মধ্যেকার অনৈক্য দূর করুন, কেননা আপনাদের অনৈক্যেই হার ডেকে আনতে পারে।
গীবতকারী এবং অপবাদ দানকারীদের থেকে সাবধান, কারণ অপবাদ দানকারী এক ঘণ্টায় ভ্রষ্টতা তৈরি করে, যাদুকর এক বছরেও তা করতে পারে না।
বাড়াবাড়ি থেকে সাবধান, কারণ যে ব্যক্তি দ্বীনকে নিজের উপর কঠিন করে নেয় দ্বীন তাকে পরাজিত করে দেয়। নিজেকে খাওয়ারিজদের চিন্তা ভাবনা ও ইরজা থেকে এত দূরে রাখুন যেন তা পূর্ব থেকে পশ্চিমের দূরত্বের সমান হয়।
যদি আপনাদের লোকদের মাঝে বিচার করতে হয় তবে ন্যায়ের সাথে বিচার করুন। সময়, ঘটনা এবং শর্তগুলো বিবেচনা করে ফিকহ অনুসরণ করুন। সন্দেহজনক ক্ষেত্রে দণ্ড(হুদুদ) প্রদান করবেন না।
যে বিষয়ে আপনার কোন ধারণা নেই সে বিষয়ে কথা বলবেন না। জটিলতম বিষয়ের ক্ষেত্রে ফাতওয়া প্রদান থেকে এবং সন্দেহজনক বিষয়কে আলিমদের সাথে সম্পৃক্ত করা নিজেকে বিরত রাখবেন।
আর মনে রাখবেন, বিজয় আসে ধৈর্য্যের পর, এবং কষ্টের পর স্বস্তি আসে। আল্লাহ তার কিতাবে আপনার সাথে ওয়াদা করেছেন,”যদি তোমরা আল্লাহকে সাহায্য কর, তিনি তোমাদের সাহায্য করবেন এবং তোমাদের পদসমূহ দৃঢ় করবেন।
এবং ওয়াল্লাহি, আমি বিশ্বাস করি, আপনাদের কাছে যা এসেছে তা উত্তম এবং শুধুমাত্র আপনাদের উপরেই এই রাহমাহ অবতীর্ণ হয়েছে।

হে আল্লাহ আমাদের মধ্যে থেকে যারা নিহত হয়েছে তাদের উপর রহম করুন, তাদেরকে শহীদদের মর্যাদায় উন্নীত করুন, এবং তাদেরকে তাদের সাথে পুনরুত্থিত করুন যারা আপনার নিয়ামাহ প্রাপ্ত আম্বিয়ায়ে কিরাম, সিদ্দিকীন, শুহাদা, স্ব-লিহীন এবং তারাই সাথী হিসেবে সর্বোত্তম। হে আল্লাহ, যারা তাদের পরবর্তী ও তাদেরকে তাদের কর্ম থেকেও উত্তম হবার তাওফীক দিন, তাদের অন্তরসমূহকে মজবুত করুন, কুফরের মোকাবেলায় তাদের দৃঢ়পদ রাখুন, নিশ্চয়ই আপনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান। আমীন

ওয়াল হামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন।
রবিবার, ১২/০৪/১৪৩৫ হিজরি | ২৮/৯/২০১৪ ঈসায়ি

(সমাপ্ত)

 লেখকঃ শায়েখ আল ফাতিহ আবু মুহাম্মাদ আল জাওলানী (হাঃ)
অনুবাদঃ শায়খ আযযাম অনুবাদ টীম